পারিভাষিক শব্দ কাকে বলে? পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব।

এক ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ একই অর্থে অন্য ভাষায় যে রূপ লাভ করে তাকে পারিভাষিক শব্দ বলে। যেমন— ‘Administration’ শব্দটি ইংরেজি ভাষার। একই অর্থ বুঝাতে একে বাংলায় বলা হয় ‘প্রশাসন’। এখানে ‘Administration’ ইংরেজি শব্দটি বাংলা পারিভাষিক শব্দ হলো ‘প্রশাসন’।

পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই দেখা যায়, প্রয়োজনীয় সব শব্দ সবসময় সব ভাষাতে পাওয়া যায় না। একারণে দেশি বা বিদেশি ভাষা থেকে প্রয়োজনীয় শব্দ সরাসরি বা অনুবাদের মাধ্যমে বা কিছু পরিবর্তিত রূপে গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে। তবে ইচ্ছেমতো যেকোনো শব্দ গ্রহণ করা যায় না। অনেক সময় আক্ষরিক অনুবাদ শ্রুতিমধুর কিংবা যথার্থ অর্থবহ না হওয়ায় মাতৃভাষার প্রয়োজন ও অর্থগত সামঞ্জস্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পারিভাষিক শব্দ গ্রহণ বা রূপান্তর করা হয়ে থাকে।

সাধারণত কথাবার্তা পারিভাষিক শব্দের প্রয়োগ তেমন না হলেও বিশেষ ধরনের কাজ বা পেশার সঙ্গে পারিভাষিক শব্দের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যেমন কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা তাদের কর্মপরিসরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন- মাউস, কিবোর্ড, মনিটর, হার্ডডিস্ক, প্রসেসর ইত্যাদি। আবার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও তাদের কাজকর্মে চালান, ইনভয়েস, বিল ইত্যাদি পারিভাষিক শব্দের ব্যবহার করে থাকেন। এভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এক দেশের সাথে অন্য দেশের যে-কোনো সম্পর্ক বজায় রাখতে বা গড়ে তুলতে পারিভাষিক শব্দের ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। যে সকল ইংরেজি শব্দের সরাসরি কোনো বাংলা শব্দ নেই তাদের ক্ষেত্রে বাংলা পারিভাষিক শব্দ নির্বাচন করা হয়েছে। বিদেশিদের সাথে মনের ভাব আদান-প্রদান করতে ও সার্বিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য পারিভাষিক শব্দ জানা থাকা একান্ত প্রয়োজন। যে সকল শব্দের বাংলা পরিভাষা জানা থাকে না সে সকল শব্দ নিয়ে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়।

সুতরাং পারিভাষিক শব্দের গুরুত্ব অপরিমেয়। নিচে পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজনের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলোঃ

  • জ্ঞান-বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর যথাযথ অনুবাদ করতে হলে অবশ্যই পরিভাষা ব্যবহার করতে হবে।
  • পরিভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাপর ভাষার শব্দভাণ্ডারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এ ছাড়া একটি ভাষার শব্দ দ্বারা অন্য একটি ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
  • পরিভাষার মাধ্যমে ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
  • পরিভাষা যেহেতু ভাষার শব্দসংখ্যা বৃদ্ধি করে সেহেতু এর মাধ্যমে ভাষার প্রকাশক্ষমতার উৎকর্ষ সাধিত হয়।
  • অনুবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যথাযথ শব্দের দুষ্প্রাপ্যতা। সুতরাং এই সমস্যা সমাধানে পরিভাষাই হচ্ছে একমাত্র সহায়ক উপাদান।
  • পরিভাষার ব্যবহার ভাষার গতিশীলতা বৃদ্ধি করে। ফলে ভাষার সৌন্দর্য অনেকগুণ বেড়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *