বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় নবম-দশম শ্রেণি ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন -১ :
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আমাদের ভাষা আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ-জাতি ভাষার জন্য এত আত্মত্যাগ করেনি। বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ফিরে পেতে বাঙালি যে মহান ত্যাগের ইতিহাস রচনা করেছে, তার স্বীকৃতি দিয়েছে সারা বিশ্ব৷ আর তাই ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।
ক. কয়েকজন ভাষা শহীদের নাম লেখ।
খ. কত সালে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে?
গ. ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত কীভাবে শুরু হয়? আলোচনা কর।
ঘ. স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই– ব্যাখ্যা কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কয়েকজন ভাষা শহীদ হলেন– সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর।
খ. ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।
গ. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সত্ত্বাকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়। যার প্রেক্ষিতে সূচিত হয় ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রভাষা কী হবে এ প্রশ্ন দেখা দিলে পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন ও শিক্ষিত জনগণ তাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার দাবি করে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৩৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিমলীগের দাপ্তরিক ভাষা উর্দু করার প্রস্তাব করলে বাঙালিদের নেতা এ. কে. এম. ফজলুল হক এর বিরোধিতা করেন। তাছাড়াও জিন্নাহ ঘোষণা করেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। এ ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পাকিস্তানের গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রস্তাব করলে লিয়াকত আলী খান এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভাষাকে সংখ্যাগুরু বাঙালির উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষার দাবিতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় ধর্মঘট ডাকা হলে অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব ও বঙ্গবন্ধুসহ অনেকেই জন গ্রেফতার হন।
এভাবে ভাষার জন্য আন্দোলন বন্ধ না হয়ে বরং আন্দোলনের পথ ধরে ঢাকায় গণপরিষদ অধিবেশনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
ঘ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে একথা যৌক্তিক।
বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ আদৌ নিছক কোনো ঘটনা নয়। এ স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছিল। যে কোনো আন্দোলনের পেছনে শক্তি ও সাহস জোগায় পূর্বাপর অন্যান্য আন্দোলন।
উদ্দীপকে বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চিত্র ফুটে উঠেছে। বাঙালিরা তাদের ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করেছিল। আর এ ভাষা আন্দোলন থেকে সেদিন বাঙালিরা সাহস ও শক্তি সঞ্চার করেছিল। ভাষা আন্দোলনের চেতনা বুকে লালন করে বীর বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তাদের মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য ১৯৭১ সালে অস্ত্র ধরেছিল। ভাষা আন্দোলনের সাহস যদি বাঙালিদের না থাকত তাহলে বাঙালিরা যত দ্রুত কৌশলে মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন করেছিল তা হয়তো সম্ভব ছিল না। প্রথম থেকেই বাঙালিরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু কোন পথ ধরে তারা সামনের দিকে অগ্রসর হবে তা নির্দিষ্ট করতে পারছিল না। অবশেষে ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে নিজ মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করে। ভাষা আন্দোলনের সাফল্য পরবর্তীতে বীর বাঙালিদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণা ও সাহস যুগিয়েছে।
তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায় যে, স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
নিজে অনুশীলন করো
সৃজনশীল প্রশ্ন-২ : প্রভাত ফেরি, প্রভাত ফেরি আমায় নিবে সঙ্গে বাংলা আমার বচন আমি জন্মেছি এই বঙ্গে। আগামীকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে রাতুল আবৃত্তি করবে। তার মা কবিতাটি শেখাচ্ছেন। রাতুলের আবৃত্তি শুনে বৃদ্ধ দাদু মোশারফ সাহেবের তাঁর ছাত্রজীবনের একটি আন্দোলনের কথা মনে পড়ে গেল। ফেব্রুয়ারি মাসের সেই দিনে ঢাকা শহরে ছাত্র-জনতা বিশাল মিছিল নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। শুরু হয় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ। সেই গোলাগুলিতে অনেকে শহিদ হন।
ক. ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় কবে?
খ. ‘তমদ্দুন মজলিশ’ সংগঠনটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মোশারফ সাহেবের মনে পড়া আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে উক্ত আন্দোলন সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে’– তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৩ : ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে গিয়ে পড়ে বাঙালিরা। শাসকগোষ্ঠী তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয় উর্দুকে। বাঙালি জাতি তাদের ভাষার দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে যে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায় তা তাদেরকে পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলনে ধাবিত করে।
ক. আইয়ুব খান কখন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বাঙালি জাতিকে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটাতেই শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছিল— ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ভাষাকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার আন্দোলনে ধাবিত করেছিল— বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৪ : নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদ প্রথার বিরুদ্ধে আজীবন বিদ্রোহ করে গেছেন। বর্ণবাদ প্রথার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ লোকজন নানা বৈষম্যের শিকার হতো। তাই তিনি বর্ণবাদ প্রথার উচ্ছেদের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিরেন। তিনি এ আন্দোলনের কারণে ২৮ বছর কারাবরণ করেছেন। তাই তিনি পৃথিবীর সকলের কাছে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ক. প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্ট সরকার কত দিন ক্ষমতায় ছিল?
খ. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. নেলসন ম্যান্ডেলার মতো পূর্ব বাংলার জনগণকে বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তার বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘তিনিও ম্যান্ডেলার মতো বাংলাদেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন” –উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন-৫ : মিনহাজ সাহেব রাজনৈতিক দলের একজন বড় নেতা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। তিনিসহ তার দলের অন্য নেতারা মনে করেন জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিলে তারা এবার সরকার গঠন করতে পারবেন। পাকিস্তান আমলে এরকম জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জোটবদ্ধ দলগুলো বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিল।
ক. যুক্তফ্রন্ট কয়টি দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাকিস্তান আমলের নির্বাচনে বিজয়ী জোটের কর্মসূচি কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার ওপর প্রাদেশিক সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করে- উদ্দীপকে উল্লিখিত জোট ও নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।