রাষ্ট্রবিজ্ঞান

যুক্তরাজ্যের আইনসভার গঠন । ব্রিটিশ লর্ডসভা ও কমন্সসভার গঠন প্রক্রিয়া

1 min read

ব্রিটেনের আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলো পার্লামেন্ট। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট বলতে রাজা বা রানির পার্লামেন্টকে বুঝায়।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হলো রাজা বা রানি এবং লর্ডসভা ও কমন্সসভাকে নিয়ে গঠিত একটি সংস্থা। এই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সংবিধানের ভিত্তিতে সৃষ্ট কোনো সংস্থা নয়। এ হলো ইংল্যান্ডের সুদীর্ঘ ইতিহাসের ক্রমবিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট এবং বিকশিত একটি সংগঠন।

• লর্ডসভার গঠন : লর্ডসভার গঠন নিয়ে আলোচনা করা হলো :

১. পিয়ার ব্যবস্থা : ব্রিটেনের সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রয়োজনেই সামন্তযুগে পিয়ার ব্যবস্থা গড়ে উঠে। চতুর্দশ শতাব্দীতে পিয়ার বা উত্তরাধিকারসূত্রে সদস্যপদ প্রাপকদের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা গড়ে উঠে।

২. লর্ড স্পিরিচ্যুয়াল : ব্রিটিশ লর্ডসভায় ২৫ জন আজন্ম লর্ড আছেন। তাদের মধ্যে প্রধান হলেন কেন্টারগরা এবং ইয়র্কের আর্চ বিশপগণ এবং লন্ডনের ডারহাম ও উইনচেস্টারের বিশপগণ। বাকি ২১ জন আজন্ম লর্ডকে চাকরির বয়োজ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়।

৩. লর্ড অব আপিল ইন অর্ডিনারি : সাধারণত আপিল লর্ডসভায় ৯ জন লর্ড আছেন। তারা ‘ল’ লর্ড নামেও পরিচিত। তাদের সারা জীবনের জন্য নিয়োগ করা হয় প্রখ্যাত আইন বিজ্ঞদের মধ্য থেকে। তারা লর্ডসভার বিচার বিভাগীয় কাজ সম্পাদন করে থাকেন।

৪. আজীবন পিয়ার : লর্ডসভায় আজীবন পর্যায়ের সংখ্যা প্রায় ২৭৫ জন। এরা পার্লামেন্টের লর্ড নামেও পরিচিত। রাজা বা রানি যেকোনো ব্যক্তিকে আজীবন পর্যায়ের পদ দান করতে পারেন । এভাবে তারা লর্ডসভায় সদস্য পদ অধিকার করে।

৫. উত্তরাধিকার সূত্রে পিয়ার : লর্ডসভার বেশিরভাগ সদস্য উত্তরাধিকারসূত্রে এদের সংখ্যা ৮৫০ জন। যুক্তর স্কটল্যান্ডের পিয়ারগণ প্রায়ই বংশগত উপাধি ধারণ করেন।

তাই তারা উত্তরাধিকারসূত্রে লর্ডসভার সদস্যপদ লাভ করেন। মহিলারাও উত্তরাধিকারসূত্রে পিয়ার পদলাভ করে লর্ডসভায় আসন গ্রহণ করতে পারেন।

কমললতার গঠনপ্রণালি : কর্মসসভার সদস্যরা সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হন। কমন্স সভার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৬৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ করা হয়েছে। এই পরিবর্তন ১৯৮৩ সালের নির্বাচন থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

১. কমলসভার সদস্য প্রার্থীদের যোগ্যতা : কমপসভার সদস্য প্রার্থী হতে হলে তাকে অবশ্যই-

(ক) ব্রিটিশ নাগরিক হতে হবে।

(খ) কমপক্ষে ২১ বছর বয়স্ক হতে পারে।

(গ) যেকোনো ধর্মবিশ্বাস সংগতপূর্ণ সাধারণ আনুগত্যের শপথ গ্রহণে ইচ্ছুক থাকতে হবে এবং

(খ) অপ্রাপ্তবয়স্ক, উত্থান, বিচারের অপরাধী, গির্জার ধর্মযাজক পিয়ারগণ ব্যতীত অন্য শিয়ারগণও সকল প্রকার সরকারি কর্মচারী প্রার্থী পদের অযোগ্য।

২. কমনসভার সদস্য নির্বাচনকারীদের যোগ্যতা : ১৮ বছর বক্ষে প্রতিটি নাগরিকের নির্বাচনে ভোটাধিকার রয়েছে। কোনো বিদেশি, বিকৃত মস্তিষ্ক, দেউলিয়া, বিচারে অপরাধী ভোট দিতে পারে না।

৩. নির্বাচনি এলাকার প্রকৃতি : প্রতিটি সদস্য যাতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেভাবে নির্বাচনি এলাকা নির্ধারণ করা হয়।

৪. কার্যকাল : কমন্সসভার পূর্বের মেয়ান ছিল সাতবছর। ১৯১১ সালের পার্লামেন্ট আইনে কমন্সসভার কার্যাবলি পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে রাজা বা রানি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে মেয়াদের আগেও কমন্সসভা ভেঙে নিতে পারেন।

৫. অধিবেশন : বর্তমান কমন্সসভার অধিবেশন বছরে অন্তত একবার আহ্বান করা হয়। জরুরি অবস্থায়ও অধিবেশন আহ্বান করা যায়। রাজা বা রাণি অধিবেশন আহ্বান বা স্থগিত রাখতে পারেন।

৬. কোৱাম : কমন্সসতায় কমপক্ষে ৪০ জন সদস্য উপস্থিত থাকলেই কেবল সভার কাজ চলতে পারে। সদস্যরা নিজেদের মধ্যে থেকে একজন স্পিকার নির্বাচন করতে পারেন।

৭. অধিবেশনের স্থান : কমন্সসভার অধিবেশন টেমস নদীর তীরে ওয়েস্ট মিনিস্টারের মনোরম পরিবেশ পার্লামেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লর্ডসভা হলো ব্রিটিশ ‘পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ। পৃথিবীর প্রচীনতম দ্বিতীয় কক্ষ হলো এই লর্ডসভা। ব্রিটিশ শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মতো লর্ডসভাও হলো দীর্ঘকালের ক্রমবিকাশের ফল।

ব্রিটেনের কমদসভার গঠন প্রণালি এইভাবে গঠিত হয়। মূলত কমপলতার সদস্যরা সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হন। কমলসভার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৬৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ করা হয়েছে।

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “যুক্তরাজ্যের আইনসভার গঠন” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (34 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x