কোরিয়া যুদ্ধ শুরু হয় ২৫ জুন, ১৯৫০ সালে। যুদ্ধটি মূলত পুঁজিবাদি দক্ষিণ কোরিয়া এবং কমিনিস্ট উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সংগঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন বিশ্বের পরাশক্তিদের আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলছিল তখনই কোরিয়া যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধটি ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের প্রথম প্রদক্ষেপ।
কোরিয়া উপদ্বীপটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত জাপানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর এটি মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত অধিকারে চলে যায়।১৯৪৮ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নামে দেশ দুটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশ দুটি ৩৮ সমান্তরালে বিভক্ত ছিল।
কোরিয়া যুদ্ধে পরাশক্তি সোভিয়েত ও আমেরিকা পরস্পর দু মেরুতে অবস্থান নেয়। সমাজতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়া ছিল সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত। তাই কোরিয়া যুদ্ধে সোভিয়েত উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দেয়। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া ছিল প্রজাতান্ত্রিক তাই আমেরিকার তাদের সমর্থন দেয়।
তবে উত্তর কোরিয়া নেতা কিম ইল সুং দুই কোরিয়াকে এক করার পরিকল্পনা করে এবং পরিকল্পনা মত উত্তর কোরিয়া সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করলে যুদ্ধ বেঁধে যায়। দেশ দুটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সহিংশতা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। যার ফলে যুদ্ধ শুরুর আগেই উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ১০.০০০ হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয়েছিল।
৩ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে উত্তর কোরিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং চীনের ৩০ মিলিয়নের ও বেশি সৈন্য অংশ নিয়েছিল। এর ফলে কোরিয়া যুদ্ধটি একটি ভয়াবহ যুদ্ধে পরিণত হয়। যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার ১.২ মিলিয়ন সৈন্য এবং উত্তর কোরিয়ার ১ মিলিয়নের মত লোক মারা যায়। এছাড়া প্রায় ৪০,০০০ মার্কিন সেনা ও ৬০,০০০ চীনা সৈন্য মারা যায়।
অবশেষে জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে আর্মেসিস্ট চুক্তির মাধ্রমে ১৯৫৩ সালের ১৭ ই জুলাই কোরিয়ান যুদ্ধের অবসান ঘটে। সব মিলিয়ে এই যুদ্ধে বেসামরিক ও সামরিক মারা যায় প্রায় ৫ মিলিয়ন। তবে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হলেও এখনও সীমান্ত সংঘাত নিত্য দিনের ঘটনা।
জাপান ১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত কোরিয়া অঞ্চলটি শাসন করে আসছিল। দখলকৃত কোরিয়ায় তখন বিভিন্ন জাতীয়বাদি গোষ্ঠী স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে কোরিয়ানদের মধ্রে ব্যাপক বিভক্তি ছিল বিধায় তারা এক হতে পারেনি। তারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চীনে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান শাসন থেকে কোরিয়া মুক্ত হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সোভিয়েত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনের ভূমিকা পালন করে। ১৯৪৫ সালের আগস্টে কোরিয়াকে ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা বরাবর বিভক্ত করা হয়। ৩৮ ডিগ্রির উত্তরের অংশ উত্তর কোরিয়া এবং এর দক্ষিণে দক্ষিণ কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়ায় তখন সোভিয়েত প্রভাবিত কমিনিস্ট শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে। অপর দিকে দক্ষিণ কোরিয়া ছিল পুঁজিবাদি আমেরিকার প্রজাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। স্বাধীনতার পর থেকে উত্তর কোরিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহার্য সহযোগিতায় তাদের শক্তি বাড়াতে লাগল। এর ফলে প্রায় সময় তারা দক্ষিণ কোরিয়ার বর্ডারে এসে হামলা চালাতো।