Modal Ad Example
International

বেদুইন কারা?

1 min read
বেদুইন নামটি যখন ছোটবেলায় শুনতাম তখন মনের মধ্যে একরকম বীরত্বভাব চলে আসতো। আরবের এই বেদুইন যাযাবর যোদ্ধা জাতি হিসেবে খ্যাত। মরুভুমির বালু উড়িয়ে উদ্যম ছুটে চলা যাদের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই সব বেদুইনদের সাহসী জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পারি আমাদের মহান কবিদের কবিতা থেকে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ”দুরন্ত আশা” কবিতায় বেদুইনদের উদ্যম বাঁধনহারা জীবন নিয়ে লিখেন,
ইহার চেয়ে হতেম যদি
       আরব বেদুয়িন!
চরণতলে বিশাল মরু
       দিগন্তে বিলীন।
ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি,
জীবনস্রোত আকাশে ঢালি
হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি
       চলেছি নিশিদিন।
বর্শা হাতে, ভর্‌সা প্রাণে,
       সদাই নিরুদ্দেশ,
মরুর ঝড় যেমন বহে
       সকল বাধাহীন।
রবীন্দ্রনাথের পথ ধরে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবিতায় বেদুইন হওয়ার মনোবাসনা ব্যক্ত করেন এভাবেই, ‘আমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!’

বেদুইন কে?

বেদুইন শব্দটি আরবি শব্দ থেকে আগত যার অর্থ “মরুভূমির বাসিন্দা।  এই শব্দটি কেবল মরুভূমির উট-পালক যাযাবর জাতিদের বোঝায়, তবে ইংরেজিতে এটি সমস্ত যাযাবর আরব সম্প্রদায়  বলতে বোঝায়। বেদুইন-আরব মূলত মিশর, ইস্রায়েল, জর্ডান, লেবানন, সৌদি আরব, সিরিয়া, মধ্য প্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাস করে। ঐতিহ্যগতভাবে  বেদুইনরা উট, ভেড়া এবং ছাগল লালন-পালনের মাধ্যমে জীবনযাপন করে থাকে। এই সম্প্রদায় নিজেদেরকে প্রকৃত আরব দাবী করে।
ঐতিহাসিকভাবে বেদুইনরা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ সাল থেকে যাযাবর বৃত্তি, কৃষিকাজ এবং কখনও কখনও সিরিয়ার প্রান্তরে মাছ ধরে জীবনযাপন করত। খ্রিস্টপূর্ব ৮৫০ সালের মধ্যে তারা একটি মিশ্রিত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত করে। তখন তাদের আয়ের একটি প্রধান উৎস ছিল মরু ভুমির কাফেলা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা।
তাছাড় মরুভূমিতে গৃহপালিত উট দ্বারা পণ্য টানা এবং কাফেলার লোকজন পরিবহণের মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন অর্জন করত। পানির অভাব এবং স্থায়ী জমির অবিচ্ছিন্নতার জন্য তাদের ক্রমাগত একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রস্থান করতে হতো।
বিংশ শতাব্দির শেষের দিকে আরব অঞ্চলে তেল আবিষ্কার হওয়ার ফলে এখানে নগরায়ন ঘটে যার ফলে বেদুইনরা শহরমুখি বিলাস জীবনযাপনে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। মাত্র  ৫ শতাংশ বেদুইন এখন যাযাবর জীবন অতিবাহিত করছে, বাকিরা গ্রাম এবং শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে শুরু করে দিয়েছে।
শুরুতে বেদুইনদের অধিকাংশ ছিল প্রকৃতি পূজারি। ধর্মীয় উপাসনা হিসেবে বিভিন্ন মূর্তি পূজা করত। ইসলামের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) যখন আরবে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন তখন দলে দলে বেদুইনরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা লাভ করে। সেই থেকে তারা মূলত সুন্নি মুসলিম হিসেবে পরিচিত।

বেদুইন বিবাহ

বেদুইনদের বিবাহ, ধর্মীয় এবং সামাজিক উভয়ই তাৎপর্য থাকে। এটি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ  যৌন সম্পর্ককে বৈধতা দেয় এবং প্রজননের কাঠামো ঠিক রাখে। বেদুইনদের বিয়ে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেবল কনে এবং বরকেই নয় বরং তাদের উভয়  পরিবার এবং হামেলকেও একত্রিত করে। বেদুইনদের মধ্যে অধিক বিবাহের প্রচলন রয়েছে।
তারা স্ত্রীদের সম্মতি ছাড়াই একের অধিক বিয়ে করে থাকে। কিছু বেদুইনদের জন্য বহু বিবাহ ধন এবং দক্ষতার পরিচয় বহন করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রীর অসুস্থতা বা বন্ধ্যাত্ব, পুত্র সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ এবং স্বামীর যৌন চাহিদা মেটাতে না পারার কারণে তারা বহু বিবাহ করে।
বেদুইন ছেলে-মেয়ের কোন অবৈধ সম্পর্ক থাকতে পারেনা।  কিশোরী বা যুবতী মেয়ে যদি কোন ছেলের সাথে যোগাযোগের সত্যতা উঠে তখন তাকে শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয় এবং তার চলাচল এবং যোগাযোগের স্বাধীনতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

বেদুইন খাদ্য

বেদুইনরা প্রধান খাদ্য হিসেবে রুটি, মাংস, দুধ এবং বিভিন্ন পশুর মাংস খেয়ে থাকে। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় তারা খেজুর খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারে। এই  জন্য তারা প্রচুর খেজুর চাষ করে।  শীতকালে খাওয়ার জন্য খেজুর শুকনো করে সংরক্ষণ করে রেখে দেয়। এছাড়াও কপি তাদের জন্য ঐতিহ্যবাহী খাদ্য হিসেবে পরিচিত। তারা দিনের একটি বড় সময় ধরে কফি পান করে এবং এই কপি তৈরি করা তাদের জন্য ছোট খাটো আনন্দের সমান।
বেদুইন কারা, azhar bd academy
Image source:pixabay.com
বসন্তে দুই থেকে তিন মাস ধরে অনেক বেদুইন মরুভূমিতে তাদের চিরাচরিত  জীবনে ফিরে আসে। এর অন্যতম প্রধান কারণ যাতে তাদের ভেড়া ও ছাগলের পাল পুষ্টিকর মরুভূমির উদ্ভিদ খেতে পারে। প্রতি সন্ধ্যায় মহিলারা ছাগল থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। এই দুধের বেশিরভাগই কোনও “প্রক্রিয়াজাতকরণ” ছাড়াই তাজা খাওয়া হয়। বেদুইনরা এই দুধটিকে “হালিব” বলে।
5/5 - (17 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x