মালভূমি কাকে বলে? মালভূমি কত প্রকার?
পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে মালভূমি বলে। মালভূমির সৃষ্টি মূলত পর্বত গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। আগ্নেয়জাত লাভা কোন কোন ক্ষেত্রে বিস্তৃত ভূমিরূপের সৃষ্টি করেছে। যেমন– ভারতের দাক্ষিণাত্যের লাভা গঠিত মালভূমি। তাছাড়া প্রাচীন পার্বত্য এলাকাও ব্যাপক ক্ষয়কাজের কারণে উচ্চতা হ্রাস পেয়ে মালভূমিতে পরিণত হতে পারে।
মালভূমি সৃষ্টির কারণ
মালভূমি সৃষ্টির নানা কারণ রয়েছে; প্রধান কয়েকটি কারণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো—
ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন : পাত ভূগঠন মতবাদ অনুযায়ী সমগ্র ভূত্বক কয়েকটি পাতে বিভক্ত, যা ভূনিম্নস্থ তরল শিলার ওপর ভাসমান। পাতগুলোর গতিশীলতার কারণে তার ধাক্কায় পার্শবর্তী পাতগুলো উত্থিত হয়ে মালভূমি গঠন করে। যেমন তিব্বত মালভূমি। এ ছাড়া ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠের ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হওয়ার সময় তাদের মধ্যবর্তী নিম্নস্থান উঁচু হয়েও মালভূমি গঠিত হয়। যেমন ইরানের মালভূমি।
ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়প্রক্রিয়া : সাধারণত প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত এবং উচ্চভূমির কোমল শিলাগুলো বৃষ্টি, নদী, বায়ু প্রভৃতির দ্বারা ক্ষয় হওয়ায় মালভূমির সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন ফিজেন্ড মালভূমি।
লাভা সঞ্চয় : ভূ-অভ্যন্তরের লাভা ভূপৃষ্ঠের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথে ওপরে এসে ছিদ্রপথের চারদিকে জমা হয়ে মালভূমিতে পরিণত হয়। এরূপ মালভূমি ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া, আফ্রিকার ইথিওপিয়া মালভূমি লাভা সঞ্চয়ের ফলেই গঠিত হয়েছে।
মালভূমির প্রকারভেদ
অবস্থানের ভিত্তিতে মালভূমি তিন প্রকার। যথা- পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি, পাদদেশীয় মালভূমি ও মহাদেশীয় মালভূমি।
- পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি : ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় সংকোচন চাপের কারণে পর্বতের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি উঁচু হয়ে যে মালভূমি গঠিত হয়েছে, তাকে পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি বলে। যেমন তিব্বতের মালভূমি।
- পাদদেশীয় মালভূমি : উচ্চ পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এর পাদদেশে তলানি জমে যে মালভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে পাদদেশীয় মালভূমি বলে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো মালভূমি।
- মহাদেশীয় মালভূমি : সাগর বা নিম্নভূমি পরিবেষ্টিত বিস্তীর্ণ উচ্চভূমিকে মহাদেশীয় মালভূমি বলে। এ ধরনের মালভূমির সঙ্গে পর্বতের কোন সংযোগ থাকে না। যেমন স্পেনের মালভূমি।
মালভূমি অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মালভূমি কৃষিকাজের জন্য খুব একটা উপযোগী নয়। মহাদেশীয় মালভূমির বেশির ভাগেই বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, শুষ্ক জলবায়ু থাকায় জনবসতি খুব সীমিত। তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে এ ধরনের মালভূমি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে সব মালভূমিই একেবারে গুরুত্বহীন নয়। ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমির কৃষ্ণ মৃত্তিকা তুলা চাষের খুবই অনুকূল এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে মালভূমিতে খনিজ শিল্প; যেমন— টিন, তামা ইত্যাদি পাওয়া যায়। আবার কোন কোন মালভূমির খরস্রোতা নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে