BRT কী | বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কী, কেন, কিভাবে?

৬ নভেম্বর ২০২২ বহুল আলোচিত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (BRT) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের ঢাকামুখী দুটি লেন খুলে দেওয়া হয়। লেন দুটি- গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ফ্লাইওভারের হাউস বিল্ডিং ও টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অংশ। এর দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার। এতে ঢাকামুখী যানবাহন অনেকটা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। ২০২৩ সালে BRT প্রকল্পটি চলাচলের উপযোগী হবে

BRT কী

BRT’র পূর্ণরূপ Bus Rapid Transit। BRT একটি উন্নত মানের আধুনিক বাসভিত্তিক ট্রানজিট ব্যবস্থা যা দ্রুত, সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং আরামদায়ক চলাচলের ব্যবস্থা করে। এতে চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য ডেডিকেটেড লেন ব্যবহার করা হয়। এর সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে— যানজট এড়িয়ে দ্রুত বিপুল সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা। BRT সিস্টেমে যাত্রীদের ভাড়া প্রদানের জন্য ই-টিকেটিং, অটোমেটিক গেটের ব্যবস্থা এবং আধুনিক ও সহায়ক অবকাঠামোর ব্যবস্থা থাকে ।

ইতিহাস

বিশ্বের প্রথম Bus Rapid Transit (BRT) সিস্টেমটি ছিল কানাডার অটোয়ার ওসি ট্রান্সপো সিস্টেম। ১৯৭৩ সালে প্রবর্তিত এ BRT সিস্টেমটির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল শহরের কেন্দ্রস্থলে ডেডিকেটেড বাস লেন স্থাপন করা । ১৯৮৩ সালে প্রথম Exclusive Busway (‘ট্রানজিটওয়ে’ নামে পরিচিত) তৈরি করা হয়।

১৯৯৬ সালে ৩১ কিলোমিটার ট্রানজিট ওয়ে সিস্টেম চালু করা হয়। ১৯৭৪ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় BRT সিস্টেমটি ব্রাজিলের কুরিটিবাতে নির্মিত হয়। ২০০০ সালে কলম্বিয়ার বোগোতায় ট্রান্সমিলেনিও নামে প্রথম BRT সিস্টেম চালু হয়, যা অন্যান্য BRT’র সেরা ও সফল বৈশিষ্ট্যগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়ে বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন এবং সর্বোচ্চ গতির BRT সিস্টেম প্রবর্তন করে।

২০০৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এশিয়ার প্রথম BRT চালু হয়। জাকার্তায় চালু হওয়া ২১০ কিলোমিটার (১৩০ মাইল) BRT বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম BRT সিস্টেম।

বাংলাদেশে BRT’র পটভূমি

নগর পরিবহন ব্যবস্থা দক্ষ করে গড়ে তুলতে ২০০৫ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রণীত ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (STP) প্রস্তুত করা হয়। ২০১৫ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (IICA) কর্তৃক তা সংশোধন করা হলে সরকার কর্তৃক সেটি সংশোধিত STP হিসেবে অনুমোদিত হয়।

এটিই নগর পরিবহন পরিকল্পনার বর্তমান ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। BRT ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের ৬টি প্রধান করিডোর বিশ্লেষণ করা হয়। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় BRT লাইন-৩ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় ।

১ জুলাই ২০১৩ BRT ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য ১০০% সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (Dhaka BRI) গঠন করা হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা বৃদ্ধির পরও কাজ শেষ হয়নি । রাজধানী ঢাকায় এটিই প্রথম বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প।

FACT FILE : BRT

  • প্রকল্পের নাম : Greater Dhaka Sustainable Urban Transport Project (বিআরটি বিমানবন্দর- গাজীপুর)।
  • বাস্তবায়নকারী সংস্থা : সড়ক ও জনপথ বিভাগ (RHD), বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (BBA), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (LGED) এবং ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (Dhaka BRT)।
  • প্রকল্প অর্থায়নকারী : বাংলাদেশ সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (AFD) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (GEF)।
  • প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় : ৪,২৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ১,৪২৫ কোটি টাকা এবং বাকি টাকা প্রকল্প সাহায্য।
  • প্রকল্পের ঠিকাদার : উড়াল সড়ক ও নিচের সড়ক নির্মাণ চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (CGGS), জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ। আর গাজীপুরে BRT’র ডিপো নির্মাণে দেশীয় কোম্পানি সেল-ইউডিসি ।
  • দৈর্ঘ্য : ২০. ৫০ কিমি, ভূমিতে : ১৬ কিমি ও এলিভেটেড : ৪.৫০ কিমি
  • স্টেশন : ২৫টি
  • বাস ডিপো : ১টি (গাজীপুর)
  • টার্মিনাল : ২টি (বিমানবন্দর ও গাজীপুর)
  • ফ্লাইওভার : ৬টি (বিমানবন্দর, জসিমুদ্দীন, কুনিয়া, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ভোগরা এবং জয়দেবপুর চৌরাস্তা)
  • সেতু : ১টি (টঙ্গী সেতুকে ১০ লেনে উন্নীতকরণ) ।
  • কিচেন মার্কেট : ৮টি
  • এক্সেস রোড : ১১৩টি (৫৬ কিমি)
  • উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নর্দমা : উভয় পাশে ২৪ কিমি
  • ফুটপাত : উভয় পাশে ২০.২ কিমি
  • ভ্রমণ সময় : ৫০ মিনিট (গাজীপুর-এয়ারপোর্ট)
  • বাস ফ্রিকোয়েন্সি: ২ থেকে ৫ মিনিট ।

 

Similar Posts