দ্বীন ই ইলাহী কি। দ্বীন ই ইলাহী বলতে কী বুঝো ।  দ্বীন-ই-ইলাহীর নীতিমালা

দ্বীন-ই-ইলাহী সম্বন্ধে কি জান? 

অথবা, আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহী সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ ৷

অথবা, দ্বীন-ই-ইলাহী-এর উপর একটি টীকা লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : আকবরের ধর্মমত ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আকবর ছোটবেলা থেকেই উদারতার শিক্ষা লাভ করেছেন। আর তাই ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বাড়াবাড়ি থেকে তার মধ্যে ধর্মীয় পরিবর্তন আসে।

তারই ফসল হলো দ্বীন-ই-ইলাহী। তার এ নীতিমালার মাধ্যমে সাম্রাজ্যকে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলেন এবং ধর্মমত নির্বিশেষে সবাইকে এক নীতিতে আনার প্রয়াস পান ।

 দ্বীন-ই-ইলাহী : মুঘল সম্রাট আকবর একজন পরধর্ম সহিষ্ণু ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সকল ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন। দ্বীন-ই-ইলাহী হলো সম্রাট আকবর প্রবর্তিত একটা জাতীয় ধর্মমত।

আকবর সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয়দের একই রাজনৈতিক মঞ্চে একীভূত করার লক্ষ্যে যে নতুন ধর্মীয় অনুশাসন চালু করেন তাই হলো দ্বীন-ই-ইলাহী।

দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন : সম্রাট আকবর সকল জ্ঞানী ধর্মীয় ব্যক্তিদের আলোচনার মাধ্যমে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। শেষে ১৫৮২ সালে তিনি উচ্চপর্যায়ের জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শে দ্বীন- ই-ইলাহী নামের ধর্মমতটি ঘোষণা করেন। এতে উৎকৃষ্ট নীতিমালাগুলো যুক্ত ছিল। এ ধর্মের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮ জন।

 দ্বীন-ই-ইলাহীর নীতিমালা : এ নতুন ধর্মের নীতিমালাগুলো ছিল নিম্নরূপ-

১. এ ধর্মে সম্রাটের প্রতি সেজদা দেওয়ার রীতি প্রবর্তন করা হয় ।

২. কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সালামের পরিবর্তে বলবে, আল্লাহু আকবার’ এবং উত্তরে বলবে “জাল্লেজাল্লালুহু”।

৩. এ ধর্মের অনুসারীরা সকল ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।

৪. ১২ বছর বয়সের পূর্বে খাৎনা নিষিদ্ধ করা হয়।

৫. এ ধর্মের লোকেরা মৃত্যুর পূর্বেই তাদের মৃত্যু ভোজ করে যাবে।

৬. সদস্যদেরকে জন্মবার্ষিকী পালন করতে হবে।

৭. এ মতের অনুসারীরা ভিক্ষা দিলেও ভিক্ষা গ্রহণ করবে না ।

৮. গোমাংস, পেয়াজ ও রসুন ভক্ষণ নিষিদ্ধ ।

৯. এ ধর্মের অনুসারীরা সম্রাটের নামে জীবন, সম্পদ ও সম্মান উৎসর্গ করবে।

১০. এরা আগুনকে পবিত্র মনে করবে।

→ দ্বীন-ই-ইলাহীর ফলাফল : সম্রাট আকবর যে নতুন ধর্ম প্রচার করেছিলেন তা সাময়িক সময়ের জন্য খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভে তিনি এক বিশাল সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হয়েছিলেন। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তার মৃত্যুর সাথে সাথে এ ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যায় ৷

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সকল ধর্মের লোকদের ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করার লক্ষ্যে আকবর এ নতুন ধর্ম চালু করেছিলেন। সম্রাট আকবর দ্বীন-ই-ইলাহীর মাধ্যমে তার রাজ্যে এক ধর্মমত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।

তবে এ ধর্ম প্রবর্তন করায় । মুসলমানদের মধ্যে এক দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তাই ভি.এ. স্মিথ বলেছেন যে, “আকবরের এ ধর্ম জ্ঞানের নয় বরং নিবুদ্ধিতার প্রমাণ।” [Ref. Oxford History of India ]

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “দ্বীন ই ইলাহী কি। দ্বীন ই ইলাহী বলতে কী বুঝো ।  দ্বীন-ই-ইলাহীর নীতিমালা” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

Similar Posts