অন্যান্য

বিসিএস দিয়েছি চারবার, ভাইভা তিনবার

1 min read

চাকরির ভাইভা দিতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছেন বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার মো. শাহরিয়ার রহমান। তিনি বর্তমানে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। তাঁর মুখে ভাইভা বোর্ডে মুখোমুখি হওয়ার গল্প শুনেছেন জুবায়ের আহম্মেদ ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অনার্স এবং ২০১৫ সালে মাস্টার্স করি। বাবা সরকারি চাকরি করতেন, তাই আগে থেকেই সরকারি চাকরির প্রতি ঝোঁক ছিল। ক্যাম্পাসের সিনিয়রদের চাকরিপ্রাপ্তি ও চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতার কথা শুনে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই নিজেকে তৈরি করতে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমে থাকার সময় রাত জেগে সাধারণ জ্ঞান ও তথ্যভিত্তিক মাসিক পত্রিকা দেখতাম। প্রতিদিন বাংলা পত্রিকার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো মন দিয়ে পড়তাম। আমার মূল প্রস্তুতি শুরু হয় তৃতীয় বর্ষের শেষের দিকে।

তখন থেকেই মনে মনে ঠিক করি, ‘প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হব।’ সাধারণ জ্ঞান, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিজের বেসিকটা আরো পাকাপোক্ত করতে থাকি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিও টুকটাক পড়ার চেষ্টা করি। স্নাতক শেষ করার সময়ই ৩৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি পেয়ে যাই। অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করি। বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই প্রিলি পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু পাস করতে পারিনি। কিছুটা ভেঙে পড়ি, তবে থেমে যাওয়ার কোনো কারণ ছিল না! আবার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এর পর ধারাবাহিকভাবে ৩৫, ৩৬, ৩৭ বিসিএসের সর্বশেষ ধাপ অর্থাত্ ভাইভায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়, পাশাপাশি সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) নন-ক্যাডারের চাকরিগুলোতেও ভাইভা দিই।

৩৫ বিসিএসে নন-ক্যাডারে দ্বিতীয় শ্রেণির সুপারিশ পাই। পরে ৩৬তম বিসিএসের ভাইভায় সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের (২০১৮) সেপ্টেম্বরে রাজবাড়ী সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিই। ভাইভা দেওয়ার আগে অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে নিজেকে প্রস্তুত করি। যে কয়টা বিসিএসে অংশ নিয়েছি, সবগুলোতেই আমার সিরিয়াল ছিল অন্যান্য প্রার্থীর মাঝামাঝি অবস্থায়। বোর্ডে সাধারণত তিনজন থাকেন; কমিশনের একজন সদস্যের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ কিংবা বিশিষ্টজনও থাকেন। বোর্ডে ঢোকার সময়ই স্যাররা আমাকে টপ টু বটম দেখলেন এবং বসতে বললেন। শুরুতেই নিজের সম্পর্কে ইংরেজিতে বলতে বলা হলো; বললাম। আমার নিজ জেলার (রাজবাড়ী) ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

সেখানে মুক্তিযুদ্ধে কারা নেতৃত্বে ছিলেন, কবে আমার জেলা শত্রুমুক্ত হয়েছিল, সেখানকার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, আমার জেলার নামকরণের ইতিহাস জানতে চাওয়া হয়। নিজ জেলা-সংশ্লিষ্ট অনেক তথ্যই আমি আগে থেকেই আয়ত্ত করে রেখেছিলাম, তাই উত্তর দিতে বেগ পেতে হয়নি। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনাবলির বর্ণনা, বাংলা সাহিত্যে মৈমনসিংহ গীতিকার ভূমিকা কী, পড়াশোনার বাইরে কী কী করি এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কয়েকটি অর্জন নিয়েও বোর্ডে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জানতে চেয়েছেন, কেমন বাংলাদেশ চাই। বঙ্গবন্ধুর চেতনা কী? ২০ মিনিটের মতো ছিলাম বোর্ডে। অনার্স ও মাস্টার্সে পঠিত বিভিন্ন বিষয়ের খুঁটিনাটি এবং বিষয়গুলো থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান বাস্তবে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তার উত্তর চাওয়া হয়। উত্তরগুলো গুছিয়েই দিতে পেরেছি। নতুনদের জন্য বলব, ভাইভা বোর্ডে নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করা সবচেয়ে জরুরি। বাংলা ও ইংরেজিতে সমান দক্ষতা থাকা খুব ভালো দিক।

নিজের জেলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলার নাম ও ভৌগোলিক অবস্থান জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে নিজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পঠিত বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও সংবিধান ভালোভাবে জানা থাকতে হবে। চলমান আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও কূটনৈতিক বিষয়েও ভালো জানা থাকা দরকার।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x