পার্বত্য জেলা স্থানীয় পরিষদ ৩ টি জেলাকে নিয়ে গঠিত। জেলা তিনটি হচ্ছে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, এবং বান্দরবন। বাংলাদেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে এই তিনটি জেলার স্থানীয় পরিষদ আলাদাভাবে গঠিত হয়। মূলত পার্বত্য জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য ১৯৮৯ সালে ৪র্থ জাতীয় সংসদে পার্বত্য জেলা স্থানীয় পরিষদ আইন পাস হয়।
পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন আইন ১৯৮৯
তিনটি পৃথক পৃথক আইনে পার্বত্য জেলা স্থানীয় পরিষদ গঠিত। আইনটি তিনটি হচ্ছে,
১. পার্বত্য রাঙামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯
২. পার্বত্য খাগড়াছড়ি স্থানী সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯
৩. পার্বত্য বান্দরবন স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯
স্বাধীনতার বহু পূর্বে অঞ্চলটি একটি স্বতন্ত্র এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হলে এটি পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এছাড়া ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর অঞ্চলটি বাংলাদেশের অধিভুক্ত হয়। স্বাধীরতার পর পার্বত্য অধিবাসীরা স্বায়ত্ব শাসন দাবি করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের যাবতীয় সংরক্ষণ এবং অবাঙালিদের উচ্ছেদের দাবি জানায়।
তাদের এসকল দাবি প্রত্যাখান হলে এরা শসস্ত্র বিদ্রোহ করে। তারা শান্তি বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি দাওয়া এবং পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ফিরিয়ে আনতে ১৯৮৯ সালে আইন পাস করে সরকার।
ফলে ১৯৮৯ সালে পার্বত্য তিন এলাকায় তিনটি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে আদিবাসি বা উপজাতিদের মধ্যে থেকে। এছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক বাঙালি ও উপজাতি সদস্য সমন্বয়ে পরিষদ গঠন হবে।
১. রাঙামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন
সর্বমোট একুশ জন (চেয়াম্যান সহ) রাঙামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত। পার্বত্য রাঙামাটি পরিষদে ২০ জন সাধারণ উপজাতীয় গোষ্ঠী এবং ১০ জন অ-উপজাতীয় নিয়ে গঠিত।
সদস্যের মধ্যে,
চেয়ারম্যান- ১ জন (উপজাতিদের মধ্য থেকে)
চাকমা- ১০ জন
মারমা- ৪ জন
টেনচেইঙ্গা- ২ জন
ত্রিপুরা- ১ জন
লুসাই- ১ জন
পাংখু- ১ জন
খিয়াং- ১ জন
অ-উপজাতি- ১০ জন যারা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।
২. খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন
খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ অনুসারে, একজন চেয়ারম্যান, ২১ জন উপজাতীয় সদস্য এবং ৯ জন বাঙালি সদস্যের সমন্বয়ে খাগড়াছড়ি স্থানীয় পরিষদ গঠিত হবে।
সদস্যদের মধ্যে,
চেয়ারম্যান- ১ জন (উপজাতি থেকে)
চাকমা- ৯ জন
ত্রিপুরা- ৬ জন
মারমা- ৬ জন
অ-উপজাতি- ৯ জন
৩. বান্দরবন স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন
বান্দরবান স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ অনুসারে, একজন চেয়ারম্যার, ১৯ জন উপজাতীয় সদস্য, এবং ১১ জন অ-উপজাতীয় সদস্য নিয়ে গঠিত হবে।
সদস্যদের মধ্যে,
চেয়ারম্যান- ১ জন
মারমা- ১০ জন
মুরং- ৩ জন
ত্রিপুরা- ১ জন
টেনছেইঙ্গ- ১ জন
চাকমা- ১ জন
খাসিয়া- ১ জন
বন- ১ জন
পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলী
- জেলার সার্বিক আইন শৃংখলা সংরক্ষণ এবং উন্নতি সাধন করা।
- শিক্ষা বিস্তারে কাজ করা।
- কৃষি ও পার্বত্য অঞ্চলের বন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।
- পশুপালন এবং জেলার মৎস্য সম্পদের উন্নতি সাধন করা।
- উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় ও বাস্তবায়ন
- পার্বত্য অঞ্চলে শিল্প, বাণিজ্যের প্রসার করা।
- সুপিরিয় পানির ব্যবস্থা করা।
- স্বাস্থ্য সচেতনা তৈরি করা
- ধর্মীয় ও উপজাতি সাংস্কৃতির কর্মকান্ড পরিচালনা এবং বাস্তবায়ন করা।