শব্দ কাকে বলে? ধ্বনি ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য কি? শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
ভাষার অন্যতম মৌলিক উপদান শব্দ। বিশেষ বা স্বতন্ত্র পদার্থ বা ভাবকে প্রকাশ করে, মানব-মুখনিঃসৃত এমন একটি ধ্বনিকে বা একাধিক ধ্বনির সমষ্টিকে শব্দ বলে। এক বা একাধিক ধ্বনি অবলম্বনেও শব্দের সৃষ্টি হয়। যেমন— এ, এই, শোন, মা, কে, তুই, চাঁদ, হাত, ভালো ইত্যাদি।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে।”
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “অর্থবোধক ধ্বনিকে শব্দ (word) বলে।
কোন বিশেষ সমাজের নরনারীর কাছে যে ধ্বনির স্পষ্ট অর্থ আছে, সেই অর্থবোধক ধ্বনিই হচ্ছে সেই সমাজের নরনারীর ভাষার শব্দ।’’
অশোক মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এক বা একাধিক ধ্বনির সমন্বয়ে তৈরি অর্থবোধক ও উচ্চারণযোগ্য একককে শব্দ বলা হয়।”
ধ্বনি ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য কি?
ধ্বনি ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
ধ্বনি
- মানুষের মুখ থেকে নিঃসৃত শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম ধ্বনি।
- ধ্বনির লিখিত রূপের নাম বর্ণ।
- ধ্বনি তৈরি হতে বাগযন্ত্রের সাহায্য লাগে।
- একধিক ধ্বনি একত্রে মিলে তৈরি হয় শব্দ।
- ধ্বনি উচ্চারিত হলে তা কেবল শ্রুতিগোচর।
শব্দ
- এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ ধ্বনি মিলে তৈরি হয় শব্দ।
- বাগযন্ত্রের সাহায্য ছাড়াও শব্দ তৈরি হতে পারে৷
- একাধিক বর্ণের মিলনে গঠিত হয় শব্দ।
- শব্দকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় ধ্বনি।
- শব্দ উচ্চারিত হলে তা শ্রুতিগোচর ও শব্দের লিখিত রূপ দৃশ্যগোচর।
শব্দের শ্রেণীবিভাগ
বাংলা ভাষার শব্দ সম্ভারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—
ক. উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ,
খ. অর্থানুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ এবং
গ. গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
ক. উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ
উৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন– ১. তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ, ২. অর্ধ-তৎসম শব্দ, ৩. তদ্ভব শব্দ, ৪. দেশি শব্দ ও ৫. বিদেশি শব্দ।
১. তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ : তৎসম = তৎ + সম। এখানে ‘তৎ’ অর্থ সংস্কৃতের এবং ‘সম’ অর্থ সমান। অর্থাৎ ‘তৎসম’ অর্থ সংস্কৃতের সমান।
অর্থাৎ, যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি বাংলা ভাষায় এসে স্থান পেয়েছে তাদেরকে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দ বলে।
বাংলা ভাষায় মোট শব্দ প্রায় এক লক্ষ পঁচিশ হাজার। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শব্দই তৎসম শব্দ। যেমন— চন্দ্ৰ, সূর্য, রাত্রি, চক্ষু, কর্ণ, অদ্য, ধর্ম, বর্ণ, কুন্তল, পর্বত, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, দীক্ষিত, রবি, প্রস্তুত, নৃত্য, ক্ষতি, নক্ষত্র, বধূ, পণ, বন্ধু, সাগর, আকাশ, শিক্ষা, সভা, শ্বশুর, শ্রী, হস্ত, বস্ত্র, গৃহ, হস্তী, ব্যাঘ্র, অশ্ব, কর্ম, মনুষ্য, বৃক্ষ, ভোজন, শয়ন, ঢাল, আগন্তুক, ভৃত্য, ঘৃত, ভবন, পদ্ম, যুদ্ধ, অস্ত্র, ছাত্র, বস্তু ইত্যাদি।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ : যে সব সংস্কৃত শব্দ (বাঙালির মুখে) কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে, তাদেরকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। যেমন– চন্দ্র (তৎসম শব্দ) > চন্দর (অর্ধ-তৎসম শব্দ), সূর্য (তৎসম শব্দ) > সুরুজ (অর্ধ-তৎসম শব্দ), কিছু (তৎসম শব্দ) > কিচ্ছু (অর্ধ-তৎসম শব্দ), গৃহিণী (তৎসম শব্দ) > গিন্নী (অর্ধ-তৎসম শব্দ) ইত্যাদি।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১। অর্থবোধক বর্ণসমষ্টিকে কী বলে?
ক) প্রকৃতি খ) প্রত্যয়
গ) শব্দ ঘ) বাক্য
উত্তরঃ গ) শব্দ
২। গঠন প্রকৃতি অনুসারে শব্দকে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়?
ক) দুই খ) চার
গ) তিন ঘ) পাঁচ
উত্তরঃ ক) দুই
৩। অর্থভেদে শব্দকে কয়টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়?
ক) দুই শ্রেণীতে
খ) চার শ্রেণীতে
গ) তিন শ্রেণীতে
ঘ) পাঁচ শ্রেণীতে
উত্তরঃ গ) তিন শ্রেণীতে
৪। অন্য ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের যে সকল শব্দ বা শব্দগুচ্ছ আমাদের বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকে কী শব্দ বলে?
ক) তৎসম শব্দ
খ) তদ্ভব শব্দ
গ) বিদেশী শব্দ
ঘ) পারিভাষিক শব্দ
উত্তরঃ গ) বিদেশী শব্দ
৫। কোনটি তদ্ভব শব্দ?
ক) কাজ
খ) মহাশয়
গ) গিন্নী
ঘ) ঝাঁটা
উত্তরঃ ক) কাজ
৬। যে সকল সংস্কৃত শব্দ কিছুটা বিকৃত বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ভিন্নরূপ গ্রহণ করেছে তাদের কী শব্দ বলে?
ক) তৎসম
খ) তদ্ভব
গ) অর্ধ-তৎসম
ঘ) বিদেশি শব্দ
উত্তরঃ গ) অর্ধ-তৎসম
৭। কোনটি ইংরেজি শব্দ?
ক) বালতি
খ) দুধ
গ) বাজার
ঘ) হাসপাতাল
উত্তরঃ ঘ) হাসপাতাল
৮। ‘ঢেঁকি’ কোন ভাষার শব্দ?
ক) তৎসম শব্দ
খ) দেশি শব্দ
গ) তদ্ভব শব্দ
ঘ) বিদেশি শব্দ
উত্তরঃ খ) দেশি শব্দ