Modal Ad Example
পড়াশোনা

সফটওয়্যার পাইরেসি কি? সফটওয়্যার পাইরেসির প্রতিরোধ।

1 min read

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উন্নয়নকৃত বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক অনুমতি ব্যতীত নকল করাকে সফটওয়্যার পাইরেসি বা সফটওয়্যার কপি করা বলা হয়। মানুষের সকল সৃজনশীল কাজই মস্তিষ্কজাত। কখন এটি বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, কখন এটি ধারণা হিসেবে থাকে। কখন এটি সূত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। সফটওয়্যার এমনি একটি মেধাস্বত্ব।

আর কম্পিউটার সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এ সফটওয়্যারের মেধাস্বত্ব রক্ষার জন্য প্রণীত আইনকেই সফটওয়্যার কপিরাইট আইন বলে অভিহিত করা হয়। সারা বিশ্বে মেধাস্বত্ব আইন রয়েছে। সভ্য মানুষ মেধার মূল্যকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী এ আইনকে সম্মান করা হয়। বিশ্বের প্রায় সকল দেশ জেনেভা কনভেনশন নামক চুক্তিতে সই করে মেধাস্বতের মর্যাদা দেবার প্রকাশ্য অঙ্গীকার করেছে। আমাদের দেশও তাই করেছে।

সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষসমূহঃ
সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্রেতা, বিক্রেতা, প্রস্তুতকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাইরেসির ফলে কপিরাইট আইন লঙ্ঘিত হয় বলে একদিকে যেমন প্রস্তুতকারীর আর্থিক ক্ষতি হয় অন্যদিকে ব্যবহারকারী বা ক্রেতা, বিক্রেতাসহ সকলেই বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ক্ষতি হতে পারে। যথা–
সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী (Software Owner)
সফটওয়্যার ব্যবহারকারী (Software Users)
রাষ্ট্র বা সরকার (Government)
বিশ্ব অর্থনীতি (The Global Economy)

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী (Software Owner): সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যেমন, ২০০১ সালে সফটওয়্যার অ্যালায়েন্স (Business Software Alliance) নামক একটি প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে ১৩ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

সফটওয়্যার ব্যবহারকারী (Software Users): সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ব্যবহারকারী নানাবিধ সমস্যায় পড়তে পারে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পাইরেটেড সফটওয়্যারের জন্য কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। তাই আপডেট বা আপগ্রেড করার সুবিধা, নতুন অংশের সংযোজন প্রভৃতি করা যায় না। পাইরেটেড সফটওয়্যার ভাইরাস বহন করতে পারে অথবা একবারে কাজ নাও করতে পারে। লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারে যথাযথ ডকুমেন্টশন থাকে না। কোন প্রতিষ্ঠানে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ঐ প্রতিষ্ঠানের পণ্য দ্রব্যাদি কিংবা সেবার মান ব্যহত হয়। পাইরেটেড সফটওয়্যারে অনেক সময় ভার্ষন কন্ট্রোল করার ব্যবস্থা দেয়া থাকে না, যার ফলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয় এবং সফলতার হার কমে যায়। আবার আইনসঙ্গত (Legitimate) ব্যবহারকারীরাও পড়েন আর্থিক সমস্যায়। পাইরেসির ফলে রাষ্ট্র বা সরকার ট্যাক্স বা ভ্যাট আদায় থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশ্ব অর্থনীতি (The Global Economy): সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কোন প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী সফটওয়্যার বাজারজাত করতে গেলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার যদি পাইরেটেড হতে থাকে তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। পাইরেসির কারনে বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং সফটওয়্যার বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে শত শত চাকুরির পদ বিলুপ্ত হয়। ফলে এর প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়ে। ‘পরিসংখ্যান মতে’, পাইরেসির হার বিশ্বব্যাপী ৩৬% হলে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। 

সফটওয়্যার পাইরেসির প্রতিরোধ (Preventing Software Piracy)
সফটওয়্যার পাইরেসির কারণে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য সফটওয়্যার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রোগ্রামার ও ডেভেলপারকে যথেষ্ট পরিমাণ সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হয়। সফটওয়্যার পাইরেসির জন্য প্রোগ্রামার বা ডেভেলপারের যে আর্থিকভাবে লাভবান না হওয়ার কারণে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ফলে ভালমানের সফটওয়্যার তৈরি হয়না এবং ক্রেতা-বিক্রেতাসহ অন্যান্যরাও আইন বিরুদ্ধ কাজে নিযুক্ত হয়। এ কারণে সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধ করা প্রয়োজন। সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। যথা–
সচেতনতা বৃদ্ধি (Awareness): পাইরেসি মানে অন্যের জিনিস চুরি করার সামিল। পাইরেসি সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেকের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাই পাইরেসি কি এবং পাইরেসির ফলে কি কি কুফল হতে পারে সে সম্পর্কে সবাইকে বুঝানো যাতে তারা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।

কপি প্রটেক্টেড করা (Copy protection): সফটওয়্যার তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত সফটওয়্যার যাতে কপি করতে না পারে সেজন্য প্রটেক্ট করে দিতে পারে। এন্টিপাইরেসি সফটওয়্যার ব্যবহার, রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি, হার্ডওয়্যার লক কী ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে পাইরেসি প্রতিরোধ করা যায়।

গোপনীয়তা (Privacy): সফটওয়্যার তৈরির সময় গোপনীয়তা অবলম্বন করা উচিত যাতে অন্য কেউ প্রোগ্রামের সম্পূর্ন কোড বা অংশবিশেষ কপি করতে না পারে।

সফটওয়্যার অথেনটিক্যাশন এবং এক্টিভেশন (Software authentication and activation): ইন্টারনেটের মাধ্যমে সফটওয়্যার অথেনটিক্যাশন এবং এক্টিভেশন থাকলে ব্যবহারকারীর সফটওয়্যারটি অরজিনাল অর্থাৎ ক্রয় করা কিনা তা যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

রিপাের্ট করা (Reporting): কেউ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে যথাশীঘ্র সম্ভব সরবরাহকারী বা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে জানান যে তার তৈরিকৃত সফটওয়্যার বিনা অনুমতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরােধের সর্বোত্তম উপায়।

আইনগত ব্যবস্থা (Legal action): অন্যান্য বিষয়ের মতাে মেধাস্বত্ত্ব অধিকার রক্ষার জন্য কপিরাইট বা আইপিআর (ইন্টেলেকচুয়াল প্রােপার্টি রাইট) বাস্তবায়ন করে সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরােধ করা সম্বব। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে সফটওয়্যার পাইরেসি শক্তভাবে প্রতিরােধ করতে পারে।

5/5 - (19 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x