ক্রোমোসোম কি? ক্রোমোসোমের প্রকারভেদ, অবস্থান, দৈর্ঘ্য, সংখ্যা এবং কাজ। What is Chromosome?

ক্রোমোসোম কি? (What is Chromosome in Bengali/Bangla?)

ক্রোমোসোম হচ্ছে বংশগতির প্রধান উপাদান। ১৮৭৫ সালে স্ট্রাসবার্গার (Strasburger) সর্বপ্রথম ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন। ক্রোমোসোমের প্রধান উপাদান DNA।

 

ক্রোমোসোমের প্রকারভেদ (Types of Chromosome)

বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ক্রোমোসোম দুই প্রকার। যথা : ১. অটোসোম বা দেহকোষ। ২. সেক্স ক্রোমোসোম বা জনন কোষ।

১. অটোসোম : জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমকে অটোসোম বলে। মানবদেহে ২২ জোড়া অটোসোম থাকে।

২. সেক্স ক্রোমোসোম : লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে। মানবদেহে ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোসোম থাকে।

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ক্রোমোসোমকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।

i. মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে মাঝখানে অবস্থিত তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। এর দুই বাহু সমদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয় এবং অ্যানাফেজ পর্যায়ে এর আকৃতি ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো হয়।

ii. সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি মধ্যখান থেকে একটু এক পাশে অবস্থিত তাকে সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। অ্যানাফেজ দশায় এরা ইংরেজি ‘L’ অক্ষরের মতো দেখায়।

iii. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি কোনো এক প্রান্তের কাছাকাছি থাকে তাকে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। অ্যানাফেজ দশায় এদের অনেকটা ইংরেজি ‘J’ অক্ষরের মতো দেখায়।

iv. টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে প্রান্তভাগে অবস্থিত তাকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। অ্যানাফেজ দশায় একে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়।

 

ক্রোমোসোমের অবস্থান
নিউক্লিয়াসের মধ্যে ক্রোমোসোম অবস্থান করে। তবে কখনো কখনো নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপ্লাজমেও অবস্থান করে।

ক্রোমোসোম এর দৈর্ঘ্য
ক্রোমোসোমের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন রকম হতে পারে। দৈর্ঘ্য ০.২ মাইক্রো মিটার (Mm) থেকে ৫০ মাইক্রোমিটার (Mm) এবং ০.২ মাইক্রোমিটার (Mm) থেকে ২ মাইক্রোমিটার (Mm) পর্যন্ত হয়ে থাকে। মানবদেহে ক্রোমোসোম 6Mm পর্যন্ত হতে পারে।

ক্রোমোসোমের সংখ্যা
মানবদেহে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোসোম থাকে। এই ৪৬টি ক্রোমোসোমের মধ্যে ৪৪টি বা ২২ জোড়া অটোসোম এবং ২টি বা ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোসোম।

ক্রোমোসোমের কাজ
ক্রোমোসোম এর কাজ নিচে তুলে ধরা হলো–
১. বংশগতির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
২. DNA ধারণ করে।
৩. জীবের জৈব রাসায়নিক ও শরীরবৃত্তিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে।

 

ক্রোমোসোমে কি কি থাকে?

ক্রোমোসোমে প্রধানত দু’ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যথাঃ-
১/নিউক্লিক এসিড ও
২/প্রোটিন।

১/ নিউক্লিক এসিডঃ ক্রোমোসোমে দু’ ধরনের নিউক্লিক এসিড পাওয়া যায়। যথাঃ (i)DNA ও (i)RNA
(i)DNA: DNA এর পুরো নাম Deoxy-ribo Nucleic Acid. DNA হল ক্রোমোসোমেরর স্থায়ী উপাদান। ক্রোমোসোমের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে DNA এর পরিমাণ  হচ্ছে শতকরা ৪৫ ভাগ।
এটি ৯০% ক্রোমোসোমেই থাকে।

(ii)RNA: এর পুরো নাম Ribo Nucleic Acid. ক্রোমোসোমের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে DNA এর পরিমাণ  হচ্ছে শতকরা ০.২-১.৪ ভাগ। RNA ক্রোমোসোমেরর স্থায়ী উপাদান নয়। এটি ১০% ক্রোমোসোমেই থাকে। RNA হল  ভাইরাস ক্রোমোসোমের স্থায়ী উপাদান।

২/প্রোটিনঃ প্রোটিন ক্রোমোসোমের মুল কাঠামো গঠনকারী উপাদান। এ কাঠামোতে নিউক্লিক এসিড বিন্যস্ত থাকে। ক্রোমোসোমে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগ। ক্রোমোসোমে দু’ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়। যথাঃ- (i)নিম্ন আনবিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রোটিন ও (ii) উচ্চ আনবিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রোটিন

(i)নিম্ন আনবিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রোটিনঃ ক্রোমোসোমে প্রোটামিন অথবা হিস্টোন এদুটি ক্ষারীয় প্রোটিনের মধ্যে যেকোন একটিকে পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ ক্রোমোসোমে হিস্টোন প্রোটিন থাকে। প্রোটামিন প্রোটিন থাকে শুধু শুক্রাণুর ক্রোমোসোমে।
(ii) উচ্চ আনবিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রোটিনঃ ক্রোমোসোমে বেশ কয়েক ধরনের অম্লীয় প্রোটিন থাকে। উল্লেখযোগ্য হল DNA পলিমারেজ ও RNA পলিমারেজ।
উল্লেখিত উপাদান ছাড়াও ক্রোমোসোমে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লিপিড, এনজাইম, আয়রন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ খুব অল্প পরিমানে থাকে।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “ক্রোমোসোম কি? ক্রোমোসোমের প্রকারভেদ, অবস্থান, দৈর্ঘ্য, সংখ্যা এবং কাজ।” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

Similar Posts