যে ব্যক্তি নিজের পিতা ও ফুফুদের সাথে কথা বলে না, নামায পড়ে না এবং আল্লাহ্‌র প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে

প্রশ্ন

যে ব্যক্তি তার পিতার আচার-ব্যবহার খারাপ হওয়া, মহিলাদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখা, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন না করা এবং প্রতিবারে তার মাকে তালাক দেয়ার কারণে পিতার সাথে কথা বলে না এবং কখনও জিজ্ঞেস করবে না। তার ফুফুরা তার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করেছে বিধায় কখনও তাদেরকে দেখতে যাবে না; কিন্তু রাস্তায় দেখা হলে সালাম দিবে। কিছু সমস্যা ঘটায় কর্মস্থলে তার সহকর্মীদের সাথে কথা বলে না। যদিও সে তার বিরুদ্ধে কোন হিংসা বা ক্রোধ ধারণ করে না। সে নামায পড়ে না। কেননা সে সবসময় বলে যে, আল্লাহ্‌ তার নামায কবুল করবেন না। কারণ সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে পড়তে পারে না এবং সে আত্মীয়তার সম্পর্ক কর্তনকারী। সে আরও কিছু মানুষের সাথে কথা বলে না; কারণ তারা তার সাথে খারাপ আচরণ করেছে এবং সে কখনও তাদেরকে ক্ষমা করবে না। এমন ব্যক্তির হুকুম কী?

 

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যে ব্যক্তি নানারকম দুশ্চিন্তায় জর্জরিত, প্রশস্ত দুনিয়াও যার জন্য সংকীর্ণ, যার বন্ধু-বান্ধব ও আশপাশের মানুষের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ; তার কর্তব্য হচ্ছে— আল্লাহ্‌র কাছে ধর্ণা দেওয়া এবং নিজের আত্ম-পর্যালোচনা করা। নিজের ভুল-ত্রুটি ও অন্যায়গুলোর সমালোচনা করা। নিজের কসুর ও অবাধ্যতার জন্য নিজেকে দায়ী করা। আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা এবং আমলকে সুন্দর করা।

দুই:

তার উপর আবশ্যক— পিতার প্রতি ইহসান করা ও তার সাথে ভাল ব্যবহার করা। পিতা যে গুনাহই করুক না কেন পিতাকে ত্যাগ করা নাজায়েয। কেননা পিতামাতার অধিকার অনেক বড়। তাদের এ অধিকার তারা গুনাতে লিপ্ত হলেও কিংবা উপর্যুপরি গুনাহ করতে থাকলেও রহিত হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা পিতামাতার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সাহচর্য দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন; এমন কি পিতামাতা যদি তাদের সন্তানকে আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করার নির্দেশ দেয় ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে তবুও। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “কিন্তু তারা (পিতামাতা) যদি এমন চেষ্টা করে, যাতে তুমি আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক কর, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না; তবে দুনিয়াতে তাদেরকে সৌহার্দ্যের সাথে সঙ্গ দেবে।”[সূরা লুকমান; আয়াত: ১৫]

 

তিন:

পরিবারিক সমস্যা ও সংকট তৈরী হলে সেটার দাবী এ নয় যে, সম্পর্কছেদ করা ও শত্রুতা পোষণ করা। একজন মুসলমানের জন্য নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা, সালাম দেওয়া ও ভালবাসা পোষণ করা অধিক যুক্তিযুক্ত, তাকওয়ার নিকটবর্তী এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ সম্পর্কচ্ছেদ থেকে অধিক দূরবর্তী। এমনকি নিজের আত্মীয়-স্বজন যদি তার উপর অন্যায় করে তবুও। কারণ ক্ষমা করে দেওয়া আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের কাছে অধিক প্রিয়। সুতরাং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল যা অপছন্দ করেন সেটাকে বাদ দিয়ে তাঁরা যা পছন্দ করেন সেটাকে গ্রহণ করুন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, “এক ব্যক্তি বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমার কিছু আত্মীয় আছে আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলি; কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক রাখে না। আমি তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করি; তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে সহ্য করি; তারা আমার সাথে মূর্খের মত আচরণ করে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি যেমনটি উল্লেখ করেছ যদি তুমি তেমন হও তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই ছুড়ে দিচ্ছ। তুমি যদি এর উপর অটল থাক তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তোমার সাথে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী থাকবে।”[সহিহ মুসলিম (২৫৫৮)]

চার:

অনুরূপভাবে কর্মস্থলের সহকর্মী: এমন কোন চাকুরী নেই যাতে কোন সমস্যা নেই বা মতবিরোধ নেই। যদি কেউ অনেক বিষয় এড়িয়ে না যায়, ধৈর্য না ধরে, মানুষকে ক্ষমা করে না দেয় এবং মানুষের দেওয়া কষ্টগুলো হজম করতে না পারে তাহলে চাকুরী করতে যাওয়াটা তার মানসিক অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা ও কষ্টের উৎস হবে।

যদি কেউ ধৈর্য ধরে, অনেক বিষয় এড়িয়ে যায় ও ক্ষমা করে দেয় তাহলে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কাছে এর সওয়াব পাবে, তার সহকর্মীরা তাকে ভালবাসবে এবং তারা তার ভাল ব্যবহার ও সচ্চরিত্রের স্বীকৃতি দিবে। এভাবে সে তাদের কাছে অনুসরণীয় আদর্শ ও সৎ ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে।

পক্ষান্তরে, মানুষের সাথে বেশি বেশি বিরোধে জড়ানো, তাদের অন্যায় আচরণের কথা মনে রাখা, তাদের থেকে দূরে থাকার আগ্রহ পোষণ করা এবং তাদের দুর্ব্যবহারগুলো ক্ষমা করে না দেওয়া— এভাবে সমস্যাগুলোকে জিইয়ে রাখার মধ্যে মুসলমানের দ্বীন ও দুনিয়ার কোন কল্যাণ নেই। এভাবে তার জীবন ধারা সুষ্ঠভাবে চলবে না। তার দ্বীনদারিও শুদ্ধ হবে না এবং দুনিয়াও সুখময় হবে না।

পাঁচ:

এ সমস্যাগুলোর চেয়ে বড় সমস্যা হল নামায ত্যাগ করা এবং আল্লাহ্‌র প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করা। এ দুটো গুনাহ গোটা দ্বীনদারিকে ধ্বংস করে দেয়, সকল বরকত নষ্ট করে দেয় এবং সকল অনিষ্ট নিয়ে আসে। নামায পড়া একেবারে ছেড়ে দেওয়া— কুফরি ও মুসলিম মিল্লাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং সকল সংকট, বিপদাপদ ও দুঃখের কারণ।

 

এই আলোচনার ভিত্তিতে বলব: এই ব্যক্তির উচিত এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আত্ম-পর্যালোচনা করা। এর মধ্যে যেগুলোতে তার ভুল ধরা পড়বে সেগুলো থেকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা এবং যা কিছু নষ্ট করেছে সেগুলোকে ঠিক করে নেয়া। নিজের পিতা, ফুফু ও সহকর্মীদের সাথে ভাল ব্যবহার করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে— নিয়মিত নামায আদায় করা। আল্লাহ্‌র কাছে বেশি বেশি দোয়া করা যেন আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করে নেন, তাকে সংশোধন করে দেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণের তাওফিক দেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Similar Posts