প্রিন্টার কি? What is Printer in Bengali/Bangla?

প্রিন্টার (Printer) হল একটি পেরিফেরাল ডিভাইস যা গ্রাফিক্স, ইমেজ এবং টেক্সট ডকুমেন্ট কাগজে প্রিন্ট করে। একে আউটপুট ডিভাইসও বলা হয়। অন্যান্য আউটপুট ডিভাইসের তুলনায় প্রিন্টার একটি ধীরগতি আউটপুট ব্যবস্থা। প্রিন্টারের মান কী রকম হবে তা নির্ভর করে প্রিন্টারের রেজুলেশনের উপর। বেশি রেজ্যুলেশনের প্রিন্টার নিখুঁতভাবে প্রিন্ট করে থাকে। প্রিন্টারের রেজ্যুলেশন পরিমাপক একক ডিপিআই (DPI)। DPI এর পূর্নরূপ হলো Dost Per Inch । প্রিন্টার একটি অফ লাইন ডিভাইস। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টার পাওয়া যায় যেগুলাের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

প্রিন্টারের প্রকারভেদ (Types of Printer)
প্রিন্টারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–

  1. ইমপ্যাক্ট বা ধাক্কা প্রিন্টার ও
  2. নন-ইমপ্যাক্ট অধাক্কা প্রিন্টার।

ইমপ্যাক্ট বা ধাক্কা প্রিন্টার (Impact Printer)

যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড যে কাগজে ছাপা হয় তাকে স্পর্শ করে, তাকে ইমপেক্ট প্রিন্টার বলা হয়। এটি একটি ধীরগতি সম্পন্ন প্রিন্টার। ধাক্কা প্রিন্টার দিয়ে টাইপরাইটারের মতাে কাগজের উপর চাপ দিয়ে লেখা হয়। এই প্রিন্টারের রেজ্যুলেশন কম। প্রিন্টের সময় বিরক্তিকর শব্দ হয়। ধাক্কা প্রিন্টার দুই ধরনের হয়। যথা–

  1. লাইন প্রিন্টার (Line Printer)
  2. সিরিয়াল প্রিন্টার (Serial Printer)

১. লাইন প্রিন্টার (Line Printer)
লাইন প্রিন্টারে প্রতিবারে একটি সম্পূর্ণ লাইন ছাপা হয়। এটি ধাক্কা প্রিন্টারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির। লাইন প্রিন্টার প্রতি মিনিটে ২০০ থেকে ৩০০০ লাইন ছাপতে পারে। লাইন প্রিন্টারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – চেইন প্রিন্টার (Chain Printer) এবং ড্রাম প্রিন্টার (Drum Printer)।
২. সিরিয়াল প্রিন্টার (Serial Printer) বা বর্ণ প্রিন্টার (Character Printer)
সিরিয়াল প্রিন্টারে টাইপ রাইটারের মতাে একবারে মাত্র একটি বর্ণ ছাপা হয়। একে বর্ণ প্রিন্টার ও (Character Printer) বলে। এগুলাে ধীরগতি সম্পন্ন। এ সকল প্রিন্টারের দাম কম কিন্তু এটি এক নাগাড়ে ঘণ্টাখানেকের বেশিক্ষণ কাজ করতে পারে না, উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। সিরিয়াল প্রিন্টারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা–

  1. ডট ম্যাট্রিক্স (Dot Matrix) ও
  2. ডেইজি হুইল (Daisy Wheel)

ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার (Dot Matrix Printer)
ডট ম্যাটিক্স প্রিন্টার একটি জনপ্রিয় প্রিন্টার। তবে এর গতি অন্যান্য প্রিন্টারের তুলনায় কম। আয়তাকারে সাজানাে কতকগুলাে বিন্দুকে ডট ম্যাট্রিক্স বলে। যেমন; বিন্দুগুলাে ৮টি সারি এবং ১২টি স্তম্ভে সাজানাে থাকলে তাকে বলে ৮ x ১২ ডট ম্যাট্রিক্স। এই বিন্দুগুলাের মধ্যে কিছু বিন্দু নির্বাচন করে যেকোন বর্ণ ফুটিয়ে তােলা যায়।
ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে লেখার জন্য ছােট পিনে গ্রিড ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলাে পিনের মাথা রিবনের উপর আঘাত করে কাগজের উপর বিন্দু বসিয়ে অক্ষর তৈরি করা হয়। সাধারণত এ প্রিন্টারে ৭, ৯ অথবা ২৪টি পিন থাকে, যেগুলাে লাইন বরাবর চলাচল করে বিন্দুর মাধ্যমে অক্ষর তৈরি করে। এ প্রিন্টারে ছাপা অক্ষর, প্রতীক বা ছবি সূক্ষ্ম হয় না। এ ধরনের প্রিন্টার বেশ ধীরগতিসম্পন্ন হয়। এর গতি পরিমাপক একক cps। cps এর পূর্ণরূপ হলো characters per second.

ডেইজি হুইল (Daisy Wheel Printer) 

ডেইজি হুইল প্রিন্টার হলাে এক ধরনের কোয়ালিটি প্রিন্টার। এ প্রিন্টারে একটি চ্যাপ্টা চাকার সঙ্গে সাইকেলের স্পোকের মতাে অনেকগুলাে স্পোক (Spoke) লাগানাে থাকে। প্রতিটি স্পােকের মাথায় একটি বর্ণ এমবস করা থাকে। এ চাকা বাম থেকে ডানদিকে বা ডান থেকে বামদিকে সরতে পারে আবার ঘুরতে পারে। চাকা ও কাগজের মাঝখানে কালির রিবন থাকে। কোন বর্ণ ছাপাতে ডেইজি হুইল এমন জায়গায় সরে যায় যাতে সবচেয়ে উপরের স্পােক কাগজের যেখানে ছাপাতে হবে সেখানে থাকে। এবার চাকা ঘুরে বর্ণ ছাপাতে হলে স্পােক সবচেয়ে উপরে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে একটি হ্যামার এ স্পােকের মাথায় আঘাত করে ফলে কাগজে ঐ বর্ণ ছাপা হয়ে যায়। স্পােকগুলােসহ চাকাকে একটি ডেইজি ফুলের মতাে দেখতে বলে এর এই নাম।

অধাক্কা বা নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer)

অধাক্কা প্রিন্টারে চাপ না দিয়ে উত্তাপ দিয়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে কাগজে লেখা হয়। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কয়েক ধরনের অধাক্কা প্রিন্টার হলো–

  1. ইঙ্ক জেট প্রিন্টার (Ink jet Printer)
  2. লেজার প্রিন্টার (Laser Printer)
  3. থার্মাল প্রিন্টার (Thermal Printer)
  4. স্থির বিদ্যুৎ প্রিন্টার (Electrostatic Printer)

১. ইঙ্ক জেট প্রিন্টার (Ink jet Printer) : ইঙ্ক জেট প্রিন্টারে কতকগুলাে সূক্ষ্ম সূচিমুখ (Nozzle) থেকে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত কালি বেরিয়ে এসে কাগজের দিকে ছুটে যায়। একটি তড়িৎক্ষেত্র এ চার্জযুক্ত কালির সূক্ষ্ম কণাগুলােকে ঠিকমতাে সাজিয়ে দিয়ে কাগজের উপর কোন বর্ণকে ফুটিয়ে তােলে। স্বল্পদামী প্রিন্টার হিসেবে ইঙ্কজেট প্রিন্টার জনপ্রিয়। সাধারণত বাসাবাড়িতে ইঙ্কজেট প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। ক্যানন বাবলজেট, এইচপি ডেস্কজেট, এপসন স্টাইলাস ইত্যাদি প্রিন্টারসমূহ ইঙ্কজেট প্রিন্টার।

২. লেজার প্রিন্টার (Laser Printer) : লেজার প্রিন্টারে লেজার রশ্মির সাহায্যে কাগজে লেখা ফুটিয়ে তােলা হয়। এর দ্রতিও অনেক বেশি (10000 lpm)। উন্নত মডেলের লেজার প্রিন্টারে প্রতি মিনিটে ২৫০ পৃষ্ঠা এবং ৩০০ থেকে ১২০০ রেজুলেশনে প্রিন্ট করা যায়। সাধারণত ডেক্সটপ পাবলিশিংয়ের কাজে লেজার প্রিন্টার ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। লেজার প্রিন্টারের ছাঁপা খুবই উন্নতমানের। লেজার প্রিন্টারে মুদ্রণের জন্য লেজার রশ্মি বা আলােক রশ্মি একটি আলােক সংবেদনশীল ড্রামের উপর মুদ্রণযােগ্য বিষয়ের ছাপা তৈরি করে। তখন লেজার রশ্মির প্রক্ষেপিত অংশ টোনার থেকে গুঁড়াে কালি আকর্ষণ করে। এর পর ড্রাম সেই টোনারকে কাগজে স্থানান্তরিত করে। কাগজের উপর পতিত টোনার উচ্চ তাপে গলে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসে যায়। এভাবেই লেজার প্রিন্টারে মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন হয়।

৩. থার্মাল প্রিন্টার (Thermal Printer) : এর প্রিন্টহেড অনেকটা ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের মতো, তবে পিনের বদলে থাকে কতকগুলাে বৈদ্যুতিক রোধকের বিন্দু। ছাপার কাগজে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ লাগানাে থাকে। কোন বর্ণ ছাপাতে হলে তার অনুরুপ বিন্দু রােধকগুলাের তাড়প্রবাহ দ্বারা উত্তপ্ত করা হয়, এতেই কাগজে সেই বর্ণের ছাপ উঠে যায়। এ ছাপানাের গতি 500 LPM.

৪. স্থির বিদ্যুৎ প্রিন্টার (Electrostatic Printer) : এখানে কতকগুলাে বৈদ্যুতিক নিব থাকে যাকে বলে স্টাইলাস। এর দ্বারা লেখা হয়। বিশেষ ধরনের কাগজে এই নিব দ্বারা কোন বর্ণের ডট ম্যাট্রিক্স উৎপন্ন করা হয়, তবে এই ডটগুলাে হয় বৈদ্যুতিক চার্জের। এবার এই কগজকে বিপরীত চার্জযুক্ত রঙের গুড়ার মধ্যদিয়ে নিয়ে গেলে স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণের জন্য রঙের গুড়া প্রত্যেক ডটে আটকে যায়। ফলে ডট ম্যাট্রিক্সের বর্ণটি ছাপা হয়ে যায়। এই প্রিন্টারে ছাপার মান ভালাে হয়। এটিও একটি দ্রুত গতিশীল প্রিন্টার।

প্রিন্টারের ব্যবহার (Use of Printer)

নিম্নে প্রিন্টারের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো–

  • ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল চিঠিপত্র, বড়সড় ডকুমেন্টের স্বল্পসংখ্যক কপি তৈরি করার জন্য প্রিন্টার অত্যন্ত উপযোগী।
  • কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রিন্টারের সাহায্যে অতি ক্ষুদ্র মাপের কাগজ থেকে বিশাল আকারের ম্যাপ ছাপানোর মতো কাজ করা যায়।
  • দ্রুতগতিতে অল্প সময়ে একই ডকুমেন্টের বহু কপি তৈরি করা যায়।
  • রঙিন বিষয়কে মুদ্রণ করা সম্ভব।
  • প্রি-প্রেস উপকরণ হিসাবে ট্রেসিং পেপারে ডকুমেন্টকে মুদ্রিত করে তা ব্যাপক মুদ্রণের জন্য প্রিন্টিং প্রেসের উপযোগী করা যায়।
  • কম্পোজ করার পর সহজেই ডকুমেন্টের প্রুফ দেখার উপযোগী প্রুফ শিট বের করা যায়।
  • কম্পিউটারের সাহায্যে গ্রাফিক ডিজাইন, জটিল ম্যাপ অতি সহজে নিখুঁতভাবে করা যায়। পুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে বইয়ের ভেতরে অলংকরণ সহজেই করা যায়। আর এ জাতীয় ডকুমেন্ট সহজে ছাপানোও যায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রিন্টারের সাহায্যে।

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *