পড়াশোনা

পলিমার কি? পলিমারের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা।

1 min read

What is Polymer?

দুটি গ্রিক ‘পলি’ (poly) এবং ‘মেরস’ (meros) থেকে ‘পলিমার’ শব্দটি উৎপন্ন। ‘পলি’ শব্দের অর্থ বহু (many) এবং ‘মেরস’ শব্দের অর্থ অংশ বা খণ্ড (parts)। সুতরাং পলিমার হলো বহু অংশ বা খণ্ডবিশিষ্ট অণু। অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু রাসায়নিকভাবে পরপর যুক্ত হয়ে যে দীর্ঘ শৃঙ্খল বিশিষ্ট বৃহদাকার অণু গঠন করে (যাদের আণবিক ভর 10,000 থেকে কয়েক লক্ষ হতে পারে) তাদেরকে পলিমার অণু বলে। যে ক্ষুদ্র অণু থেকে পলিমার অণু গঠিত হয়, তাদের প্রত্যেকটিকে মনোমার অণু বলে। তবে পলিমারকে macromolecule বা দানবীয় অণুও বলা হয়। পলিমার তৈরির প্রক্রিয়াকে পলিমারকরণ বা পলিমারাইজেশন বলা হয়।

প্লাস্টিক, রবার ও তন্তু এই তিন প্রকার পদার্থই পলিমার পদার্থ। পলিমার অণু থেকে পলিমার পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই অণুগুলি মূলত CHO ও N দিয়ে গঠিত। তবে কতকগুলি বিশেষ পলিমার আছে যেগুলিতে PClF প্রভৃতি মৌল বর্তমান। পলিমার অণুগুলি দীর্ঘ শৃঙ্খল এবং উচ্চ আণবিক ভর বিশিষ্ট হয়। পলিমার অণুতে উপস্থিত যে ক্ষুদ্রতম অংশটি পুনরাবৃত্ত হয়ে সমগ্র পলিমার শৃঙ্খল গঠন করে, তাকে ঐ পলিমারের পুনরাবৃত্তি একক বলে। যেমন- পলিইথিলিন অণু।

পলিমারের প্রকারভেদ
১. আণবিক ভর অনুযায়ী: টার পলিমার (খুবই কম আণবিক ভর বিশিষ্ট), অলিগোপলিমার (কম আণবিক ভর বিশিষ্ট), হাই পলিমার (উচ্চ আণবিক ভর বিশিষ্ট), আল্ট্রা পলিমার (অতি উচ্চ আণবিক ভর বিশিষ্ট)।

২. উৎস অনুযায়ী: প্রাকৃতিক পলিমার (রাবার, প্রোটিন, স্টার্চ, সেলুলোজ,নিউক্লিক এসিডসমূহ), কৃত্রিম পলিমার (পলিথিন, নাইলন, PVC, টেফলন), অর্ধকৃত্রিম পলিমার (সেলুলোজ নাইট্রেট, সেলুলোজ অ্যাসিটেট, হাইড্রোজেনেটেড রাবার)।
৩. গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী: যুত পলিমার (পলিথিন, পিভিসি, টেফলন, পলি প্রোপিন, পলিস্টাইরিন), ঘনীভবন পলিমার (নাইলন, ব্যাকেলাইট, ফরমিকা, মেলামাইন ও পলিএস্টার)।
৪. প্রয়োগের দিক অনুযায়ী: রাবার (প্রাকৃতিক রাবার, পলিক্লোরোপিন রাবার), প্লাস্টিক (পলিথিন, ব্যাকেলাইট, মেলামাইন, ফরমিকা, পিভিসি) তন্তু (পশম, রেশম, তুলা, নাইলন), তরল রেজিন (ফেভিকল, মোভিকল)।
৫. তাপের প্রভাব অনুযায়ী: থার্মোপ্লাস্টিক, (পলিথিন), থার্মোসেটিং (ব্যাকেলাইট)।

থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার : যেসব পলিমার তাপের প্রভাবে নমনীয় হয় কিন্তু তাপ অপসারণে পুণরায় কঠিন অবস্থায় পরিণত হয় এবং এই পদ্ধতি যদি পলিমারের ধর্ম অক্ষুন্ন রেখে বারবার সম্পন্ন করা যায়, তাদের থার্মোপ্লাস্টিক পলিমার বলে। যেমন- পলিথিন, পিভিসি পলিস্টাইরিন, পলিপ্রোপিন।
থার্মোসেটিং পলিমার : যেসব পলিমার তাপ প্রয়োগে নমনীয় হয় এবং তাপ অপসারণে পুনরায় কঠিনে পরিণত হয়, কিন্তু দ্বিতীয়বার তাপ প্রয়োগে আর নমনীয় করা যায় না, তাদের থার্মোসেটিং পলিমার বলে। যেমন- ফেনল-ফরমালডিহাইড রেজিন, ইপোক্সিরেজিন, অসম্পৃক্ত পলিএস্টার।

পলিমারের বৈশিষ্ট্য
পলিমারের বৈশিষ্ট্য নিচে দেয়া হলো–

১. পলিমারের ঘনত্ব ধাতব পদার্থের তুলনায় অনেক কম। তাই পলিমারের তৈরি দ্রব্য হালকা হয়।
২. এরা তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী।
৩. সাধারণত পানিতে অদ্রবণীয় কিন্তু জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয়।
৪. এরা বর্ণহীন, স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ হতে পারে।
৫. এদের সুনির্দিষ্ট কোনো গলনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক থাকে না।
৬. পলিমারের গলনাঙ্ক ধাতু বা সিরামিকের তুলনায় অনেক কম। পলিমারের গলনাঙ্ক সাধারণত 100°C – 300°C এর মধ্যে হয়ে থাকে। অল্প তাপশক্তি খরচ করে পণ্য উৎপাদন করা যায়।
৭. পলিমার দ্রবণের সান্দ্রতা উচ্চমানের হয়ে থাকে।

পলিমার ব্যবহারের সুবিধা

  • পলিমার সহজেই ব্যবহার করা যায় কারণ এর ঘনত্ব কম।
  • ক্ষয় রোধে কার্যকর।
  • পলিমার রঙিন যৌগ হিসেবে তৈরি করা যায়।
  • এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
  • পলিমারের ভঙ্গুরতা কম।
এখানে যা শিখলাম–
পলিমার কি?; পলিমার অর্থ কি?; পলিমার কোন শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে?
2.9/5 - (38 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x