National Universityপড়াশোনা

জিপিএ (GPA) ও সিজিপিএ (CGPA) বের করার পদ্ধতি

1 min read

আজকে কথা বলবো জিপিএ ও সিজিপিএ বের করার পদ্ধতি নিয়ে। সিজিপিএ/ জিপিএ কারও কাছে গর্বের। আবার কারোও কাছে কষ্টের। সিজিপিএ যাদের ভালো তারা প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে নিজেদের এক ধাপ এগিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শুরুতেই ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  কারণ আপনার স্কিল যতই ভালো হোক; চাকরিদাতারা প্রথমেই দেখবে আপনার GPA / CGPA । তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত জিপিএ ও সিজিপিএ সম্পর্কে বিষদ জ্ঞান রাখা।  কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা জিপিএ ও সিজিপিএ এর মধ্যে পার্থক্যই জানেন না। তাই প্রথমেই জিপিএ ও সিজিপিএ এর মধ্যে পার্থক্য জানতে বিষয়টি বুঝতে আপনার সহজ হবে। তাছাড়া অনেকেই আছেন GPA ও CGPA এর মধ্যে প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলেন।

জিপিএ ও সিজিপিএ পার্থক্য ?

জিপিএ ও সিজিপিএ এর মধ্যে সুক্ষ পার্থক্য রয়েছে। জিপিএ হচ্ছে গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ। Grade Point Average(GPA) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টের গড়মানকে বুঝায়। আর সিজিপিএ হচ্ছে কমুলেটিভ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ। CGPA বা Cumulative Grade Point Average এর মাধ্যমে কয়েক সেমিস্টার বা বছরের রেজাল্টের গড় মানকে বুঝায়।

 

উদাহরণ হিসেবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজাল্টকে নেয়া যায়। আপনার অনার্স(স্নাতক) কোর্স যদি চার বছরের হয় এবং প্রত্যকে বছরে দু সেমিস্টার করে মোট আট সেমিস্টার হয়। তবে ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট হচ্ছে জিপিএ। কিন্তু দুই সেমিস্টারে রেজাল্ট যখন এক সাথে প্রকাশ করা হয় তখন তা সিজিপিএ আকারে প্রকাশ করা হয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই সাবজেক্টগুলোতে ক্রেডিট পদ্ধতি রয়েছে। যদিও ইউনিভার্সিটি এবং ডিপার্টমেন্ট ভেদে ক্রেডিটের তারতম্য হয়। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিজদের মত করে ক্রেডিট বণ্টন করে নেয়।

আমাদের দেশের পাবলিক পরীক্ষা যেমন জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি বা এসব সমমানের পরীক্ষায় গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ বা জিপিএ আকারে ফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে রেজাল্টের সর্বোচ্চ সূচক এসব পর্যায়ে ধরা হয় ৫। যেটাকে বলা হয় জিপিএ-৫।  জিপিএ-৫ বলতে বুঝানো হয়। অর্থাৎ রেজাল্ট প্রকাশের পয়েন্ট বা স্কেল ধরা হয় ৫। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেজাল্ট প্রকাশের পয়েন্ট বা স্কেল হলো ৪। তাই বাংলাদেশের সব পর্যায়ের ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সূচক বা স্কেল ধরে রেজাল্ট প্রস্তুতের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে GPA / CGPA

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে GPA / CGPA এই দুইটার ব্যবহারই আছে। তবে জিপিএ ও সিজিপিএ প্রকাশের সর্বোচ্চ সূচক বা স্কেল ধরা হয় ৪।  শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই ফল প্রকাশের জন্য সিজিপিএ এর পয়েন্ট বা স্কেল ৪ ধরে নেয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থীরা অন্যদশের বিশ্ববিদ্যালয় বা চাকরি পেতে তাদের রেজাল্ট সহজে উপস্থাপন করতে পারে। সব দেশের একই জিপিএ ও সিজিপিএ বের করার একই পদ্ধতি হওয়ায় খুব সহজেই এটা বুঝতে সুবিধা হয়। বর্তমানে সব দেশেই সর্বোচ্চ সূচক চার। অর্থাৎ সিজিপিএ- ৪।

প্রচলিত সিজিপিএ পদ্ধতি (CGPA Systems)

Numerical Grade Range(%)Letter GradeGrade Point
80 and AboveA+4.00
75-79A3.75
70-74A-3.50
65-69B+3.25
60-64B3.00
55-59B-2.75
50-54C+2.50
45-49C2.25
40-44D2.00
Less than 40F0.00

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে GPA নির্ণয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও GPA নির্ণয় পদ্ধতি একই। আগেই জেনেছি, জিপিএ হচ্ছে গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ। Grade Point Average(GPA) বলতে একটি বছরের ফলকে বুঝায়। যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার সিস্টেম নাই। তাই এখানে প্রথম বছরের ফলাফলই হচ্ছে জিপিএ।

জিপিএ বের করার জন্য কোন সাবজেক্টে অর্জিত পয়েন্টকে ওই সাবজেক্টের ক্রেডিট সংখ্যা দ্বারা গুণ করতে হবে। এতে করে ওই কোর্স বা সাবজেক্টের অর্জিত পয়েন্ট বের হবে।  জিপিএ বের করতে এভাবে আগে প্রত্যেক কোর্স বা সাবজেক্টের অর্জিত পয়েন্ট বের করে নিতে হবে। পরে মোট অর্জিত ক্রেডিট দিয়ে ভাগ করতে হবে। এভাবেই আপনার জিপিএ বের হবে।

 

গ্রেড পয়েন্ট বের করার পদ্ধতি

গ্রেড পয়েন্ট বের করার পদ্ধতি বা জিপিএ বের করার পদ্ধতি একই। GPA জিপিএ বের করার পদ্ধতিই অনেকে গ্রেড পয়েন্ট বের করার পদ্ধতি হিসেবে জানতে চায়। জিপিএ বা গ্রেড পয়েন্ট বের করার পদ্ধতি হলো আপনার মোট প্রাপ্ত নাম্বার থেকে প্রথমে গ্রেড বের করতে নিতে হবে।  আপনি যদি কোন বিষয়ে ৮১ পান তবে আপনার গ্রেড হবে এ+ এবং আপনার গ্রেড পয়েন্ট হবে ৫।

এবার আপনার প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে ওই কোর্সের ক্রেডিট দিয়ে গুণ করতে হবে। কোর্স বা বিষয় ক্রেডিট যদি হয় ৪। তবে তা গুণ করে হবে ২০। এভাবে পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেক কোর্স বা বিষয়ের অর্জিত পয়েন্টের সাথে ক্রেডিট গুণ করে নিতে হবে। ধরুণ, আপনার মোট কোর্স বা সাবজেক্ট সংখ্যা পাঁচ।

তবে পাঁচটি কোর্সেরই এভাবে বের করে খাতায় লিখুন। এবার প্রত্যেক কোর্সের ক্রেডিট সংখ্যা যোগ করুন। এবং তা দিয়ে পাঁচ সাবজেক্টে অর্জিত পয়েন্ট দিয়ে ভাগ করুন। তাহলে জিপিএ বের হয়ে যাবে।  এটাই জিপিএ বের করার সব থেকে সহজ পদ্ধতি। এভাবে আপনি নিজে নিজেই জিপিএ বের করে ফেলতে পারবেন কারও সাহায্য ছাড়াই।

বাংলাদেশে প্রচলিত জিপিএ সিস্টেমস (GPA Systems)। বাংলাদেশে জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় এই গ্রেড পয়েন্ট বিদ্যমান রয়েছে।

Class IntervalLetter GradeGrade Point
80-100A+5.00
70-79A4.00
60-69A-3.50
50-59B3
40-49C2
33-39D1
0-32F0

পি এস সি গ্রেডিং পদ্ধতি

পি এস সি গ্রেডিং পদ্ধতি এবং জি এস সি গ্রেডিং পদ্ধতি একই।  পি এস সি গ্রেডিং পদ্ধতি বের করতে প্রথমে ছয়টি সাবজেক্টের প্রাপ্ত গ্রেড যোগ করতে হবে। তারপর মোট সাবজেক্ট বা বিষয় দিয়ে ভাগ করতে হবে। এর আগে বলেছি, রেজাল্ট প্রকাশের সর্বোচ্চ সূচক বা স্কেল আগে আপানকে নির্ধারণ করে নিন।

আমরা সর্বোচ্চ সূচক ৫ ধরে একটা হিসাব কষে দেখি। ধরা যাক আপনার সাবজেক্ট বা বিষয় ছয়টি। আর আপনার ছয়টি সাবজেক্টের গ্রেড পয়েন্টের যোগ ফল ২০।  তাহলে আপনি ২০ কে ৬ দিয়ে ভাগ করুন। ভাগফল হবে ৩.৩৩। অর্থাৎ আপনার গ্রেড হবে ‘বি’। আর একই পদ্ধতিতে আপনি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট(জেএসসি) ফলাফলও বের করতে পারবেন।  যে টেকনিক মনে রাখতে হবে তা হলো মোট সাবজেক্ট দিয়ে আর্জিত গ্রেড পয়েন্টকে ভাগ করতে হবে। এর জন্য আলাদা কোন পদ্ধতি নেই।

সিজিপিএ বের করার পদ্ধতিজিপিএ বের করার পদ্ধতি জানা থাকলে সিজিপিএ বের করার পদ্ধতি আপনার কাছে পানির মত সহজ হয়ে যাবে। একটু সহজভাবে বিষয়টা চিন্তা করুন।  আর সিজিপিএ বের করার পদ্ধতি দেখে আপনার গ্রেড পয়েন্ট জেনে নিন। সূত্রটা হচ্ছে, সিজিপিএ= আপনার অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট X কোর্স বা সাবজেক্টের ক্রেডিট সংখ্যা । যে ফল পাওয়া যাবে তাকে মোট ক্রেডিট সংখ্যার যোগফল দিয়ে ভাগ করতে হবে।

এবার একজনের রেজাল্ট নিয়ে উদাহরণ দিচ্ছি, ধরুণ আপনার বা প্রথম সেমিস্টারের গ্রেড পয়েন্ট ৩.৬৬। ধরা যাক, ওইবর্ষে বা ওই সেমিস্টারে আপনার মোট ক্রেডিট সংখ্যা ছিলো ১৯.৫। আর আপনার দ্বিতীয় বর্ষ বা প্রথমবর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের গ্রেড পয়েন্ট ৩.৭৫ এবং দ্বিতীয় বর্ষ বা প্রথমবর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের মোট ক্রেডিট সংখ্যা ছিলো ১৯।

সিজিপিএ= আপনার অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট X কোর্স বা সাবজেক্টের ক্রেডিট সংখ্যা ÷ মোট ক্রেডিট সংখ্যার যোগফল

তাহলে CGPA = (৩.৬৬ X ১৯.৫ + ৩.৭৫ X১৯) ÷ (১৯.৫+১৯) = ৩.৭০ অর্থাৎ সিজিপিএ হবে (এ-)।
এবার পূর্বের ফলাফলের সাথে তৃতীয় বর্ষের ফল বা দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট যোগ করে দেখা যাক। ধরুণ, তৃতীয় বর্ষের ফল ৩.৫০ বা দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট ৩.৫০। আর ক্রেডিট সংখ্যা ২০। তাহলে কি হয় সিজিপিএ ?
CGPA = (৩.৭০X ৩৮.৫ + ৩.৫০ X২০) ÷ (৩৮.৫+২০)
CGPA = ৩.৬৩
এভাবে আপনি ফাইনাল ইয়ারসহ সব সেমিস্টারের রেজাল্ট একত্রে নিজেই তৈরি করে নিতে পারবেন।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “জিপিএ (GPA) ও সিজিপিএ (CGPA) বের করার পদ্ধতি” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (39 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.