রৈখিক ভরবেগের নিত্যতা সূত্র কি? Conservation of linear momentum in Bengali

রৈখিক ভরবেগের নিত্যতা কি বা কাকে বলে (What is conservation of linear momentum in Bengali/Bangla?)

রৈখিক ভরবেগের নিত্যতার নীতি পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিউটনের গতিসূত্র থেকে এই নীতি পাওয়া যায়। কতগুলি বস্তু পরস্পরের উপর বল (ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া) প্রয়োগ করতে পারে এবং তার প্রভাবে সচল হতে পারে, কিন্তু বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ না করলে তাদের মোট ভরবেগ সবসময় অপরিবর্তিত থাকে।

তোমরা লক্ষ্য করে থাকবে চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় কোনো লোক চেয়ারের উপর বল প্রয়োগ করে চেয়ারটি তুলতে পারে না। এর কারণ কী ব্যাখ্যা করতে পারবে? চেয়ার ও লোকটি স্থির বলে এদের মোট ভরবেগ শূন্য। এখন লোকটি চেয়ারকে তুলতে চেষ্টা করলে অর্থাৎ চেয়ারের উপর উপরের দিকে বল প্রয়োগ করলে চেয়ারটি লোকটির উপর নিচের দিকে সমান প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করবে।

কিন্তু এই বল দুটিই হলো চেয়ার ও লোকটির মধ্যে ক্রিয়াকৃত বল, যেহেতু বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ হচ্ছে না। তাই চেয়ার ও লোকটির মোট ভরবেগ শূন্যই থাকবে। ফলে চেয়ার উপরে উঠবে না। একইভাবে চেয়ারে বসে থাকা কোনো ব্যক্তি হাত দিয়ে উপরের দিকে চুল টেনে নিজেকে উপরের দিকে তুলতে পারবে না। আবার গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীরা যদি গাড়ির মধ্যে থেকে গাড়িকে ঠেলতে থাকে তাহলেও গাড়ি চলবে না। এই সকল প্রশ্নের উত্তর রৈখিক ভরবেগের নিত্যতার সূত্র বা সংরক্ষণ নীতি থেকে পাওয়া যায়।

নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র থেকে আমরা ভরবেগের নিত্যতার সূত্র সম্পর্কে জানতে পারি। ভরবেগের নিত্যতার সূত্র ছোট-বড় পার্থিব বা মহাজাগতিক সব বস্তুর ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। নিউটনের গতির প্রথম সূত্র থেকে আমরা জানি কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত নিট বল যদি শূন্য হয়, তাহলে চলমান একটি বস্তু সরল পথে সমদ্ৰুতিতে চলতে থাকে অর্থাৎ এর বেগ ধ্রুব থাকে। সময়ের সাপেক্ষে বেগ v ধ্রুব থাকলে ভরবেগ p = mv ও সময়ের সাপেক্ষ ধ্রুব থাকে। অন্য কথায় বলা যায় কোনো বস্তুর উপর বাহ্যিক বল ক্রিয়া না করলে বা নিট বল শূন্য হলে মোট ভরবেগ ধ্রুব থাকে। ইহাই রৈখিকবেগের নিত্যতার নীতি বা সংরক্ষণ নীতি।

রৈখিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতি : একাধিক বস্তুর উপর বাহ্যিক বল ক্রিয়া না করলে বা প্রযুক্ত নিট বাহ্যিক বল শূন্য হলে ঐ সকল বস্তুর মোট রৈখিক ভরবেগ ধ্রুব থাকে বা ভরবেগের কোনো পরিবর্তন হয় না।

নিচের উদাহরণগুলো লক্ষ্য কর এবং কীভাবে রৈখিক ভরবেগের নিত্যতার সূত্র কার্যকর হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।

উদাহরণ-১ : কামান থেকে গোলা ছুঁড়লে গোলাটি প্রচণ্ড বেগে সামনে ছুটে যায়। গুলি ছোড়ার পূর্বে কামান ও গুলি স্থির ছিল ফলে ভরবেগ শূন্য ছিল। কিন্তু গুলি ছোড়ার পর গোলাটি একটি ভরবেগ প্রাপ্ত হয়। কামানটি গোলার ভরবেগের সমান কিন্তু বিপরীতমুখী একটি ভরবেগ লাভ করে। এই কারণেই কামানটি পেছন দিকে গতিপ্রাপ্ত হয় অর্থাৎ পিছু হটে।

উদাহরণ-২ : আরোহী নৌকা থেকে লাফিয়ে নামলে নৌকাটি পিছিয়ে যায়। লাফ দেবার আগে নৌকা ও আরোহী স্থির ছিল বলে ওদের মোট ভরবেগ শূন্য ছিল। সামনে লাফ দেওয়ায় আরোহী সচল হয়ে ভরবেগ লাভ করে। ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র অনুযায়ী মোট ভরবেগ শূন্য থাকে। তাই নৌকাটিতে সমান ও বিপরীতমুখী ভরবেগ সৃষ্টি হয়। ফলে নৌকাটি সচল হয়ে পিছিয়ে যায়।

উদাহরণ-৩ : জ্বালানি দহনের ফলে উৎপন্ন গ্যাস তীব্রবেগে পেছনের দিকে বেরিয়ে যায় বলে রকেট বা জেট প্লেন সমান ভরবেগ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *