পড়াশোনা

এইডস রোগ কি? এইডস রােগের কারণ ও লক্ষণ

1 min read

বর্তমান বিশ্বে এইডস একটি মারাত্মক ঘাতক ব্যাধি হিসেবে পরিচিত। 1981 সালে রােগটি আবিষ্কৃত হয়। Acquired Immune Deficiency Syndrome-এর শব্দগুলাের আদ্যক্ষর দিয়ে এ রােগটির নামকরণ (AIDS) করা হয়েছে। UNAIDS-এর এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় 2 কোটি 30 লাখের বেশি লােক AIDS-এর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় 40 শতাংশ হলাে নারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় 164টি দেশে এই রােগের বিস্তার ঘটেছে। Human Immune Deficiency Virus সংক্ষেপে HIV ভাইরাসের আক্রমণে এইডস হয়। এই ভাইরাস শ্বেত রক্ত কোষের ক্ষতিসাধন করে এবং এ কোষের এন্টিবডি তৈরিসহ রােগ প্রতিরােধ-সংক্রান্ত কাজে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে শ্বেত রক্ত কোষের সংখ্যা (বিশেষ করে CD4 জাতীয় শ্বেত রক্তকোষ) ও এন্টিবডির পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে। এই ভাইরাস মানবদেহে সুপ্ত অবস্থায় অনেক দিন থাকতে পারে। এই ভাইরাসের আক্রমণে রােগীর দেহে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায় বলে রােগীর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। কারণ এইডস রােগীর রােগ প্রতিরােধক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার মতাে কোনাে ঔষধ এখনও আবিষ্কার হয়নি।

এইডস রােগের কারণ
নিম্নলিখিত কারণে একজন সুস্থ ব্যক্তি এই ঘাতক রােগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন:

 

  • এইডস আক্রান্ত পুরুষ বা মহিলার সাথে অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে এ রােগ হয়।
  • দুর্ঘটনাজনিত রক্তক্ষরণ, প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ, বড় অস্ত্রোপচার, রক্তশূন্যতা, থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেহে রক্ত পরিসঞ্চালন প্রয়ােজন হয়। এ অবস্থায় এইডস রােগে আক্রান্ত রােগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে সঞ্চালন করলে এইডস রােগ হয়।
  • এইডসে আক্রান্ত বাবা থেকে সরাসরি সন্তানে রােগটি ছড়ায় না। বাবার সাথে যৌনমিলনের মাধ্যমে মায়ের এইডস হতে পারে এবং আক্রান্ত মায়ের গর্ভের সন্তান তখন এইডস রােগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রােগে আক্রান্ত মায়ের দুধ শিশু পান করলে সে শিশুও এইডসে আক্রান্ত হতে পারে।
  • HIV জীবাণুযুক্ত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, সুচ, দন্ত চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং অপারেশনের যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমেও সুস্থ ব্যক্তি এ রােগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি সেলুনে একই ব্লেড একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করলে তার মাধ্যমেও রােগটি ছড়াতে পারে।
  • এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির কোনাে অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে এ রােগ সংক্রমিত হয়।
এইডস রােগের লক্ষণ
রােগ জীবাণু সুস্থ দেহে প্রবেশ করার প্রায় 6 মাস পরে এই রােগের লক্ষণগুলাে প্রকাশ পায়। তখন এর প্রকাশ অত্যন্ত মৃদু থাকে এবং কিছুদিনের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। তারপর কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত রােগী আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ থাকে কিন্তু তার দেহের মধ্যে এইডসের ভাইরাস সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে। ভাইরাস যথেষ্ট সংখ্যায় বৃদ্ধি পেলে হঠাৎ করেই অসুখ মারাত্মকভাবে ফিরে আসে। তখন আর বেশি কিছু করার থাকে না। এর আগে সেই ব্যক্তি যে এইডস রােগের বাহক তা বােঝা মুশকিল। এইডসের লক্ষণগুলাে হলাে:
  • দ্রুত রােগীর ওজন কমতে থাকে।
  • এক মাসেরও বেশি সময়ব্যাপী একটানা জ্বর থাকে অথবা জ্বর জ্বর ভাব দেখা দেয়।
  • এক মাস বা তারও বেশি সময় ধরে পাতলা পায়খানা হয়।
  • অনেক দিন ধরে শুকনাে কাশি হতে থাকে।
  • ঘাড় এবং বগলে ব্যথা অনুভব হয়, মুখমণ্ডল খসখসে হয়ে যায়।
  • মুখমণ্ডল, চোখের পাতা, নাক ইত্যাদি অঙ্গ হঠাৎ ফুলে যায় এবং সহজে এই ফোলা কমে না।
  • সারা দেহে চুলকানি হয়।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এইডস
  • বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণ ধরা পড়ে ১৯৮৯ সালে।
  • ১ ডিসেম্বর ২০০২ বিশ্ব এইডস দিবসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কার্যক্রমের পরিসংখ্যান রিপাের্ট অনুযায়ী ২০০১ সালে HIV ভাইরাস বহনকারীর সংখ্যা ছিল ১৮৮ জন এবং ২০০২ সালে HIV ভাইরাস বহনকারীর সংখ্যা ছিল ২৪৮ জন।
  • বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি এইচআইভি সংক্রমিত চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা ২০৮৮। এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ২৪১ জন।
  • এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস প্রতিরােধ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনাে ধারণা নেই ৩ কোটির উধের্ব অল্পবয়সি (১৫ – ২৪) জনগােষ্ঠীর।
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x