ষোড়শ শতাব্দী ছিল নবজাগরণ, সংস্কার, সংশয় ও সন্দেহের যুগ এবং মহামতি আকবর ছিলেন এরূপ মনোভাবের মূর্ত প্রতীক।
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, আকবর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন এবং অনেকে মনে করেন তিনি মুসলমানই ছিলেন। তবে নিরপক্ষে দৃষ্টিতে বিচার করলে আকবরের ধর্মমত সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়াস পাব।
আকবরের ধর্মনীতি প্রবর্তনের কারণ : আকবর তার সময়ে একটি নতুন ধর্মমত চালু করেছিলেন। তবে এর পিছনে কিছু কারণ ছিল।
নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :
১. যুগ ধর্মের প্রভাব : যুগের ধারা ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব আকবরের ধর্মমতকে প্রভাবান্বিত করেছিল। ষোড়শ শতাব্দী ছিল। জ্ঞান অন্বেষণ ও অনুসন্ধিৎসার যুগ এবং আকবর ছিলেন যে যুগেরই একজন প্রতিনিধি। তাই সেই প্রভাবে তিনি নতুন ধর্মনীতি চালু করেন ।
২. গৃহশিক্ষকের প্রভাব : আকবরের গৃহশিক্ষক আব্দুল লতিফ ছিলেন উদার মতাবলম্বী। তার সুলহ-ই-কুল নীতি আকবরের ধর্মীয় আদর্শ গড়ে তোলে। ফলে একটি উদারনৈতিক ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পান।
৩. পারিবারিক প্রভাব : মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাটগণ কেউই গোড়া মুসলমান ছিলেন না। বিশেষ করে তার পিতা হুমায়ূন ও পিতামহ বাবরের পরধর্মসহিষ্ণুতা সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। আর তাইতো তিনি একটি নতুন ধর্মনীতি চালু করেন।
৪. হিন্দু পত্নীদের প্রভাব : স্বীয় অন্তঃপুরে হিন্দু রমনীদের প্রভাব আকবরকে একটি নতুন ধর্ম প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করে। হিন্দুদের ধর্ম সংস্কার আন্দোলন আকবরকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে ।
৫. সুফিদের প্রভাব : ছোটবেলা থেকেই আকবর সুফিদের সংস্পর্শে থেকে বড় হয়ে উঠেছিলেন। বস্তুত আকবর বিভিন্ন পরিবেশের মাধ্যমে থেকে ধর্মকে উপলব্ধি করেন।
৬. আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা : আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা আকবরের একটি নতুন ধর্মনীতি চালুর প্রয়াস সৃষ্টি করেন। ঐতিহাসিক বদাউনি বলেন, “আকবর প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মাথা বুকে রেখে ধ্যান মগ্ন থাকতেন।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করে শাসন ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তবে তার ধর্মীয় সংস্কার ছিল সর্বাপেক্ষা চাঞ্চল্যকর।
১৫৮২ সালে তিনি “দ্বীন-ই-ইলাহী” নামে নতুন ধর্মমত চালু করেন এবং ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার এ ধর্মনীতি স্থায়ী হয়নি ৷
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “সম্রাট আকবরের ধর্মনীতি প্রবর্তনের কারণ কি | কোন কারণের প্রেক্ষিতে আকবর ধর্মনীতি প্রবর্তন করেছিলেন?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।