বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের ভূমিকা

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের স্বার্থে স্বাধীনতার পক্ষে অথবা বিপক্ষে ভূমিকা রেখেছিল। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ এমন সময়ে হয়েছিল যখন বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) এবং আমেরিকার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। এই ঠান্ড যুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একদম প্রথম থেকেই সোভিয়েত সমর্থন পেয়ে আসছিল। বিপরীতে মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন দেয়। যদিও আমেরিকার জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল।
বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশসমূহের ভূমিকাও ছিল স্বার্থন্বেষী। ভারত সরকার এবং তার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সাহার্য সহযোগিতা করে। কারণ ঐতিহাসিকভাবে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব ছিল বহু বছরের। এছাড়া ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তি ও পরবর্তীতে কাষ্মীর প্রশ্নে পাক-ভারত যুদ্ধ মূলত বাংলাদেশের যুদ্ধে ভারতের সমর্থনে ভূমিকা পালন করে।
প্রতিবেশি দেশ চীনের ভূমিকা ছিল সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে। চীনের সাথে ভারতের সীমানা কেন্দ্রীক দ্বন্দ্ব সব সময় লেগেই থাকে। চীনের ভারত বিদ্ধেষ থাকার কারণে শুরু থেকেই চীন বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
মুক্তযুদ্ধে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, যুদ্ধটি ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে। দ্বিতীয়ত, মুসলিম বিশ্ব কখনই চাইবেনা পাকিস্তানের মসলিমরা বিভক্ত হয়ে পডুক। তৃতীয়ত, ইসরাইল মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়া। চতুর্থত, ভারতের চক্রান্তে পাকিস্তানকে দুই অংশে আলাদা করা। এছাড়াও রয়েছে মুসলিম বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য না পৌছানো।
আজকের আলোচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভূমিকা
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা ছিল মূলত ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে। ফলে মার্কিন প্রশাসন সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান করে। তবে মার্কিন প্রশাসন এবং তাদের দেশের জনগণের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তাদের দেশের গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবী, সরকারী কতিপয় কর্মকর্তা, এবং বিশেষ করে আমেরিকার সাধারণ জনগণ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে।
বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরি করতে আমেরিকার পত্র পত্রিকা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউজউইক ম্যাগাজিন,ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, এবং বাল্টিমোর সান ইত্যাদি পত্রিকা অন্যতম। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত মার্কিন নীতি ছিল মূলত নিরপেক্ষতা। তারা এটিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে। কিন্তু ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিং মার্কিন প্রশাসনের এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে বলেন, ‘‘পূরব পাকিস্তানের ঘটনা কোন অভ্যন্তরীন ঘটনা হতে পারে না। এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখতে পারে না।
ফলে প্রবল চাপে মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ ও যাবতীয় সহযোগিতা স্থগিত রাখে। কিন্তু গোপনে মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানকে সামরিক সাহার্য অব্যাহত রাখে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন নীতির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। হেনরী কিসিঞ্জার কূটনৈতিক কারণে চীন ভ্রমণ করে চীনের সমর্থন লাভ করে এবং চীনের জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা করার একমাত্র কারণ ছিল সোভিয়েত আধিপত্য কমানো। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তান নীতি সক্রিয় লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে যখন ভারত বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠিত হয় তখন মার্কিন প্রশাসন জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের আহবান করে।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রশাসন প্রতিশ্রুত ভারতের জন্য ৮৬.৬ মিলিয়ন ডলার সাহার্য বন্ধ করে দেয় এবং জাতিসংগের মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখে। তবে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা বাংলাদেশকে প্রথম থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছিল। মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি এবং ফ্রেড হ্যারিস পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা পূর্ব পাকিস্তানে রক্তপাত বন্ধে এবং দু:স্থদের সাহায্যের দাবি জানায়।
মার্কিন সাংস্কৃতিক শিল্পীরা বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। মুজিব নগর সরকারকে সহযোগিতা এবং ভারতে আশ্রয় নেয়া ১ কোটি শরণার্থীকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য ১ আগস্ট নিউইয়র্কে একটি কনসার্টের আয়োজন করে। এতে শিল্পী হিসেবে ছিলেন জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, লিয়ন রাসেল, পন্ডিত রবি সংকর প্রমুখ। কনসার্টের নাম দেওয়া হয় Concert for Bangladesh
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মার্কিন সাংবাদিক কর্মীদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। তাদের সংবাদের ভিত্তিতেই সারা বিশ্ব পূর্ব পাকিস্তানের নৃশংশ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জানতে পারে। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইটের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিদেশী সাংবাদিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদকর্মী সিডনি এইচ. শনবার্গ গোপনে ভারতের মুম্বায়ে আশ্রয় নিয়ে ২৮ মার্চ ঢাকার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ২৮ মার্চ তিনি ঢাকার জনগণ ট্যাংকারের বিরুদ্ধে লাঠি দিয়ে লড়াই করছে শিরোনামে আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়া ৩০ মার্চ নিউইয়র্ক পোস্ট, ৫ এপ্রিল নিউজউইক পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা
 
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরাশক্তিদের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) শুরু থেকেই বিরাট ভূমিকা পালন করে। পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা এবং নির্মম অতঅচারের নিন্দা জানায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। যদিও স্নায়ু যুদ্ধের কারণে প্রতিপক্ষ আমেরিকার বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রশ্নে তারা বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। এছাড়া এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য বিস্তাররোধ করতে সোভিয়েত সংকল্পবদ্ধ ছিল। ৯ আগস্ট সোভিয়েত এবং ভারত মৈত্রী জোট গঠন করে প্রতিপক্ষ চীন ও আমেরিকার বিরুদ্ধে, যদি তারা (আমেরিকা ও চীন) যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পরাজয় দেখে নিক্সন মার্কিন ইউএসএস এন্টারপ্রাইজকে ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করেন। এর জবাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিউক্লিয়ার মিশাইলবাহী দুটি ডুবো জাহাজ বঙ্গোপসাগরে প্রেরণ করে। এর পূর্বে ৪ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতি এবং সৈন্য প্রত্যাহারের জাবি তোলেন। নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অনতিবিলম্বে যুদ্ধ স্থগিত, ভারত পাকিস্তানের সৈন্য নিজ দেশে ফিরিয়ে যেতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে এক প্রস্তাব দেন। কিন্তু এই প্রস্তাব একতরফা বলে সোভিয়েত এতে ভেটো প্রদান করে।
চীন ও মার্কিন যুদ্ধ বিরতির প্রশ্নে সোভিয়েত ভেটোর বিষয়ে কারণ ছিল মূলত বাংলাদেশ সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের। কিন্তু ভারতীয় বাহিনীর ঢাকা দখল করার পর সোভিয়েত আর যুদ্ধ বিরতির প্রশ্নে ভেটো দেয়নি। ফলে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পনের পর ২১ ডিসেম্বর যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব গৃহীত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বাংলাদেশপন্থী নীতি গ্রহনের প্রধান কারণ হচ্ছে চীনের প্রভাব হ্রাস এবং প্রতিদ্বন্দ্বী একমাত্র রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কূটনৈতিক বিজয় লাভ করা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকাঃ

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই চীন সরকার কট্টর পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করে । যা স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙ্গালী বিশেষ করে বামপন্থীদের জন্য গভীর হতাশা সৃষ্টি করে। প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মুক্তিযুদ্ধে চীনের অনুসৃত নীতির দুটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেন। প্রথমত, চীন সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে পাকিস্তান সামরিক চক্রের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় । মুক্তিযুদ্ধে চৈনিক নীতির দুটি পর্যায় ছিল।

চীন গোড়া থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিষয়ে তার নীতি নির্ধারণ করে । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের গণহত্যার সূচনার পর প্রায় ১৫ দিন মৌন থাকলেও ১১ এপ্রিল প্রথম সরকারি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে । ওইদিন জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে দেয়া এক পত্রে চৈনিক প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই পাকিস্তানে ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের’ বিরুদ্ধে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় চীন সরকার ও জনগণের সকল সময় সমর্থনের আশ্বাস দেন। পাকিস্তানে সংঘটিত ঘটনাকে তাদের ‘ অভ্যন্তরীণ সমস্যা’ বলে চীন সরকার চিহ্নিত করে পাকিস্তানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির একমাত্র শর্ত হিসেবে পাকিস্তানের দু’অংশের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার উপর জোর দেয় । ন্যাপ সভাপতি মওলানা আব্দুল খান ভাসানী মুক্তিযুদ্ধে চৈনিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন । হতাশ পিকিংপন্থীদের মধ্যে ভাসানীপন্থী ন্যাপসহ আরো কয়েকটি ছোট গ্রুপ বিচ্ছিন্নভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলেও চীনের এই ভূমিকার কারণে পিকিংপন্থী গ্রুপগুলো বড় অংশই প্রকাশ্যে, গোপনে এবং কর্মকান্ডের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী অবস্থান নেয় ।

যদিও চীন মুক্তিযুদ্ধে আগাগোড়া কৌশলী ভূমিকা নেয়। তবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রকাশ্যে পাকিস্তান সমস্যা সম্পর্কে মন্তব্য করেনি।
এ সময় পাকিস্তানকে গোপনে সামরিক ও নৈতিক সমর্থন অব্যাহত রেখেছে । জুলাই মাসে ড. কিসিঞ্জারের পিকিং সফরের ফলে চীন পাকিস্তানপন্থী নীতিতে আগের চেয়ে সক্রিয় হয় । আগস্ট মাসে রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে চীন শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সেপ্টেম্বরে চীন পাকিস্তানকে নতুন করে আশ্বস্ত করে জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার ন্যায়সংগত সংগ্রামে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে। যদিও বার বার পাকিস্তানের অনুরোধ সত্ত্বেও চীন পাকিস্তানের সাথে কোন সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়নি । তবে বরাবরের মতো চৈনিক সামরিক, নৈতিক সহায়তা অব্যাহত থাকে । ২৯ নভেম্বর চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন নিয়েন পাক-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য রাশিয়া ও ভারতেকে দায়ী করেন । ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে জাতিসংঘের সদস্য হয়ে এর পরের মাসেই চীনা প্রতিনিধি দলের নেতা চিয়ান কুয়ান দুয়া দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য রুশ-ভারত মৈত্রী চুক্তিকে দায়ী করেন । ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধের আগে পর্যন্ত এ নীতি চীন অব্যাহত রাখে ।

চৈনিক নীতির দ্বিতীয় পর্যায় (৩- ১৬ ডিসেম্বর ) ঃ

৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে চীন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে । চীন জাতিসংঘে সরাসরি রাশিয়া ও ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নেয়। এ যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন কে দায়ী করে একে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় । এর ফলে বাংলাদেশ ইস্যু নয় রুশ-চীন দ্বন্দ্বই প্রকট হয়ে উঠতে থাকে । ৫ ও ৭ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করে । প্রস্তাবগুলোর লক্ষ্য ছিল যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে ‘পূর্ব-পাকিস্তানের’ জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান বের করা । এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে চীন প্রথম ভেটো প্রয়োগ করে । ৫ ডিসেম্বর চীন এক প্রস্তাবে ভারতকে আক্রমণকারী হিসেবে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে চীন এক বিবৃতিতে ‘তথাকথিত বাংলাদেশ’ সৃষ্টির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের তীব্র সমালোচনা করে ।

এভাবে দেখা যায় যে, চীন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই পাকিস্তানপন্থী নীতি গ্রহণ করে । নৈতিক সমর্থন ছাড়াও গোপনে প্রচুর অস্ত্র পাকিস্তানকে সরবরাহ করে । পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণের পর যে সকল অস্ত্র বাংলাদেশে উদ্ধার করা হয় এর ৬০% চৈনিক এবং ৪০% মার্কিন ছাপযুক্ত অস্ত্র । এর থেকে ‘নিপীড়িত জনগণের বন্ধু’ হিসেবে দাবিদার চীনের হীন ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠে । পাক-ভারতের যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘের নবীন সদস্য হয়েও বারবার পাকিস্তানের পক্ষে ভূমিকা রাখে । এমনকি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ওইদিনই চীন সরকার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশকে ‘রুশ-ভারতের সৃষ্টি ‘ বলে মন্তব্য করে ।

 

মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের ভূমিকাঃ

পাকিস্তান যেহেতু মুসলিম প্রধান দেশ তাই পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় মুসলিম বিশ্ব তাদেরকে সমর্থন দেয়। এমনকি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সংগঠন ওআইসি ও আরব লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নির্যাতন, এবং গণহত্যার পরেও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি।
মুসলিম বিশ্ব পাকিস্তান নীতি গ্রহণ করার অনকেগুলো কারণ রয়েছে। তারমধ্যে,
পাকিস্তানের দু অংশের ইসলামি সংহতি রক্ষা, এবং পাকিস্তানের উভয় অংশের ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষায় মুসলিম বিশ্ব সরাসরি পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যে, এটি ভারতের হিন্দুদের অপপ্রয়াস। তারা (হিন্দুরা) পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংহতি বিনষ্ট করে আলাদা করতে চায়। পাকিস্তানের সংবাদপত্র ভারতে গমণকারী শরণার্থীদের হিন্দু হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে।
এছাড়াও মুসলিম বিশ্বে এটিকে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হিসেবেও দেখানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদেরকে ভারতীয় এজেন্ট বলে আখ্যায়িত করেছে। মুসলিম বিশ্বের কাছে এমনভাবে প্রচার করেছে যে,  পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হলে দেশটি হবে একটি কমিনিষ্ট ও ধর্মহীন রাষ্ট্র। আর ভারতের হস্তেক্ষেপের বিষয়টিকে মুসলিম বিশ্ব স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি।
মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক থাকার কারণে তারা পাকিস্তান নীতি গ্রহণ করে। এই নীতির পিছনে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সার্বিক সমর্থনে পাকিস্তানকে আরো বেশি আরব বিশ্বের সমর্থন এনে দেয়। ১৯৬৭ সাল থেকে সৌদি আরব সহ আরব বিশ্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশিক্ষণ, এবং যাবতীয় অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে পাকিস্তানের উপর নির্ভর হয়ে পড়ে। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য সহ মুসলিম দেশগুলো পাকিস্তানকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়।
সত্তর এর দশকে পরাশক্তি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মুসলিম বিশ্বের ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। কারণ চীন পাকিস্তানের মাধ্যমে আরব বিশ্ব, বিশেষ করে ইরান, ইয়েমেন, মিশর, এবং সিরিয়ার মত দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুনভাবে স্থাপন করে।
এসময় পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল সমূহ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখে। অধিকাংশ মুসলিম দেশে তাদের দ্রুতাবাস থাকায় মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত বিরোধী প্রচারণা চালাতে ব্যাপক সাহার্য করেছিল।
মুসলিম বিশ্বের বাংলাদেশ বিরোধিতার আরো একটি অন্যতম কারণ ছিল ইসরাইল রাষ্ট্রের বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ইসরাইলের পার্লামেন্টে পাকিস্তান সামরিক চক্রের নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ও  গণহত্যাকে নিন্দা করে একটি প্রস্তাব পাশ করে। এছাড়া বাংলাদেশের জন্য ঔষধ, বস্ত্র ও খাবার পাঠানোর ঘোষণা দেয়। ইসরাইলের এসকল নীতি মুসলিম বিশ্বকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। আরব বিশ্ব বুঝতে পারে যে এটি মুসলিম বিরোধী একটি চক্রান্ত। যদিও বাংলাদেশের প্রবাসি সরকার ইসরাইলের যাবতীয় সহযোগিতা সরাসরি প্রত্যাখান করে।
মুসলিম বিশ্বের কাছে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও গণহত্যার মত বিষয়গুলো বিশ্ব মিড়িয়ায় জোরালোভাবে প্রকাশ করেনি। এর ফলে মুসলিম বিশ্ব এ ব্যপারে তেমন কিছুই সঠিকভাবে জানতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম দেশগুলো পাকিস্তানের প্রতি নীতি গ্রহণের বিবেচনায় দেশগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম দেশ। এ তালিকায় আছে ইরান, সিরিয়া, সৌদি আরব,লিবিয়া, জর্ডান, এবং তুরস্ক। এই প্রতিক্রিয়াশীল দেশগুলো মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানকে একতরফাভাবে সমর্থন দিয়ে এসেছিল।
দ্বিতীয়ত, মধ্যমপন্থী মুসলিম দেশ। এ তালিকায় আছে ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, আফগানিস্তান, মিশর, ইরাক, লেবানন, এবং সুদান। এসকল দেশ পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ড রক্ষায় পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিলেও পাকিস্তানের নির্বিচার গণহত্যাকে মেনে নেয়নি।
তৃতীয়ত, মৌন সমর্থনকারী মুসলিম দেশ। এ তালিকায় রয়েছে নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সোমালিয়া, উত্তর ইয়েমেন, তিউনেশিয়া, মৌরিতানিয়া অন্যতম। তবে এ দেশগুলোর তখন আন্তর্জাতিক তেমন কোন প্রভাব ছিলনা বিধায় তারা এরকম পক্ষ নিতে বাধ্য হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা:

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ভূমিকা রাখতে ভারতকে হারাতে হয়েছিল বহু অফিসার ও সৈনিককে। ১৯৭১ সালে র্পূব ও পশ্চিম রণাঙ্গন মিলে শহীদ ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা ৩৬৩০ জন, নিখোঁজ ২১৩ জন এবং আহত ৯৮৫৬ জন। যাঁদের রক্ত এই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে মিশে রয়েছে।বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

২৬ মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী কাছে একটি বার্তা বা বাণী প্রেরণ করেন তিনি সেখানে উল্লেখ করেছিলেন “This may be last message to you from today Bangladesh is independent” এটাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঐ মুহূর্ত থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। অতপর ৪ এপ্রিল ১৯৭১সিলেটের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে (বর্তমান হবিগঞ্জ ) এমএজি ওসমানের নেতৃত্বে ৫০০০সামরিক ও ৮০০০বেসামরিক মোট ১৩ হাজার যোদ্ধা নিয়ে মুক্তিফৌজ নামে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়েছিল। ১২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে মুক্তিফৌজ নাম পরিবর্তন করে বাহিনীটির নামকরণ করা হয় মুক্তিবাহিনী।
পরবর্তীতে বিদেশে অর্থাৎ প্রবাসী সরকার গঠন করা হয় এবং এই সরকার মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশের প্রথম সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নির্দেশে প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। কিন্তু এরপরেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা বেশ দুরূহ ছিল।আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যুদ্ধের সূচনা লগ্ন থেকেই আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে এবং ওতপ্রোতভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল। কাজেই এই প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা আলোচনা করা প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের শরণার্থীদেরকে আশ্রয় প্রদা

মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের শরণার্থীদেরকে আশ্রয় প্রদানঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল। ভারত সরকারের মতে নভেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশের মোট শরণার্থী ছিল ৯৮,৯৯,৩০৫ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ শরণার্থী সরকারনিয়ন্ত্রিত শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শরণার্থী বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে সবচাইতে বেশি শরণার্থী ক্যাম্প ছিল পশ্চিমবাংলায় এখানে শরণার্থী ক্যাম্প ৪৯২ টি, এরপর ত্রিপুরা রাজ্যে ২৭৬ টি, এসব জাগয়া ছাড়া্ও আসাম, মেঘালয়, বিহার এবং ভারতের উত্তরপ্রদেশে শরণার্থী ক্যাম্পগুলো অবস্থিত ছিল। যেখানে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকাঃ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারত সরকার শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে ছিল। এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তিনি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।১৮ মে ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বের বৃহৎ শক্তির কে উদ্দেশ্য করে বলেন “ শরণার্থীদের বোঝা বহন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসা উচিত।” তার এই বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি বিশেষ জায়গায় পৌঁছানোর জন্য শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা ছিল অবিস্মরনীয়।
সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানঃ মুক্তিযুদ্ধে আগ্রহী বাংলাদেশিদেরকে ভারতীয় বাহিনী সেদেশে সরাসরি অস্ত্র ও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধ উপযোগী করে আবার বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। এবং এ সময় ভারতের দেরাদুন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশি জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এবং পরবর্তীতে তারা আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিচালনা সহযোগিতায়

২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে চৌধুরী বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র নামে একটি বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরদিন ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বিপ্লবী শব্দটি বাদ দিয়ে বেতার কেন্দ্রের নাম করণ করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।এই বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় বিভিন্ন বুলেটিন,চরমপত্র সহ মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান, গল্প, গান ইত্যাদি প্রচার করা হতো। কিন্তু ৩০ মার্চ ১৯৭১সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এই কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বোমা নিক্ষেপ করলে বেতার কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর সম্প্রচার যন্ত্রটি অকেজো হয়। এরপর এই বেতার কেন্দ্রের কলাকুশলী যখন ভারতে প্রবেশ করে তখন ভারত সরকার এদেরকে ট্রান্সফর্মার দিয়ে সহযোগিতা করেন। শুধু তাই নয় কলকাতায় এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অফিস প্রতিষ্ঠা করতে ভারত সরকার সহযোগিতা করে। এবং পুরো যুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিভিন্ন ধরনের সংবাদ, অনুষ্ঠান প্রচার করে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখে এবং এর পেছনে সরাসরি ভারত সরকারের সহযোগিতা ছিল।
যৌথবাহিনী গঠনঃ ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে এমএজি ওসমানী ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী’ গঠনের ঘোষণা দেন। এবং তিনি ২১ নভেম্বর থেকে যৌথবাহিনী একসাথে কাজ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণঃ ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী ভারত কে আক্রমণ করলে ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত অন্যতম বৃহৎ শক্তি হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। এবং স্বীকৃতি প্রদান করে বাংলাদেশের সব সময় সর্বদা সহযোগিতা করেছে।ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পর ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী আনুমানিক ৯৩ হাজার ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরা্ওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর অধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা একথা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী ওতপ্রোতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এবং বাংলাদেশ ১৬ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় রচনার ক্ষেত্রে ভারত সরকার এবং ভারতীয় বাহিনীর বিশেষ সহযোগিতা করেছিল সেটা অনিস্বীকার্য। এছাড়া ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা হাত অব্যাহত রেখেছে। কাজেই একথা আমরা বলতে পারি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বাঙালি জাতি কখনোই ভুলতে পারবে না বলে আমি মনে করি।

Similar Posts