গ্যাসের গতিতত্ত্ব (The Kinetic Theory of Gases)
গ্যাসসমূহ প্রকৃতির সবচেয়ে সাধারণ উপাদান। খুব সাধারণভাবে গ্যাসের আচরণকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিজ্ঞানীগণ সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে চেষ্টা করছেন। সেসব সূত্র ধরে বিজ্ঞানী নিউটন (Newton), বার্নোউলী ( Bernoulli), ক্লসিয়াস (Clausius), ম্যাক্সওয়েল (Maxwell) প্রমূখ বিজ্ঞানীগণ গ্যাসের গতিতত্ত্বের ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে। যার ওপর ভিত্তি করে 1859 সালে বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল ও বোল্টজম্যান (Boltzman) তাদের বিখ্যাত বণ্টন সূত্রের সাহায্যে গ্যাসের গতিতত্ত্বকে বর্তমান রূপে রূপদান করেন। গ্যাসের গতিতত্ত্বের সাহায্যে গ্যাসের সকল সূত্র ব্যাখ্যা করা যায়। গ্যাসের গতিতত্ত্ব কতগুলো মৌলিক স্বীকার্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। স্বীকার্যসমূহ নিম্নে দেওয়া হলো–
গ্যাসের গতিতত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্যসমূহ (Fundamental Postulations of kinetic theory of gas)
- গ্যাস অতি সূক্ষ্ম কণার সমন্বয়ে গঠিত। এই সূক্ষ্ম কণাকে অণু বলে এবং এই কণাগুলো গ্যাস পাত্রের সর্বত্র সুষমভাবে বিরাজ করে। গ্যাসের অণুগুলোর আয়তন, সমস্ত গ্যাসের আয়তন অপেক্ষা অতি নগণ্য।
- গ্যাসের অণুগুলো নির্দিষ্ট দ্রুত গতিতে বিক্ষিপ্তভাবে চলাচল করে। অণুগুলো সমগতিতে সরলরৈখিক পথে চলে। একটির সাথে আরেকটির কিংবা পাত্রের দেওয়ালের সাথে সংঘর্ষের ফলে পথ পরিবর্তন করে।
- গ্যাসের অণগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব অনেক যার ফলে তাদের মধ্যে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি অতি নগণ্য। সেহেতু অণুগুলো মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে। অণুগুলোর মধ্যে কোনো আকর্ষণ বিকর্ষণ নেই বলে ধরে নেয়া হয়।
- সমস্ত সংঘর্ষ স্থিতিস্থাপক যার ফলে সংঘর্ষের জন্য কোন প্রকার গতিশক্তির পরিবর্তন হয় না।
- গ্যাসাধারের গাত্রের সঙ্গে গতিশীল অণুসমূহের অবিরাম সংঘর্ষের ফলেই গ্যাসের চাপের সৃষ্টি হয়। এই সংঘর্ষ যত বেশি হবে তত বেশি চাপের সৃষ্টি হয়।
- গ্যাসের সকল অণুর গড় গতিশক্তি (½mv2) এর পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সকল অণুর গড় গতিশক্তি সমান।
- গ্যাসের অণুগুলোর গতির ওপর অভিকর্ষ বলের কোনো প্রভাব নেই।
- অণুগুলোর মধ্যে শুধু ধাক্কার জন্য যে সময় ব্যয় হয় তা দুটি ধাক্কার মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় অতি নগণ্য এবং দুই ধাক্কার মধ্যবর্তী দূরত্বের গড়মানকে গড় মুক্তপথ বলে।