নিউক্লিওসাইডঃ এক অনু নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষারক ও এক অনু পেন্টোজ সুগার যুক্ত হয়ে
গঠিত গ্লাইকোসাইড যৌগকে বলা হয় নিউক্লিওসাইড। ক্ষারক পাইরিমিডিন হলে তাকে পাইরিমিডিন নিউক্লিওসাইড, আর ক্ষারক পিউরিন হলে তাকে পিউরিন নিউক্লিওসাইড বলে। পাইরিমিডিন নিউক্লিওসাইডে ক্ষারকের ১নং নাইট্রোজেন, সুগারের ১নং কার্বনের -OH মুলকের সাথে গ্লাইকোসাইড বন্ধনে যুক্ত থাকে। কিন্তু পিউরিন নিউক্লিওসাইডে ক্ষারকের ৯নং (১নং নয়) নাইট্রোজেন, সুগারের ১নং কার্বনের -OH মুলকের সাথে গ্লাইকোসাইড বন্ধনে যুক্ত থাকে।
চিত্রঃ নিউক্লিওসাইড।
নিউক্লিওটাইডঃ এক অনু নিউক্লিওসাইড এর সাথে এক অনু ফসফেট যুক্ত হয়ে গঠন করে এক অনু নিউক্লিওটাইড। অন্যভাবে বলা যায়, নিউক্লিওসাইডের ফসফেট এস্টার হল নিউক্লিওটাইড।
নিউক্লিক এসিডকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় কতকগুলো নিউক্লিওটাইড একক। কাজেই বলা যায়, নিউক্লিওটাইড হল নিউক্লিক এসিডের গাঠনিক একক। এক অনু নাইট্রোজেন বেস, এক অনু পেন্টোজ সুগার এবং এক অনু ফসফেট যুক্ত হয়ে গঠিত যৌগের নাম নিউক্লিওটাইড।
তাহলে যা দাড়াল, স্যুগার + নাইট্রোজেন বেস – নিউক্লিওসাইড।
আর নিউক্লিওসাইড + ফসফেট- নিউক্লিওটাইড।
উদাহরণসরুপ,
স্যুগার রাইবোজ হলে-
১/রাইবোজ সুগার + অ্যাডেনিন(N বেস) +ফসফেট = অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট (AMP) বা অ্যাডেনিন নিউক্লিওটাইড বা অ্যাডেনিলিক এসিড।
অনুরূপভাবে,
২/ রাইবোজ সুগার + গুয়ানিন(N বেস) +ফসফেট = গুয়ানোসিন মনোফসফেট (GMP) বা গুয়ানিন নিউক্লিওটাইড বা গুয়ানিলিক অ্যাসিড।
৩/ রাইবোজ সুগার + সাইটোসিন (N বেস) +ফসফেট = সাইটিডিন মনোফসফেট (CMP) বা সাইটোসিন নিউক্লিওটাইড বা সাইটিডিলিক অ্যাসিড।
৪/ রাইবোজ সুগার + ইউরাসিল (N বেস) +ফসফেট = ইউরিডিন মনোফসফেট (UMP) বা ইউরাসিল নিউক্লিওটাইড বা ইউরিডিলিক অ্যাসিড।
আবার স্যুগার ডিঅক্সিরাইবোজ হলে-
১/ ডিঅক্সি রাইবোজ সুগার + অ্যাডেনিন(N বেস) +ফসফেট = ডিঅক্সি অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট (dAMP) বা অ্যাডেনিন ডিঅক্সিনিউক্লিওটাইড বা ডিঅক্সি অ্যাডেনিলিক অ্যাসিড।
অনুরূপভাবে,
২/ ডিঅক্সি রাইবোজ সুগার + গুয়ানিন(N বেস) +ফসফেট = ডিঅক্সিগুয়ানোসিন মনোফসফেট (dGMP) বা গুয়ানিন ডিঅক্সি নিউক্লিওটাইড বা ডিঅক্সি গুয়ানিলিক অ্যাসিড।
৩/ ডিঅক্সি রাইবোজ সুগার + সাইটোসিন (N বেস) +ফসফেট = ডিঅক্সি সাইটিডিন মনোফসফেট (dCMP) বা সাইটোসিন ডিঅক্সি নিউক্লিওটাইড বা ডিঅক্সি সাইটিডিলিক অ্যাসিড।
৪/ ডিঅক্সি রাইবোজ সুগার + ইউরাসিল (N বেস) +ফসফেট = ডিঅক্সিথাইমিন মনোফসফেট (dTMP) বা থাইমিন ডিঅক্সি নিউক্লিওটাইড বা ডিঅক্সি থাইমিডিলিক অ্যাসিড।
প্রতিটি নিউক্লিওটাইডে একটি ফসফেট যুক্ত থাকে। এর সাথে আরও এক বা একাধিক ফসফেট যুক্ত হতে পারে। এভাবে ফসফেট সংযুক্তির মাধ্যমে AMP(Adenosine monophosphat) থেকে ADP (Adenosine diphosphate) আবার ADP থেকে ATP (Adenosine triphosphate) সৃষ্টি হয়।
AMP( অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট) +P=ADP; ADP+P=ATP
GMP (গুয়ানোসিন মনোফসফেট) +P=GDP; GDP+P=GTP
CMP (সাইটিডিন মনোফসফেট) +P=CDP; CDP+P=CTP
UMP( ইউরিডিন মনোফসফেট) +P=UDP; UDP+P=UTP।
ডাইনিউক্লিওটাইডঃ একটি নিউক্লিওটাইড যখন আরেকটি নিউক্লিওটাইডের সাথে ফসফো ডাইএস্টার বন্ধনীর সাথে যুক্ত হয়,তখন তাকে ডাইনিউক্লিওটাইড বলে। ১ম নিউক্লিওটাইডের পেন্টোজ স্যুগারের ৫নং কার্বনের সাথে দ্বিতীয় নিউক্লিওটাইড এর পেন্টোজ স্যুগারের ৩নং কার্বন ফসফেট ডাইএস্টার বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়, ফলে একটি ডাইনিউক্লিওটাইড গঠিত হয়।এই ধরনের গঠনগুলোকে ৫’→৩’ মুখী গঠন বা ৩’→৫’ মুখী গঠন বলে।
পলিনিউক্লিওটাইডঃ অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড ৫’→৩’ অনুমুখী বা ৩’→৫’ অনুমুখী হয়ে পরপর ফসফো-ডাইএস্টার বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি লম্বা রৈখিক শৃঙখলের সৃষ্টি করে, তখন তাকে পলিনিউক্লিওটাইড বলে। পলিনিউক্লিওটাইড একটি চেইনের মত গঠন সৃষ্টি করে। এই চেইনে একদিকে ফসফেট অনু পেন্টোজ স্যুগারের ৫নং কার্বনের সাথে অন্যদিকে পাশের পেন্টোজ স্যুগারের ৩নং কার্বনের সাথে যুক্ত থাকে। DNA অনুর প্রতিটি একক হেলিক্স একটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন।
আরো পড়ুনঃ
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “DNA অনুর প্রতিটি একক হেলিক্স একটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন।” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।