পিত্তরস কি, এর কাজ এবং উপাদান বর্ণনা কর

পিত্তরস কি এবং পিত্তরসের উপাদান সমূহ যকৃত কোষ নিঃসৃত রসকে পিত্তরস বলে। ক্ষুদ্র নালিকার মাধ্যমে এ রস পিত্তথলিতে এসে সঞ্চিত হয়। ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনায় যকৃত কোষ হতে পিত্ত নিঃসরণ প্রভাবিত হয়। পরিপাক নালীর ডিওডেনামে প্রোটিন ও স্নেহ খাদ্যের উপস্থিতি নিঃসরণ হার বৃদ্ধি করে। পিত্তথলিতে সঞ্চিত পিত্তরস পিত্তনালী বেয়ে ডিওডেনামে এসে স্নেহ ও প্রোটিন খাদ্যের পরিপাকে সহায়তা করে। পিত্তরস সামান্য…

যকৃত কি, এর গঠন এবং কাজ কি কি

যকৃত কি এবং এর গঠন মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পৌষ্টিকনালীর সাথে সংযুক্ত দেহের সর্বাপেক্ষা বড় গ্রন্থির নাম হচ্ছে যকৃত (Liver)। খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ ছাড়াও এ গ্রন্থি অন্যান্য নানাবিধ কার্যসাধন করে। আরকেন্টেরণের যে অঞ্চল থেকে যকৃত উৎপন্ন হয় সেটি ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে পরিণত হয়। প্রচুর সংখ্যক শাখান্বিত কোষস্তম্ভ নিয়ে যকৃত গঠিত। এই কোষস্তম্ভগুলিকে ট্রাবেকুলি বলে। যকৃত এর গঠনের ছবি ট্রাবেকুলিসমূহ একে অপর থেকে সাইনুসয়েড নামক রক্তপূর্ণ…

লালা গ্রন্থি কি, লালার উপাদান এবং এর কাজ কি কি

লালা গ্রন্থি কি মুখ গহ্বরে উন্মুক্ত পরিপাক গ্রন্থিকে লালাগ্রন্থি বলে। মানবদেহে মুখগহ্বরের অন্তঃগাত্রে ৩ জোড়া লালাগ্রন্থি থাকে। যথা- প্যারোটিড গ্রন্থি (Parotid glands) এটি সবচেয়ে বড় লালাগ্রন্থি। প্রত্যেক কানের নিচে একটি করে প্যারোটিড গ্রন্থি অবস্থিত এবং এদের নিঃসৃত রস একটি নালির মাধ্যমে দ্বিতীয় ঊর্ধ্ব মোলার দাঁতের বিপরীত দিকে মুখের ভেস্টিবিউল (ঠোঁট, গলা এবং দাঁত এর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে ভেস্টিবিউল বলে) অঞ্চলে উন্মুক্ত হয়। সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি (Sub mandibular glands) ম্যান্ডিবলের পশ্চাতে এবং ভিতরের দিকে ম্যান্ডিবুলার ফোসার উভয় পাশে অবস্থিত। এদের রস নালি দ্বারা মুখ বিবরে আসে। সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি (Sub lingual glands) জিহ্বার নিচে, মুখবিবরের তলে মিউকাস পর্দার নিচে এ গ্রন্থি অবস্থিত। এদের রস অনেকগুলো ছোট ছোট নালির মাধ্যমে সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থির নালির সাথে বাম পাশে মুখবিবরের উন্মুক্ত। লালার উপাদান লালা গ্রন্থি নিঃসৃত রসকে লালা বলে। এটি বর্ণহীন, চটচটে তরল পদার্থ, মানুষের লালা গ্রন্থিগুলো প্রতিদিন প্রায় ১.৫ লিটার লালা ক্ষরণ করে। লালা মৃদু অম্লীয়, এর pH মান ৬.০২-৭.০৫। স্থির অবস্থায় অথবা উত্তপ্ত অবস্থায় লালা থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বিমুক্ত হলে লালা ক্ষারীয় হয়ে পড়ে। লালা উপাদানের মধ্যে আছে ৯৯% পানি এবং ১% কতিপয় জৈব ও অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত থাকে। কোষীয় উপাদানের মধ্যে থাকে ঈস্ট, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, লিউকোসাইট, আবরণীকোষ ইত্যাদি । অজৈব লবণের মধ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, অম্লীয় ও ক্ষারীয় সোডিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, পটাসিয়াম থায়োসায়ানেট থাকে। জৈব পদার্থের মধ্যে টায়ালিন, লাইপেজ, কার্বোনিক অ্যানহাইড্রেজ, ফসফেটেজ, লাইসোজাইম ইত্যাদি এনজাইম, মিউসিন, ইউরিয়া, অ্যামাইনো এসিড, কোলেস্টেরল, এগুটিনোজেন ইত্যাদি। এছাড়াও লালায় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসীয় উপাদান থাকে। লালা গ্রন্থি বা লালার কাজ কি কি ১. লালার পানি ও মিউসিন খাদ্যকে সিক্ত, নরম ও পিচ্ছিল করে। ফলে খাদ্য চর্বণে এবং গলাধঃকরণে সুবিধা হয়। ২. স্যালাইভারী অ্যামাইলেজ এনজাইম স্টার্চকে ভেঙে ম্যালটোজ নামক দ্রবণীয় শর্করায় পরিণত করে। ৩. লাইসোজাইম এনজাইম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের মাধ্যমে দাঁতকে রক্ষা করে। ৪. মুখ, জিহ্বা এবং ঠোঁট লালা দ্বারা সিক্ত থাকার কারণে কথা বলা সহজ হয়। ভয়, উত্তেজনা ইত্যাদি সময়ে কিংবা অসুস্থতার সময় লালা ক্ষরণ কমে যায় ফলে কথা বলা অসুবিধা হয়। ৫. জিহ্বার স্বাদ কোরকগুলো শুকনো খাদ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না। লালা দ্বারা সিক্ত হয়ে খাদ্যকণা মুক্ত হলে তা থেকে স্বাদ কোরকগুলো অনুভূতি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যের স্বাদ বুঝা সম্ভব হয়। ৬. লালার বাইকার্বনেট বাফার (Buffer) হিসেবে কাজ করে। ফলে মুখে সৃষ্ট এসিডগুলোর শক্তি কমিয়ে রাখার মাধ্যমে দাঁতের এনামেল ক্ষয় রোধ করে।

পরিপাক তন্ত্র কি, কাকে বলে এবং চিত্রসহ বর্ণনা

পরিপাক তন্ত্র কি, কাকে বলে প্রাণীদেহে যে সকল অঙ্গের সমন্বয়ে খাদ্যবস্তু গ্রহণ, পরিপাক, পাচিত খাদ্যসার পরিশোষণ এবং খাদ্যের অপাচ্য অংশ দেহের বাইরে পরিত্যক্ত হয়, সেসব অঙ্গ সমষ্টিকে একত্রে পরিপাকতন্ত্র বলে। যেমন- পৌষ্টিক নালীর বিভিন্ন অংশ ও পরিপাক গ্রন্থি নিয়ে মানুষের পরিপাক তন্ত্র গঠিত। পৌষ্টিক নালী (Alimentary canal) মানুষের মুখছিদ্র থেকে শুরু করে পায়ুছিদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত নালীকে পৌষ্টিক নালী বলে।…

শারীরবিদ্যা কি, কাকে বলে এবং এর গুরুত্ব

শারীরবিদ্যা কি এবং কাকে বলে দুটি গ্রীক শব্দ Physis = প্রকৃতি এবং logos = জ্ঞান, এর সমন্বয়ে ‘Physiology’ শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। ১৫৫২ সালে ফরাসি চিকিৎসাবিদ Jean Fernal ল্যাটিন শব্দ “Physiologia”. অবতারণা করেন। “Physiologia” থেকে ইংরেজি Physiology শব্দের সৃষ্টি। ইংরেজ চিকিৎসক William Harvey-এর মানব দেহে রক্ত সঞ্চালন সম্পর্কে পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশের পর থেকে Physiology বা শারীরবিদ্যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। শারীরবিদ্যা জীবদেহের…

মলাস্কা পর্বের বৈশিষ্ট্য | মলাস্কা পর্ব কি

মলাস্কা পর্ব কি প্রকৃত সিলোমযুক্ত অমেরুদণ্ডী প্রাণী পর্বসমূহের মধ্যে মলাস্কা (Mollusca) অন্যতম। অমেরুদণ্ডী প্রাণী পর্বসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্ব হিসেবে মলাস্কা (Mollusca) কে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি বাস্তুতান্ত্রিক আবাসে এই পর্বের প্রাণীরা বসবাস করে। পর্বটির নাম করণ ল্যাটিন শব্দ Mollis থেকে করা হয়েছে, যার বাংলা অভিধানিক অর্থ নরম। মলাস্কা পর্বের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য ১. মূল দেহ নরম, মাংসল, অখণ্ডায়িত…

আর্থ্রোপোডা পর্বের বৈশিষ্ট্য | আর্থ্রোপোডা কী

আর্থ্রোপোডা কী আর্থ্রোপোডা (Arthropoda) প্রাণীজগতের সর্ববৃহৎ পর্ব। এ পর্বের বর্তমান প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৯ লক্ষ। অর্থাৎ পৃথিবীর মোট প্রাণী প্রজাতির তিন-চতুর্থাংশ আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্ভুক্ত। ২টি গ্রীক শব্দ arthros = Jointed এবং Poos = foot থেকে পর্বটির নামকরণ করা হয়েছে, যার বাংলা অভিধানিক অর্থ সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিশিষ্ট প্রাণী। এই পর্বের প্রাণীরা ভূপৃষ্ঠের ৬১০০ মিটার উঁচু পর্বতের শিখর থেকে ৯৮০০ মিটার সমুদ্রের গভীরে বসবাস করে। এ জন্য প্রাণী বৈচিত্র্যে এরা এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। আর্থ্রোপোডা পর্বের সাধারণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহ ১. ত্রিস্তর বিশিষ্ট দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম দেহ বাহ্যিকভাবে খণ্ডায়িত। ২. সমগ্র দেহ কাইটিন নির্মিত শক্ত বহিঃকঙ্কাল দ্বারা আবৃত। ৩. কিছু সংখ্যক বা প্রতিটি দেহখণ্ডকে ১ জোড়া সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান। ৪. দেহ গহ্বর সংক্ষিপ্ত এবং হিমোসিল প্রকৃতির। ৫. মস্তকে সরল ও যৌগিক চক্ষু এবং অ্যান্টেনাসহ বিভিন্ন সংবেদী অঙ্গ বিদ্যমান। ৬. পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণ ও সুগঠিত। ৭. দেহত্বক, ফুলকা, ট্রাকিয়া অথবা Book Lung-এর সাহায্যে শ্বসন সম্পন্ন হয়। ৮. রক্ত সংবহনতন্ত্র মুক্ত প্রকৃতির। ৯. ম্যালপিজিয়ান নালী, সবুজ গ্রন্থি, এবং কক্সাল গ্রন্থি রেচন অঙ্গ হিসাবে কাজ করে। ১০. গ্যাংগ্লিয়ন বা স্নায়ুগ্রন্থি, স্নায়ুরজ্জু এবং স্নায়ুসূত্রকের সমন্বয়ে স্নায়ুতন্ত্র গঠিত হয়। ১১. অধিকাংশ একলিঙ্গ প্রাণী এবং যৌন দ্বিরূপতা দৃশ্যমান হয়। ১২. যৌন প্রজননের পাশাপাশি অপুংজনিও দৃশ্যমান হয়। ১৩. নিষেক অভ্যন্তরীণ। বর্ধন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ। ১৪. মুক্তজীবী, পরজীবী, নিশ্চল বা মিথোজীবী হিসেবে বাস করে।

অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য

অ্যানিলিডা পর্বের প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বিবর্তনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে অ্যানিলিডা (Annelida) বা অঙ্গরীমাল পর্বের প্রাণীরাই প্রথম ত্রি স্তর বিশিষ্ট দেহত্বক সমন্বিত প্রাণী। পর্বটির নামকরণ annulus Ring বা বলয় এবং eidos = form বা আকার নামক ল্যাটিন এবং গ্রীক শব্দ থেকে  করা হয়েছে। এই পর্বের প্রাণীরা স্বাদুপানির জলাশয়, সমুদ্র এবং স্থলে বাস করে। এদের মধ্যে মুক্তজীবী এবং পরজীবী স্বভাব…

একাইনোডার্মাটা পর্ব কি | একাইনোডার্মাটা পর্বের বৈশিষ্ট্য

একাইনোডার্মাটা পর্ব কি পর্ব- একাইনোডার্মাটা (Echinodermata) [Gr. echinus = spiny (কণ্টকাবৃত) + derma = skin (ত্বক)] একাইনোডার্মাটা (Echinodermata) শব্দটি দুটি গ্রীক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। গ্রীক শব্দ echinus অর্থ spiny বা কণ্টক আবৃত এবং derma skin বা ত্বক। পর্বের নামকরণ থেকে বোঝা যায় যে, এই পর্বভুক্ত সমস্ত প্রাণীদের দেহত্বক কণ্টক আবৃত থাকে। চূর্ণকময় কণ্টক থাকায় এদের ত্বক কর্কশ ও কঠিন…

প্লাটিহেলমিনথিস পর্বের বৈশিষ্ট্য | প্লাটিহেলমিনথিস পর্ব কি

পর্ব – (প্লাটিহেলমিনথিস) Platyhelminthes [Gr. Platys = flat (চ্যাপ্টা) + helminthes = worms (কৃমি)] প্লাটিহেলমিনথিস পর্বের প্রাণীরা সাধারণভাবে “Flat worms” বা চ্যাপ্টা কৃমি নামে পরিচিত। দুটি গ্রীক শব্দ Platys = flat বা চ্যাপ্টা এবং helminthes = worms বা কৃমি থেকে পর্বটির নামকরণ করা হয়। এই পর্বের অধিকাংশ কৃমি অন্তঃপরজীবী এবং এরা আকারে আণুবীক্ষণিক থেকে শুরু করে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।…