গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার নাম ও সম্পাদক

এ দেশে সংবাদপত্রের প্রচার পাশ্চাত্য প্রভাবের ফল। বাংলাদেশের তথা ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’ (Hickey’s Bengal Gazette; or the Original Calcutta General Advertifer)। এই ইংরেজি সাময়িক পত্রটি জেমস অগাস্টাস হিকি কর্তৃক ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদপত্র প্রকাশের ব্যাপারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট ছিল না।

কারণ বেসরকারি ইউরোপীয়দের মালিকানার এসব সংবাদপত্র কোম্পানির কঠোর সমালোচক হিসেবে ‘কোম্পানির বিঘোষিত নীতি ও শাসনপদ্ধতি এবং কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিদের কার্যকলাপকে এরা ক্রমাগত আক্রমণ’ করে চলেছিল। ফলে লর্ড ওয়েলেসলি সংবাদপত্র শাসনের উদ্দেশ্যে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কোচন করে কঠোর সেন্সর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

এ ব্যবস্থায় সকল সংবাদ সেক্রেটারি কর্তৃক পরীক্ষিত হয়ে প্রকাশিত হতো এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীকে ইউরোপে নির্বাসন দেয়া হতো। গভর্নর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে এ ব্যবস্থা রহিত করেন। এর চার মাস পূর্বে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রথম বাংলা সাময়িক পত্র ‘দিগদর্শন’ প্রকাশিত হয় ।

বাংলা সাময়িক পত্রের সমগ্র ইতিহাসকে কয়েকটি যুগে বিভক্ত করা যায়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘দিগদর্শন’ থেকে ১৮২৯-এ প্রকাশিত ‘বঙ্গদূত’ পর্যন্ত প্রথম যুগ। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ থেকে ১৮৪৩-এ প্রকাশিত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার পূর্ব পর্যন্ত দ্বিতীয় যুগ। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা থেকে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’-এর পূর্ব পর্যন্ত তৃতীয় যুগ।

বঙ্গদর্শন থেকে ১৮৭৭-এ প্রকাশিত ‘ভারতী’র পূর্ব পর্যন্ত চতুর্থ যুগ। ভারতী থেকে ১৯১৪ সালে প্রকাশিত ‘সবুজপত্র’ পর্যন্ত পঞ্চম যুগ বলে গ্রহণ করা যেতে পারে। এ পর্যন্ত বাংলা সাময়িক পত্র যে উৎকর্ষ লাভ করেছিল পরবর্তীকালে তারই অনুসরণ লক্ষ্য করা যায় ।

গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার নাম ও সম্পাদক

নাম প্রথম প্রকাশ সম্পাদক
বেঙ্গল গেজেট ১৭৮০ জেমস অগাস্টাস হিকি
দিগদর্শন ১৮১৮ জন ক্লার্ক মার্শম্যান
সমাচার দর্পণ ১৮১৮ উইলিয়াম কেরি
বাঙ্গাল গেজেট ১৮১৮ গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
ব্রাহ্মণ সেবধি ১৮২১ রাজা রামমোহন রায়
সম্বাদ কৌমুদী ১৮২১ রাজা রামমোহন রায় ও ভবাণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
মীরাৎ-উল-আখবার ১৮২২ রাজা রামমোহন রায়
সমাচার চন্দ্রিকা ১৮২২ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বঙ্গদূত ১৮২৯ নীলমণি হালদার
সংবাদ প্রভাকর ১৮৩১ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
জ্ঞানান্বেষণ ১৮৩১ দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
সমাচার সভারাজেন্দ্র ১৮৩১ শেখ আলীমুল্লাহ
সংবাদ রত্নাবলী ১৮৩২ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
তত্ত্ববোধিনী ১৮৪৩ অক্ষয়কুমার দত্ত
রংপুর বার্তাবহ ১৮৪৭ গুরুচরণ রায়
সর্বশুভকরী পত্রিকা ১৮৫০ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বিবিধার্থ সংগ্রহ ১৮৫১ রাজেন্দ্রলাল মিত্র
মাসিক পত্রিকা ১৮৫৪ প্যারীচাদ মিত্র ও রাধানাথ শিকদার
ঢাকা প্রকাশ ১৮৬১ কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
গ্রামবার্তা প্রকাশিকা ১৮৬৩ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার
অমৃতবাজার পত্রিকা ১৮৬৮ বসন্ত কুমার ঘোষ ও শিশির কুমার ঘোষ
শুভ সাধিনী ১৮৭০ কালীপ্রসন্ন ঘোষ
বঙ্গদর্শন ১৮৭২ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আজিজন্নেহার ১৮৭৪ মীর মশাররফ হোসেন
বান্ধব ১৮৭৪ কালীপ্রসন্ন ঘোষ
পাষণ্ড পীড়ন ১৮৪৬ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
এডুকেশন গেজেট ১৮৪৬ রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
সংবাদ সাধুরঞ্জন ১৮৫০ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
সংবাদ রসসাগর ১৮৫০ রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
সাপ্তাহিক বার্তাবহ ১৮৫৩ রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
পূর্ণিমা ১৮৫৯ বিহারীলাল চক্রবর্তী
সংবাদ রত্নাবলী ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
সাহিত্য সংক্রান্ত ১৮৬৩ বিহারীলাল চক্রবর্তী
আর্য দর্শন ১৮৬৩ যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ
ভারতী ১৮৭৭ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর
ইসলাম ১৮৮৫ মুন্সী মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদ
ঝলক ১৮৮৫ জ্ঞানদানন্দিনী দেবী
সুধাকর ১৮৯৪ শেখ আবদুর রহিম
সাহিত্য ১৮৯০ সুরেশচন্দ্র সমাজপতি

সাধনা ১৮৯১ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মিহির (মাসিক) ১৮৯২ শেখ আবদুর রহিম
হাফেজ ১৮৯৬ শেখ আবদুর রহিম
কোহিনূর ১৮৯৮ মোঃ রওশন আলী
লহরী ১৯০০ মোজাম্মেল হক
প্রবাসী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়
নবনূর ১৯০৩ সৈয়দ এমদাদ আলী
মাসিক মোহাম্মদী ১৯০৩ মোহাম্মদ আকরম খাঁ
বাসনা ১৯০৮ শেখ ফজলুল করিম
সবুজপত্র ১৯১৪ প্রমথ চৌধুরী
আল এসলাম (মাসিক) ১৯১৫ মোহাম্মদ আকরম খাঁ
সওগাত ১৯১৮ মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন
মোসলেম ভারত ১৯২০ মোজাম্মেল হক
আঙুর (কিশোর পত্রিকা) ১৯২০ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
দৈনিক সেবক ১৯২১ মোহাম্মদ আকরম খাঁ
ধূমকেতু ১৯২২ কাজী নজরুল ইসলাম
কল্লোল ১৯২৩ দীনেশ রঞ্জন দাস
মুসলিম জগৎ ১৯২৩ খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন
সাপ্তাহিক মুসলিম জগৎ ১৯২৫ আবুল কালাম শামসুদ্দীন
লাঙ্গল ১৯২৫ কাজী নজরুল ইসলাম
কালি-কলম (মাসিক) ১৯২৬ শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়
প্রগতি ১৯২৭ বুদ্ধদেব বসু ও অজিত দত্ত
শিখা (প্রথম বছর) ১৯২৭ আবুল হুসেন
শিখা (২য় ও ৩য় বছর) ১৯২৭ কাজী মোতাহার হোসেন
বেদুঈন ১৯২৭ আশরাফ আলী খান
পরিচয় ১৯৩১ বিষ্ণু দে
দৈনিক আজাদ ১৯৩৫ মোহাম্মদ আকরম খাঁ
চতুরঙ্গ ১৯৩৯ হুমায়ূন কবীর
দৈনিক নবযুগ ১৯৪১ কাজী নজরুল ইসলাম
প্রতিরোধ (পাক্ষিক) ১৯৪২ রণেশ দাশগুপ্ত
সাহিত্যপত্র ১৯৪২ বিষ্ণু দে
কবিতা ১৯৪৫ বুদ্ধদেব বসু
বেগম ১৯৪৯ নূরজাহান বেগম
ইনসাফ ১৯৫০ মহিউদ্দীন
সমকাল ১৯৫৪ সিকান্দার আবু জাফর
মাহেনও ১৯৪৯ আবদুল কাদির
অরুণোদয় (মাসিক) ১৯৫৬ রেভারেন্ড লাল বিহারী দে
জেহাদ ১৯৬২ আবুল কালাম শামসুদ্দীন
জ্ঞানাঙ্কুর ১২০৯ বঙ্গাব্দ শ্ৰীকৃষ্ণ দাস
অবোধ বন্ধু ১২৭৫ বঙ্গাব্দ বিহারীলাল চক্রবর্তী
পরিষ‍ৎ ১৩০৫-১০ বঙ্গাব্দ রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী
জয়তী ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ আবদুল কাদির
সংলাপ আবুল হোসেন
সৈনিক শাহেদ আলী
গুলিস্তা এস ওয়াজেদ আলী
সাম্যবাদী খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন
বিচিত্রা ফজল শাহাবুদ্দীন
কবিতাপত্র ফজল শাহাবুদ্দীন
কবিকণ্ঠ ফজল শাহাবুদ্দীন
বঙ্গদর্শন (নব পর্যায়) মোহিতলাল মজুমদার
সন্দেশ সুকুমার রায়
সাহিত্য পত্রিকা মুহাম্মদ আবদুল হাই
Reformer প্রসন্ন কুমার ঠাকুর
Hindu Intelligence কাশী প্রসাদ ঘোষ
সাহিত্য পত্রিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা বিভাগ)
ভাষা সাহিত্য পত্র জাঃ বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা বিভাগ)
সাহিত্যিকী রাঃ বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা বিভাগ)
উত্তরাধিকার বাংলা একাডেমি
লেখা বাংলা একাডেমি

মডেল প্রশ্ন

১. বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্রের নাম কি? কোথা থেকে, কত সালে প্রকাশিত হয়?

উত্তর : বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্রের নাম ‘দিগদর্শন’। এটি শ্রীরামপুর মিশন থেকে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

২. বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্রের নাম কি? কত সালে প্রকাশিত হয়?

উত্তর : সমাচার দর্পণ। এটি ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

৩. বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র কোনটি?

উত্তর : বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত দৈনিক সংবাদপত্র ‘সংবাদপ্রভাকর’। এর সম্পাদক ছিলেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। পত্রিকাটি সাপ্তাহিকরূপে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ১৮৩১ সালে। ১৮৩৯ সালে এটি পরিণত হয় দৈনিক পত্রিকায়।

৪. বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে? এটি কোন সালে প্রথম প্রকাশিত হয়?

উত্তর : বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রথম সম্পাদক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এটি ১৮৭২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ।

৫. কোন পত্রিকাটি চলিত ভাষারীতির প্রবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল? এর সম্পাদক কে?

উত্তর : ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাটি চলিত ভাষারীতির প্রবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পত্রিকাটি প্রথম ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদক প্রমথ চৌধুরী।

৬. ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার প্রকাশকাল কত? এর সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর : সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ১৮৪৩ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকাটি যাত্রা শুরু করে। ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববোধিনী সভা কর্তৃক প্রকাশিত এ পত্রিকার মাধ্যমেই সমাজে আধুনিক দৃষ্টিসম্পন্ন নতুন চিন্তাধারার সূচনা হয় । তখন পত্রিকার সম্পাদনা করতেন অক্ষয়কুমার দত্ত।

৭. ‘সওগাত’ পত্রিকাটি কোথা থেকে প্রকাশিত হয়? এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও লেখক কে?

উত্তর : সওগাত একটি সচিত্র মাসিক পত্রিকা। ১৩২৫ বঙ্গাব্দে (১৯১৮ সালে) মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। সম্পাদক হিসেবে নাসিরউদ্দীনের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ একটি উন্নতমানের পত্রিকা প্রকাশ করা। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সওগাতের প্রধান লেখকদের অন্যতম। সওগাতের অন্যান্য প্রধান লেখক ছিলেন বেগম রোকেয়া, কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ এবং আবুল ফজল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরও এতে লিখেছেন।

৮. কল্লোল যুগ ও এ যুগের কবিদের সম্পর্কে ধারণা দিন।

উত্তর :’কল্লোল’ পত্রিকাকে ঘিরে যে সময়টিতে সাহিত্যের আধুনিকতাবাদী আন্দোলনের প্রকাশ ও বিকাশ তাই ‘কল্লোল যুগ’ (১৯৫০) নামে পরিচিত। ‘কল্লোল’ পত্রিকায় যারা লিখতেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। ৯. ঢাকার

৯. ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’-এর উদ্দেশ্য ও ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা দিন।

উত্তর : ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান। এর ছত্রছায়ায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন সংগঠিত হয়। বাঙালি মুসলমান সমাজে আড়ষ্ট বুদ্ধিকে মুক্ত করে জ্ঞানপিপাসা জাগিয়ে তোলার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রবীণ ছাত্র ১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাহিত্য সমাজের মূল ভাবযোগী ছিলেন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের শিক্ষক কাজী আবদুল ওদুদ ও কর্মযোগী আবুল হুসেন। ঢাকা মুসলিম সাহিত্য সমাজের বার্ষিক মুখপত্র ‘শিখা’র আপ্তবাক্য ছিল ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’।

১০. ঢাকার ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর প্রতিষ্ঠা কোন খ্রিস্টাব্দে? এ সংগঠন থেকে প্রকাশিত মুখপত্রের নাম কি?

উত্তর : মুক্তবুদ্ধি চর্চার উদ্দেশ্যে কাজী আব্দুল ওদুদ, আবুল হুসেন, আব্দুল কাদির, আবুল ফজল, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ ঢাকায় ১৯২৬ সালে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ নামে এ সংগঠনটি গড়ে তোলেন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’-এর মুখপত্রের নাম ‘শিখা’।

১১. ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ এমন কয়েকটি পত্রিকার নাম লিখুন।

উত্তর : শিখা, প্রগতি, ক্রান্তি, লোকায়ত ।

১২. কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত তিনটি পত্রিকার নাম লিখুন।

উত্তর : ধূমকেতু (১৯২২), লাঙ্গল (১৯২৫), নবযুগ (১৯৪১)।

১৩. ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকাটি কোন প্রকৃতির? কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?

উত্তর : ষাণ্মাসিক। বাংলা একাডেমী থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।

১৪. বিশ শতকের একটি সাময়িকপত্রের পরিচিতি লিখুন।

উত্তর : বিশ শতকের তথা সমগ্র বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিশিষ্ট পত্রিকা ‘কল্লোল’। দীনেশরঞ্জন দাসের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে এই মাসিক সাহিত্য পত্রিকাটি অতি আধুনিক লেখকগোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। তৎকালীন তরুণ লেখক রবীন্দ্র বিরোধিতার নাম করে এখানে সমবেত হয়েছিলেন। কল্লোল প্রায় সাত বছর চলেছিল, কিন্তু এই অল্প সময়েই একটা প্রগতিশীল লেখকগোষ্ঠীর সমাবেশ ঘটাতে পেরেছিল। এ পত্রিকায় যারা নিয়মিত লিখতেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। এই লেখকেরা তৎকালীন ইউরোপীয় আদর্শে বাস্তব জীবন, মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়কে তাঁদের রচনার উপজীব্য করছিলেন।

১৫. ঢাকার বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পরিচয় দিন।

উত্তর : বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার-বিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। ১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মাধ্যমেই এ আন্দোলন গড়ে ওঠে। সাহিত্য সমাজের মূল বাণী ছিল : ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এ কথাটি সমাজের বার্ষিক মুখপত্র শিখার শিরোনামের নিচে লেখা থাকত। তখন শিখা পত্রিকায় যাঁরা লিখতেন তাঁরা ‘শিখাগোষ্ঠী’ নামে পরিচিত ছিলেন।

বাংলার মুসলমান সমাজে যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা বিরাজমান ছিল, সেসব দূরীকরণই ছিল এ আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ধর্মবিশ্বাস, পর্দাপ্রথা, সুদপ্রথা, নৃত্যগীত ইত্যাদি সম্পর্কে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনভাবে মতামত ব্যক্ত করতেন। সাহিত্য সমাজের বিভিন্ন সভায় পঠিত এবং শিখা পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধে তাঁদের চিন্তা ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটতো। শিখাগোষ্ঠীর এসব বক্তব্য তৎকালীন ঢাকার রক্ষণশীল সমাজ মেনে নেয়নি; যার ফলে আবুল হুসেনকে জবাবদিহি করতে হয় এবং শেষপর্যন্ত তাঁকে চাকরি ও ঢাকা ছাড়তে হয়। ১৯৩১ সালে তাঁর ঢাকা ত্যাগের ফলে আন্দোলনে ভাটা পড়ে এবং ১৯৩৮ সালের পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

Similar Posts