তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কাকে বলে? তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কি বা কাকে বলে? (What is Radioactive isotope in Bengali/Bangla?)
যেসব আইসোটোপ অস্থায়ী এবং বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও কণা বিকিরণ করে অন্য মৌলে পরিণত হয় তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। যেমন- 99Tc, 60Co ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ টির বেশি তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কিছু আইসোটোপ প্রকৃতিতে এবং কিছু আইসোটোপকে পরীক্ষাগারে বানানো হয়েছে।
তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার (Uses of radioactive isotope)
তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার নিম্নরূপ :
১. সালোকসংশ্লেষণে : পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া হলো সালোকসংশ্লেষণ। কারণ এর উপরে সমগ্র উদ্ভিদজগৎ ও সমগ্র প্রাণীজগৎ নির্ভর করে। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে বলে প্রমাণিত হয়েছে৷
২. চিকিৎসা ক্ষেত্রে : চিকিৎসা ক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন :
ক. শরীরের কোথাও ক্ষতিকর ক্যান্সার টিউমারের উপস্থিতি থাকলে তা তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ দ্বারা শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
খ. থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় আয়োডিন আইসোটোপ থাইরয়েড গ্রন্থিতে অবস্থিত কোষ কলা বৃদ্ধি প্রতিহত করে।
৩. কৃষিক্ষেত্রে : তেজষ্ক্রিয়তার সাহায্যে কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন উন্নতমানের বীজ উদ্ভাবন করা হচ্ছে। এসব বীজের মাধ্যমে ফলনের উন্নতি ও পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. খাদ্য সংরক্ষণে : বিভিন্ন কৃষিজাত ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয়তার ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে এসব খাদ্যদ্রব্যে পোকা-মাকড় বা জীবাণু সহজে আক্রমণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
৫. কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে : কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা যায়। এতে কীট পতঙ্গের আক্রমণ থেকে মূল্যবান শস্য রক্ষা পায়।
৬. শিল্পক্ষেত্রে : শিল্পক্ষেত্রে তেজিষ্ক্রয় আইসোটোপের ব্যবহার বহুবিধ। যেমন :
ক. ধাতুর পাতের পুরুত্ব পরিমাপে
খ. বদ্ধপাত্রে তরলের উচ্চতা পরিমাপে
গ. পাইপ লাইনের ছিদ্র অনুসন্ধানে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ক্ষতিকর প্রভাব
তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে বিভিন্ন ধরনের রশ্মি নির্গত হয়। বিভিন্ন ধরনের রশ্মি নির্গমনের ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে। আর এই তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সার হওয়ার একটি বিশেষ কারণ। ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। যার কারণে মাথার চুল পড়ে যায়, বমি বমি ভাব হয়। এমনকি আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করে নিউক্লিয় বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, যা প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে। এই শক্তিকে ব্যবহার করে এটম বোমা, পারমাণবিক বোমা ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। যা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করতে পারে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ
জীবজগতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর রশ্মি কোনটি?
উত্তরঃ জীবজগতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর রশ্মি- গামা রশ্মি।
জীব জগতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর রশ্মি গামা। এর ভেদন ক্ষমতা মহাবিশ্বের যে কোনো কণা বা তরঙ্গের থেকে বেশি। এটি আধানবিহীন ও চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না। সাধারণত নিউক্লিয় বিক্রিয়া গামা বিকিরণের উৎস। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গামা বিকিরণ নির্গত হয়। এটি প্রাণিদেহ বা উদ্ভিদদেহের মধ্য দিয়ে গমনকালে স্থায়ী ক্ষতিসাধন করে। এর প্রভাবে স্কিন ক্যান্সার হতে পারে।