২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য | ২১ শে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য
আসছালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আসা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা তোমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২ টি বক্তব্য শেয়ার করতেছি তোমাদের যেটি ভালো লাগে PDF সহ দেওয়া আছে দেখে দিবেন।
২১ শে ফেব্রুয়ারি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
একুশ আমার অধিকার আদায়ের স্বাধনা,
একুশ আমার প্রতিবাদী হওয়ার ঘোষণা,
একুশ আমার মায়ের ভাষা রক্ষার সূচনা,
একুশ আমার অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার উন্মাদনা।
অমর ২১ ফেব্রুয়ারি,
ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অমুক সংস্থা কতৃক আয়োজিত এখানে সংস্থার নাম হবে।
আলোচনা সভার শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি উনার ও পদবী হবে,মান্যবর প্রধান অতিথি উনার নাম ও পদবী হবে,অন্যান্য অতিথি থাকলে উনাদের নাম ও পদবী হবে। ও উপস্থিত সুধি আসছালামু আলাইকুম। বা যার যে ধর্মে এই মিনিং বলতে পারেন।
তারপর বলতে পারেন, ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক,সালাম,বরকত,সফিউর,জব্বাররা।তাদের রক্তে শৃংখলমুক্ত হয়েছিল দু:খিনী বর্ণমালা,মায়ের ভাষা।
বাঙ্গালি জাতিসত্বা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল,মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূরান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙ্গালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
শধু বাঙ্গালি নয়,বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা,স্বাধিকার,স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’।
একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্নত্যাগের মন্ত্র,বাঙ্গালিকে করেছে মহীয়ান।
জাতি হিসেবে আমরা আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারন করেছি।
মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে মহত্ত্বর স্বাধীনতার চেতনা। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙ্গালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল,শুধু বাংলাদেশ নয়,সারাবিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে।
বরাবরের মতোই এবার ও মধ্যরাতের অনেক আগে থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা শুরু হয় সর্বস্তরের বাঙ্গালির।
হাতে ফুল,রিদয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর ভালোবাসা আর কন্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’আমি কি ভূলিতে পারি’
অমর একুশের এই গান তুলে মানুষের সম্মিলিত স্রোত মেশে এক পথে।শহীদ মিনারের পুষ্পার্ঘ্য শেষে অনেকেই যান আজিমপুর কবরস্থানে, শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে।
জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা(ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮ টি দেশের সমর্থনে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০০০ সাল থেক্র বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।একুশের চেতনা আমাদের আত্নমর্যাদাশীল করেছে।দুর্জয় সাহস জুগিয়েছে।
‘একুশ মানে মাথা নত না করা’
চিরকালের এ স্লোগান আজও সমহিমায় ভাস্বর।
একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ,
যাবতীয় গোরামীর আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার।
২য় বক্তব্য নিচে থেকে শুরু
২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বক্তব্য
আজ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত আমন্ত্ৰিত অতিথিবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সুধীমন্ডলি সকলকে স্বাগতম।
উপস্থিত সকলকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ।
গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সকল বীর ভাষাশহিদকে; যাদের আত্মত্যাগের কারণে বাংলা ভাষা বিশ্বময় মর্যাদার আসনে আধিষ্টিত হয়েছে।
১৯৫২ সালে এই দিবসে সংঘটিত বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন।
মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানে গণ দাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ বপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়।
কিন্তু পাকিস্তানের দু’টি অংশ – পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য বিরাজ করছিল।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় ৷
কার্যতঃ পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং পাকিস্তানের এরকম একটি অবান্তর ঘোষণার জন্য মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেধে ওঠে।
আন্দোলন দমনে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ (অর্থাৎ ১৪৪ ধারা) অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন।
মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলন— কারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত-সহ আরও অনেকে।
শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে।
শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্ৰ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্ৰীয় সরকার শেষ—অবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং
১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।
২০০০ সালে ‘ইউনেস্কো’ ৫২’র ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারি- কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে৷
যা সারা বিশ্বজুড়ে সাংবার্ষিকভাবে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়।
১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়৷
এ দিন প্রত্যুষে সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করে এবং ভাষাশহিদের সম্মানে নির্মিত শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, এমন নজির বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে এতখানি আত্মত্যাগ বাঙ্গালি ছাড়া আর কোনো জাতিকে করতে হয়নি।
ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে দিয়েছে আপন সত্তা উন্মোচনের সুমহান মহিমা ও গৌরব।
অসাম্প্রদায়িক গণচেতনার বলিষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে এ দিনে। ভাষা শহিদের স্মৃতি রক্ষার লালিত প্রেমে দেশময় গড়ে উঠেছে শহিদ মিনার ।
একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষাকে মর্যাদায় আসীন করার বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম নয়, আত্মচেতনা সমৃদ্ধ জাতীয় জাগরণের উন্মেষ মুহূর্ত।
শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, কূপমন্ডুকতা ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে উদার মানসিকতার, খণ্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকারের এবং অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের চিরন্তন সংগ্রামের স্মারক হলো অমর একুশ।
একুশ মানে মাথা নত না করা; অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু রেখে প্রাণের দাবিকে ঘোষণা করাই হলো একুশের অঙ্গীকার।
বাঙ্গালির স্বাধিকারের সংগ্রাম ও বাঙালি চেতনার উন্মেষের ইতিহাসের সঙ্গে শহিদ দিবসের ইতিহাস সম্পৃক্ত।
তাই আমাদের জাতীয় জীবনে শহিদ দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে মূল প্রেরণা ও উদ্দীপনা, ভাষাগত জাতীয়তাবাদের যে অনুভাবনা তার সূচনা একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা থেকেই।
শহিদ দিবস বার বার আমাদের দিয়েছে সাহস ও সংগ্রামের দীক্ষা।
সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে একুশে ফেব্রুয়ারি অতি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয় চেতনার দিন।
এ দিন আমাদের বাঙালি সমাজের ঐতিহ্যগত আত্ম- পরিচয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন।
একুশে ফেব্রুয়ারির সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে লাখো শহিদের নাম, যাদের স্মৃতি ভাস্বর এবং অনন্তকালের পথপরিক্রমায় মৃত্যুহীন। উপমহাদেশের শত বছরের ইতিহাসে একুশের চেতনা অমর হয়ে থাকবে।
একুশ হোক জগতের সকল অনৈক্য, সংঘাত ও বিভেদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ হাতিয়ার, হোক সমুদ্রপথের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অন্ধকার রাতের আশার প্রদীপ, সঠিক পথের দিক নির্দেশক পাঞ্জেরী।
একুশের ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত রাখবো- এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
পরিশেষে কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ- রচিত “স্মৃতিস্তম্ভ” কবিতার কয়েকটি চরণ পাঠ করছি-
“স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?
ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো !
যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে”
– আলাউদ্দিন আল আজাদ