সমাজবিজ্ঞান

মদিনা সনদ কি | মদিনা সনদ কাকে বলে | মদিনা সনদ বলতে কি বুঝায়

1 min read
বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) মদিনা এসে ইসলামি রাষ্ট্রগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি প্রথমেই অনুধাবন করেছিলেন যে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বাস সেখানে সকল সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ও সমর্থন না পেলে ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল হয়ে পড়বে।
তাই দৃঢ় ভিতের উপর ইসলামি রাষ্ট্রগঠন এবং চিরাচরিত গোত্রীয় পার্থক্য তুলে দিয়ে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তিনি মদিনা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের মুসলমান, ইহুদি ও পৌত্তলিকদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংবিধান রচনা করেন, যা “মদিনা সনদ” নামে পরিচিত।
দুনিয়ার ইতিহাসে এটাই হচ্ছে প্রথম লিখিত সংবিধান। উক্ত সংবিধানে সাম্যের মহান নীতি, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ঘোষণা করা হয়।
উক্ত সংবিধান সকল পক্ষ মেনে নিয়ে স্বাক্ষরদান করেছিল। মদিনা সনতে ৫৩টি ধারা ছিল।

ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী মদিনা থেকে ঘোষিত ৪৭টি ধারা সংবলিত একটি সনদ বা সংবিধান।

৬২২ খ্রিষ্টব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্মের নবী হজরত মুহম্মদ (সাঃ)  মক্কা থেকে মদিনা নগরীতে আসেন। ধীরে ধীরে নবীর নেতৃত্বে মদিনা মুসলমানদের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পরিণত হয়। এসময় সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ ছিল। কলহে লিপ্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রতৃত্বতৃত্ব্য ও সম্প্রীতি স্থাপন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) ৪৭ ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনার সনদ নামে পরিচিত।

এই সনদ তৈরির প্রায় সমসাময়িক ইতিহাসবিদ ইবনে হিশাম (র.) তাঁর ‘সিরাতুননবী (সা.)’ গ্রন্থে এ সনদের ৫৩টি ধারার বর্ণনা করেছেন। [দ্র. ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষায় অনূদিত এই গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের (ঢাকা : ১৯৯৪, পৃ. ১৬৩-১৭১।)] তবে উইলিয়াম মন্টেগোমারি ওয়াট তাঁর ‘মুহাম্মদ অ্যাট মদিনা’ গ্রন্থে এই সনদের (পৃ. ২২১-২২৫) ৪৭টি ধারা উল্লেখ করেছেন।

অধিকাংশ বাংলায় রচিত প্রায় সকল গ্রন্থে এই সনদের সংক্ষিপ্ত রূপ পাওয়া যায়। নিচে বাংলা উইকি থেকে এই সনদের বিষয় তুলে ধরা হলো।

এই সনদের মূল বিষয়বস্তু ছিল:
১) সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
২) হযরত মুহাম্মদ (স) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।
৩) কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদীনা বা মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনরুপ সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবে না।
৪) মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৫) মদিনার উপর যে কোন বহিরাক্রমণ কে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে। এবং সেই আক্রমণ কে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।
৬) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
৭) অসহায় ও দূর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
৮) সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদীনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।
৯) কোন লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে। তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায় কে দায়ী করা যাবে না।
১০) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
১১) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক।
১২) মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুমতি ব্যতীত মদীনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
১৩) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।

মদিনায় স্থাপিত প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের সচিবালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিত

রাষ্ট্রপ্রধানের দ্প্তর
১. 
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যক্তিগত সচিব : হযরত হানযালা ইবনে আলরবি
২. পত্রলিখন ও অনুবাদ বিভাগ (সচিব) : হযরত আলী (রা.), হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ও হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)
৩. সচিব : হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) ও হযরত শুরাহবিল ইবনে হাসান (রা.)
৪. সিলমোহরের আংটিটির সংরক্ষক : হযরত মুকরি ইবনে আবি ফাতিমা (রা.)
৫. অভ্যর্থনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত : হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) ও হযরত বারাহ (রা.)
৬. অর্থ ও হিসাব বিভাগ : হযরত মুয়ানকি ইবনে আবি ফাতিমা (রা.)
৭. জনস্বাস্থ্য বিভাগ : চিকিৎসক হারিস ইবনে সালাহ এবং আবিবার পুত্র
৮. শিক্ষা বিভাগ (স্বাক্ষরজ্ঞান) : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাইদ (রা) ও আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)
৯. যাকাত ও সদ্কা বিভাগ : হযরত যোবায়ের ইবনে আওয়াম ও যুহাইর
১০. বিজয়ের পর মক্কার প্রশাসক ছিলেন : হযরত ইত্তাব ইবনে উসাইদ (রা.)
১১. ইয়েমেনের দায়িত্বে ছিলেন : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)
১২. আম্মানের দায়িত্বে ছিলেন : হযরত আমর ইবনে আজ (রা.)
১৩. ওহি বিভাগ : হযরত আবু বকর এবং ওসমান (রা.) সহ চার খলিফা সবাই এবং হযরত জায়েদ ইবনে আজ সাবিত (রা.), উবায় বিন কাব (রা.), মুয়াবিয়া (রা.), খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা.), মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াসহ দশজন মেধাবী-উচু মর্যাদার সাহাবী
১৪. প্রতিরক্ষা বিভাগ : নবীজী (স.) নিজে ছিলেন তবে অধিনায়ক হিসেবে ৭২টি নিয়োগদান করেছিলেন
১৫. জননিরাপত্তা বিভাগ : হযরত কায়েস ইবনে সায়াদ (রা.)
১৬. বিচারপতি হিসেবে : হযরত ওমর ও হযরত আলী (রা.) সহ আটজন মশহুর বিদগ্ধ সাহাবী।

সূত্র : গভর্নমেন্ট আন্ডার দ্যা প্রফেট, ফুতহুল বুলদান, সিরাতে ইবনে হিশাম।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “মদিনা সনদ কি | মদিনা সনদ কাকে বলে | মদিনা সনদ বলতে কি বুঝায়” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।
5/5 - (35 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x