প্লেজিয়ারিজম কি? প্লেজিয়ারিজমের ক্ষতিকর প্রভাব

অন্যের লেখা তথা কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহিত্যকর্ম, গবেষণা প্রতিবেদন, সম্পাদনা কর্ম ইত্যাদি হুবহু নকল বা আংশিক পরিবর্তন করে নিজের নামে প্রকাশ করাকে প্লেজিয়ারিজম বলে।

কোন বিষয়ের উপর লেখার সময় একে আরও তথ্যসমৃদ্ধ করা যায় বিভিন্ন উৎস থেকে বেশি বেশি তথ্য তাতে সংযোজনের মাধ্যমে। গবেষণাধর্মী লেখার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে যে কোন উৎসের লেখা সংযোজন করা হোক না কেন তাতে মূল লেখক বা মূল কর্মের স্রষ্টার নাম অবশ্যই সংযোজন করা উচিত। এটিই নিয়ম।

এর ব্যতিক্রম হলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের অপরাধই হলো প্লেজিয়ারিজম। তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্লেজিয়ারিজমের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে অন্যের ধ্যান ধারণা, গবেষণা, কৌশল, প্রোগামিং কোড, গ্রাফিক্স, কথা, লেখা, ডেটা, ছবি, শব্দ, গান ইত্যাদির উৎস অনেক ক্ষেত্রেই উল্লেখ না করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। অন্যের ধ্যান ধারণা ব্যবহারের সময় অবশ্যই তা উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

প্লেজিয়ারিজমের ক্ষতিকর প্রভাব
প্লেজিয়ারিজম মূলত একটি ক্ষতিকর প্রবণতা। এর মাধ্যমে নিজের এবং সমাজের ক্ষতি হয়। এর ফলে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে সেগুলাে হলাে-

  • প্লেজিয়ারিজম মানুষের সৃষ্টিশীলতা ধ্বংস করে দিতে পারে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু সৃজনশীল উপাদান থাকে। প্লেজিয়ারিজমের চর্চার ফলে মানুষের সেই সৃজনশীলতা বিকশিত হয় না।
  • প্লেজিয়ারিজম চর্চার ফলে নিজের যােগ্যতাকে সঠিকভাবে যাচাই করা যায় না। অন্যের লেখা কাট-কপি-পেস্ট করার ফলে ধীরে ধীরে নিজে নিজে নতুন কোনাে ধারণা সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না।
  • প্লেজিয়ারিজমের মাধ্যমে আসলে নিজেকেই ঠকানাে হয়। নিজস্ব চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না বলে অন্যের উপর খুব বেশি নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়।
  • প্লেজিয়ারিজম একটি অপরাধ যা ধীরে ধীরে নিজেকে তাে বটেই সমাজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সামাজিক অপরাধের আওতায় এটি পড়ে।
  • অন্যের সম্পদ ব্যবহারের পরও তার নাম উল্লেখ না করলে মূলত সেই লেখক বা সৃষ্টিকারীর মূল কাজকে অবজ্ঞা এবং অবমূল্যায়ন করা হয় যা কোনভাবেই নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না।
  • প্লেজিয়ারিজমের মাধ্যমে অনেক সময়ই কপিরাইট ভঙ্গ হবার আশঙ্কা থাকে। আর এই অভিযােগে অভিযুক্ত হলে ‘ আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হলে শাস্তি পাবার সম্ভাবনা থাকে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণাধর্মী কাজে প্লেজিয়ারিজেমের অভিযােগ প্রমাণিত হলে অনেক ক্ষেত্রে উক্ত শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হতে পারেন। এমন নজির উন্নত বিশ্বে রয়েছে।
  • প্লেজিয়ারিজমের মাধ্যমে হয়তাে কেউ অধিক নম্বর পেতে পারেন কিন্তু এই অনৈতিক কাজের জন্য প্ররিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থীগণ তাদের কাজে নিরুৎসাহিত হতে পারে।
প্লেজিয়ারিজম এড়িয়ে চলার উপায়
প্লেজিয়ারিজম এড়িয়ে চলার জন্য কতগুলো উপায় অবলম্বন করা যায়। এগুলো হলোঃ

  • যে স্থান থেকে কোন বুদ্ধি ধার করা হয়েছে তার পরিষ্কার ও সঠিক উল্লেখ থাকা উচিত।
  • অন্যের কাছ থেকে নেয়া যে উপাদানটি নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উদ্ধৃতির পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা উচিত।
  • অন্য ব্যক্তির বক্তব্য হুবহু তুলে ধরার সময় তা সরাসরি উদ্ধৃতি চিহ্নের (“ ”) মধ্যে রাখা উচিত। পেপার লেখার সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার।
  • আসল তথ্য ও চিন্তা যে ব্যক্তির কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে সবসময় তার স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *