ব্লুটুথ কি? ব্লুটুথের সুবিধা, অসুবিধা এবং ব্যবহার

ব্লুটুথ হলো তারবিহীন পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (PAN) যা স্বল্প দূরত্বে ডেটা আদান-প্রদানে ব্যবহৃত হয়। এটি ১-১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে ওয়্যারলেস যোগাযোগের একটি পদ্ধতি। ব্লুটুথ এর কার্যকরী পাল্লা হচ্ছে ১০ মিটার। তবে বিদ্যুৎ কোষের শক্তি বৃদ্ধি করে এর পাল্লা ১০০ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এর স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে IEEE 802.15.1

এটি PAN (Personal Area Network) এর ওয়্যারলেসভিত্তিক নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। এর মাধ্যমে স্বল্প দূরত্বের দুই বা ততোধিক মোবাইল এবং ফিক্সড ডিভাইসের মধ্যে একই সাথে ডেটা আদান-প্রদান করা যায়। ব্লু-টুথ 2.4 GHz ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে। সর্বপ্রথম ব্লুটুথ ১.০ এর তথ্য আদান প্রদান এর সর্বোচ্চ গতি ছিল সেকেন্ডে ১ মেগাবিট। এ যাবৎ ব্লুটুথের অনেক ভার্সন বাজারে বের হয়েছে। বর্তমানে ব্লটুথ ভার্সন ৪.০ বিদ্যমান।

বিভিন্ন ডিভাইসে USB পোর্টের মাধ্যমে ব্লু-টুথ সংযোগ দেওয়া যায়। বর্তমানে বিভিন্ন ডিভাইসগুলোর মধ্যে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, পিডিএ, মডেম ইত্যাদির সাথে এই টেকনোলজি বিল্ট ইন হিসেবে থাকে।

ব্লুটুথের গঠন ও কার্যপ্রণালী

 

ব্লুটুথ সিস্টেমের মৌলিক উপাদান হলো পিকোনেট। ব্লুটুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে নেটওয়ার্ক গঠন করা সম্ভব হয় তার নাম পিকোনেট। একটি পিকো-নেট এর আওতায় সর্বোচ্চ ৮ টি যন্ত্রের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। সাধারণত, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি ডিভাইসসমূহের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে এটি বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত। কিছু পিকোনেটের সমষ্টিকে বলা হয় স্কটারনেট। একটি পিকোনেটে একটি মুহূর্তে কেবলমাত্র একটি মাস্টার নোড এবং সর্বাপেক্ষা সাতটি দাস নোড থাকতে পারে।

একটি পিকোনেটে মোট 255 টি দাস নোড থাকলেও সক্রিয় থাকে মাত্র ৭ টি বাকিগুলো নিষ্ক্রিয় হিসেবে থাকবে। যখন দুটো পাশাপাশি পিকোনেট একটি সাধারণ দাস নোডের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়। তখন এই দাস নোডকে ব্রিজ বা সেতুবন্ধন বলা হয়ে থাকে এবং এই পিকোনেট দুইটিকে একসাথে স্কটারনেট নামে অভিহিত করা হয়। যেকোনো দাস নোড কেবলমাত্র মাস্টার নোডের সাথেই যোগাযোগ করতে পারে। প্রতি নোডে একটি ছোট অ্যান্টেনা থাকে যা ব্লুটুথের কার্যপ্রণালি 2.4GHz ব্যান্ডে সিগনাল আদান প্রদান করে থাকে। এখানে মাস্টার নোড বিভিন্ন দাস নোডকে বিভিন্ন টাইম স্লট বরাদ্দ করে এবং সেই মোতাবেক দাস নোডগুলো ডেটা পাঠায়।

ব্লুটুথের বৈশিষ্ট্য/সুবিধা

• স্বল্প দূরত্বে ব্যবহৃত ওপেন ওয়্যারলেস প্রটোকল।

• স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের (UHF-Ultra High Frequency) রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়।

• এটি PAN এর ওয়্যারলেস ভিত্তিক নেটওয়ার্ক অর্থাৎ WPAN

• এর ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড 2.4 GHz

• নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়া ১ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত।

• ব্লু-টুথ সাধারণত কনফিগার করতে হয় না।

• বিদ্যুৎ খরচ কম।

• ডিভাইসগুলোর মধ্যে কোনো বাঁধা থাকলেও যোগাযোগে কোন অসুবিধা হয় না।

• নেটওয়ার্ককে ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা যায়।

ব্লুটুথের অসূবিধাসমূহ
• ব্যন্ডউইডথ তুলনামূলক কম।
• নেটওয়ার্কের পরিসর কম যা দিয়ে ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়।
• ডেটা ট্রান্সফারে নিরাপত্তা কম।

ব্লুটুথের ব্যবহার

  • ফোনের সাথে হ্যান্ডস ফ্রি হেডসেটের সংযোগ ঘটিয়ে সাউন্ড বা ভয়েস ডেটা স্থানান্তর করা হয়।
  • ফোন থেকে কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
  • কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য ডিভাইসের সংযোগ ঘটানো যায় এবং তথ্য আদান প্রদান করা যায়।
  • পিসির ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস গুলোর সাথে তারবিহীন যোগাযোগে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
  • জিপএস রিসিভার, বারকোড স্ক্যানার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিভাইসগুলোতে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
  • ডেডিকেটেড টেলিহেলথ ডিভাইসগুলোতে হেলথ সেন্সর ডেটাগুলোর শর্ট রেঞ্জ ট্রান্সমিশনে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।
  • প্রায়ই ইনফ্রারেড ব্যবহৃত হয় এমন স্থানে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্লুটুথ ব্যবহার করা হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *