তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ

আমাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত । এই নামাজটি ফরজ নামাজ নয়, একটি নফল নামাজ । তবে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত পড়ার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করেছেন ।

তাহাজ্জুদ নামাজের কিছু ফজিলত:

  1. আল্লাহর নৈকট্য লাভ: তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। কারণ, রাতের শেষভাগে একাকীভাবে আল্লাহর সাথে মুখোমুখি হয়ে নামাজ পড়ার মাধ্যমে বান্দা তার প্রভুর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ করে।
  2. পাপের মাফ: তাহাজ্জুদ নামাজ পাপের মাফের মাধ্যম। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি রমজান মাস ছাড়াও নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, তার পূর্ববর্তী পাপগুলো মাফ হয়ে যায়।” (ইবন মাজাহ)
  3. দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি: তাহাজ্জুদ নামাজ দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির মাধ্যম। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি দুঃখ-কষ্টের সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেন।” (তিরমিযি)
  4. আত্মশক্তি বৃদ্ধি: তাহাজ্জুদ নামাজ আত্মশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যম। রাতের শেষভাগে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ার মাধ্যমে মানুষ তার ইচ্ছাশক্তিকে শক্তিশালী করতে পারে এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারে।
  5. আখেরাতের সাফল্য: তাহাজ্জুদ নামাজ আখেরাতের সাফল্যের মাধ্যম। হাদিসে এসেছে, “তাহাজ্জুদ নামাজীরা আখেরাতে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে স্থান পাবে।” (মুসলিম)

তাহাজ্জুদ নামাজ‌ কি?

তাহাজ্জুদ (تهجد‎‎) শব্দের অর্থ ঘুম থেকে জাগা। তাহাজ্জুদ নামাজ‌ বা রাতের নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত, ফরয নামাজের পর অন্যান্য সুন্নাত ও নফল সব নামাযের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সবচেয়ে বেশী।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নি। তবে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য এটা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ এ নামাজ আদায় করলে অশেষ পুণ্য লাভ করা যায়, কিন্তু আদায় করতে না পারলে কোনো গুনাহ হবে না।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ নিম্নে দেওয়া হলঃ-

বাংলা উচ্চারণঃ“নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।”

অর্থঃ“আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কেবলার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকআত সুন্নাত নামাজের নিয়ত করিলাম। আল্লাহু আকবার।”

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। তবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাআত

তাহাজ্জুদের নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওযা যায়। অর্থাৎ, সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত পড়া যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদের নামাজের কোনো কাজা নেই।

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়ম

এখানে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ে জানব ইনশাআল্লাহ।

প্রিয়নবি (সাঃ) প্রতিবার দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করা উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ

– তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।

– অতঃপর ছানা পড়া।

– সুরা ফাতেহা পড়া।

– অন্য সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা উত্তম।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।’

তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষভাগে, ইশার নামাজের পর এবং ফজরের নামাজের আগে যেকোনো সময় পড়া যায়। তবে, সর্বোত্তম সময় হলো শেষ রাতের তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ, মধ্যরাত। নামাজের রাকাত সংখ্যা ২ থেকে ৮ রাকাত পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত, ২ রাকাত নফল নামাজ পড়া হয়। নামাজের নিয়ম সাধারণ নামাজের মতোই। তবে, তাহাজ্জুদ নামাজে দীর্ঘ তিলাওয়াত এবং রুকু ও সিজদায় বেশি সময় অতিবাহিত করা হয় ।

উপসংহার:

তাহাজ্জুদ নামাজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, পাপের মাফ লাভ করা, দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া, আত্মশক্তি বৃদ্ধি করা এবং আখেরাতে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব ।

আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া। আরবি, বাংলা উচ্চারণসহ অর্থ।” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *