শক্তি কাকে বলে? শক্তি কি রাশি? শক্তির একক কি? শক্তির রূপান্তর।
কোন ব্যক্তি, বস্তু বা পদার্থের কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। একে সাধারণত E দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বস্তু সর্বমোট যতখানি কাজ করতে পারে তা-ই হচ্ছে বস্তুর শক্তির পরিমাণ। অর্থাৎ শক্তির পরিমাণ = বস্তু দ্বারা কৃত কাজের পরিমাণ = বল × বলের দিকে বস্তুর সরণের উপাংশ।
যার কাজ করার সামর্থ্য যত বেশি তার শক্তিও তত বেশি। শক্তি একটি অদিক বা স্কেলার রাশি।
একক: শক্তির একক জুল (J)।
শক্তির রূপান্তর (Transformation of Energy)
এই মহাবিশ্ব জুড়ে শক্তি বিভিন্ন রূপে বিরাজিত। বিভিন্ন প্রকার শক্তি পরস্পরের সাথে সম্বন্ধযুক্ত। এক শক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর সম্ভব এবং এর নামই শক্তির রূপান্তর (Transformation of energy)।
শক্তি রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
(১) পানি উচ্চ স্থান হতে নিম্ন স্থানে প্রবাহিত হয়। উচ্চ স্থানে থাকার সময় তার শক্তি স্থিতিশক্তি। নিম্ন স্থানে প্রবাহিত হবার সময় স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই গতিশক্তির সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয়। অর্থাৎ যান্ত্রিক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(২) বিদ্যুৎ শক্তি যখন বৈদ্যুতিক বাতির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন আমরা আলো পাই। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৩) বৈদ্যুতিক ইস্ত্রিতে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ চালনা করে তাপ উৎপন্ন করা হয়। এই তাপের সাহায্যে কাপড় চোপড় ইস্ত্রি করা হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি তাপ শক্তিতে এবং তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
বৈদ্যুতিক পাখার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে পাখা ঘুরতে থাকে। এ স্থলেও বৈদ্যুতিক শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৪) একটি কাঁচা লোহার উপর অন্তরীত (insulated) তামার তার জড়িয়ে বিদ্যুৎ চালনা করলে লোহার পাতটি চুম্বকে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তি চুম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৫) ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, রুবিডিয়াম প্রভৃতি ধাতুর উপর আলো পড়লে ইলেকট্রন নির্গত হতে দেখা যায়। ফটো-ইলেকট্রিক কোষ এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এরূপ একটি কোষে আলো ফেলে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে আলোক শক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৬) দুই হাতের তালু পরস্পরের সাথে ঘষলে তাপ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৭) ফটোগ্রাফিক ফিল্মের উপর আলোক সম্পাত করে রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে আলোক চিত্র তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৮) ওষুধের কারখানায় শ্রবণোত্তর বা শব্দোত্তর তরঙ্গের সাহায্যে জীবাণু ধ্বংস করা হয় এবং কপূরকে পানিতে দ্রবণীয় করা হয়। এ ছাড়া শব্দোত্তর তরঙ্গ দ্বারা বস্ত্রাদির ময়লাও পরিষ্কার করা হয়। এসব ক্ষেত্রে শব্দ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(৯) আমরা জানি বৈদ্যুতিক ঘণ্টা বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। টেলিফোনও বিদ্যুতের সাহায্যে চলে। দুই ক্ষেত্রেই আমরা শব্দ শুনতে পাই। এস্থলে বিদ্যুৎ শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(১০) কয়লা পোড়ালে তাপ উৎপন্ন হয়। রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে। এক্ষেত্রে রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
(১১) বিদ্যুৎ কোষে রাসায়নিক দ্রব্যের বিক্রিয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ বা বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হলো।
শক্তি যখন একরূপ হতে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয় তখন এর কোনো ঘাটতি বা বাড়তি ঘটে না। অর্থাৎ শক্তির বিনাশ ও সৃষ্টি উভয়ই অসম্ভব। যখন এক প্রকার শক্তি বিলুপ্ত হয় তখন তা অন্যরূপে আত্মপ্রকাশ করে। এর নাম শক্তির নিত্যতা বা শক্তির অবিনশ্বরতা (Conservation of Energy)। এ সম্পর্কে একটি সূত্র বা বিধি আছে। এর নাম শক্তির নিত্যতা সূত্র বা শক্তির নিত্যতা বিধি। একে শক্তির সংরক্ষণ সূত্রও বলা হয়।
এ সম্পর্কিত আরও প্রশ্ন ও উত্তরঃ–
১। পদার্থ ও শক্তির মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর : পদার্থের ভর আছে। অপরদিকে, শক্তির ভর নাই। পদার্থ স্থান দখল করে অবস্থান করে। কিন্তু শক্তি স্থান দখল করে না। বাতাস, পানি ইত্যাদি পদার্থ। আর তাপ, আলো, বিদ্যুৎ হচ্ছে শক্তি।
২। শক্তির অপচয় কাকে বলে?
উত্তর : কোনো যন্ত্রে প্রদত্ত মোট শক্তি সম্পুর্ণরূপে কার্যকর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় না। এই দুই শক্তির পার্থক্যকে অপচয়কৃত শক্তি বলে এবং এ ঘটনাকে শক্তির অপচয় বলে।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “শক্তি কাকে বলে? শক্তি কি রাশি? শক্তির একক কি? শক্তির রূপান্তর।” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।