আগ্নেয়গিরি কাকে বলে? (What is called Volcano in Bengali/Bangla?)
ভূপৃষ্ঠের কোনো দুর্বল অংশ বা ফাটল দিয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ উত্তপ্ত গলিত পদার্থ নির্গত হয়ে তা সঞ্চিত হলে যে পাহাড়ের সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয়গিরি (Volcano) বলে। আগ্নেয়গিরি থেকে ভূগর্ভস্থ পদার্থের নির্গমনকে বলা হয় অগ্ন্যুৎপাত। আগ্নেয়গিরির বহিঃস্থ যে মুখ বা নির্গমনপথ দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, তাকে জ্বালামুখ বলে। প্রতি বছর প্রায় ৬০টি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণ (Reasons of Volcanism)
(১) ভূত্বকে দুর্বল স্থান বা ফাটল দিয়ে ভূঅভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা, ভস্ম, ধাতু প্রবলবেগে বের হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়।
(২) যখন ভূপৃষ্ঠের চাপ কমে যায় তখন ভূগর্ভের শিলাসমূহ স্থিতিস্থাপক অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয়। এতে শিলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। ফলে তরল পদার্থ দুর্বল স্থান ভেদ করে প্রবলবেগে উৎক্ষিপ্ত হয়ে অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি করে।
(৩) কখনো কখনো ভূত্বকের ফাটল দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিল এবং সমুদ্রের পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করলে প্রচণ্ড উত্তাপে বাষ্পীভূত হয়। ফলে আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে ভূত্বক ফাটিয়ে দেয়। তখন ঐ ফাটলের ভিতর দিয়ে পানি, বাষ্প, তপ্ত শিলা প্রভৃতি নির্গত হয়ে অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়।
(৪) ভূগর্ভে নানা রাসায়নিক ক্রিয়া ও বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে প্রচুর তাপ বৃদ্ধি পেয়ে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তাতে ভূঅভ্যন্তরের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং অগ্ন্যুৎপাত ঘটায়।
(৫) ভূআন্দোলনের সময় পার্শ্বচাপে ভূত্বকের দুর্বল অংশ ভেদ করে এ উত্তপ্ত তরল লাভা উপরে উত্থিত হয়। এভাবে ভূআন্দোলনের ফলেও অগ্ন্যুৎপাত হয়।
আগ্নেয়গিরির প্রকারভেদ (Types of Volcano)
আগ্নেয়গিরিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–
১. জীবন্ত আগ্নেয়গিরি : যেসব আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এখনও বন্ধ হয়নি, সেগুলোকে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন -ছিছিলব মাউণ্ট এটনা। জীবন্ত আগ্নেয়গিরিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায় -সবিরাম ও অবিরাম আগ্নেয়গিরি৷ যেসকল জীবন্ত আগ্নেয়গিরিতে অবিরামভাবে লাভা নিৰ্গত হয়ে থাকে তাকে অবিরাম আগ্নেয়গিরি ও যেসকল এটা নিৰ্দিষ্ট সময়ের অন্তরালে ধোঁয়া, ছাই, গ্যাস বের হয়ে আসে সেসকল আগ্নেয়গিরিকে সবিরাম আগ্নেয়গিরি বলা হয়৷ ইটালীর ষ্ট্ৰম্বলী আগ্নেয়গিরি এ ধরনের আগ্নেয়গিরি।
২. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি : যেসব আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত অনেককাল আগে বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু যে কোন সময় আবার অগ্ন্যুৎপাত শুরু হতে পারে, সেগুলোকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন- জাপানের ফুজি পর্বত।
৩. মৃত আগ্নেয়গিরি : যেসব আগ্নেয়গিরি দীর্ঘকাল ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে এবং ভবিষ্যতেও অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই, সেগুলোকে মৃত আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন- আফ্ৰিকার কিলিমাঞ্জারো।