অনেক শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা মাস্টার্স শেষ করার পরেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। এক্ষেত্রে তাদের জন্য দুটি বিকল্প পন্থা রয়েছে, যেমন এম.ফিল এবং পিএইচডি করা। উভয়ই গবেষণা ভিত্তিক উচ্চতর ডিগ্রি। যাইহোক, পিএইচডি বা ডক্টর অব ফিলোসফি হল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্বাচিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গবেষণার কাজের জন্য প্রদত্ত সর্বোচ্চ ডিগ্রী।
এম.ফিল হল একটি একাডেমিক রিসার্চ ডিগ্রি যা শিক্ষার্থীকে একটি বিশেষ বিষয়ে বিশদ গবেষণার জন্য মাস্টার্স করতে দেয়। অপরদিকে, পিএইচডি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোচ্চ স্তরের গবেষণা ডিগ্রি কোর্স। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যমান জ্ঞানে নতুন কিছু যোগ করার স্বীকৃতি স্বরুপ ডক্টর অব ফিলোসফি বা ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে থাকে।
এম ফিল ডিগ্রি কি?
এম.ফিল (Master of Philosophy) বলা হয় একটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি যা উন্নত একাডেমিক গবেষণা কাজের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। এটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ডক্টরেটের মধ্যে দ্বিতীয় ডিগ্রি প্রোগ্রাম হিসাবেও বিবেচিত হয়।
এম ফিল প্রোগ্রামের মোট সময়সীমা দুই বছর, যার মধ্যে এক বছর কোর্সওয়ার্ক, পরবর্তী বছর গবেষণামূলক কাজ। এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীকে অন্যান্য পণ্ডিতদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণার বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বশেষ গবেষণা অনুসন্ধান করে। এম. ফিল গবেষণার মূল্যায়ন অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধায়ক এবং বহিরাগত পরীক্ষক দ্বারা করা হয় যা ভাইভার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। গবেষণাপত্রের চূড়ান্ত জমা দেওয়ার পূর্বে, শিক্ষার্থীকে তার গবেষণা কাজ সেমিনারে উপস্থাপনা করতে হয়।
এম ফিল করার যোগ্যতা
এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য প্রার্থীদের নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে। যদিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে।
- ৪ বছর মেয়াদী অনার্স ডিগ্রি এবং ১ বছর মাস্টার ডিগ্রী অথবা ৩ বছর ব্যাচেলর ডিগ্রী ও ২ বছর মাস্টার ডিগ্রী থাকতে হবে। স্বীকৃত স্নাতক বা ডিগ্রী স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ২ বছরের শিক্ষকতা অথবা সরকারি / বেসরকারি / স্বায়ত্তশাসিত / আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- স্নাতক পর্যায়ে ২ বছরের শিক্ষকতা ও স্বীকৃত মানের জার্নালে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ থাকতে হবে। পাঁচ বছর মেয়াদি এম.বি.বি.এস বা ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রিধারী প্রার্থীরা তাদের ডিগ্রির সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত বিভাগে আবেদন করতে পারবেন।
- প্রার্থীদের সব পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণিসহ ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। মাধ্যমিক/সমমান থেকে স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় সিজিপিএ ৫ এর মধ্যে ৩.৫ অথবা সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ থাকতে হবে।
- বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ২ বছর মেয়াদী (সর্বোচ্চ ৪ বছর) এমফিল কোর্স এবং ৩ বছর মেয়াদী (সর্বোচ্চ ৫ বছর) পিএইচডি কোর্স চালু আছে।
পিএইচডি কি?
পিএইচডি বা ডক্টর অব ফিলোসফি হল একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত উন্নত গবেষণা। পিএইচডি ৩ টি ফরম্যাটে পাওয়া যায়। ফুল টাইম, পার্ট টাইম পিএইচডি এবং অনলাইন পিএইচডি। পিএইচডির সময়কাল সর্বনিম্ম তিন বছর। তবে, এটি বিষয় অনুযায়ী পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে।
পিএইচডি এর পূর্ণরূপ হল ডক্টর অব ফিলোসফি। পিএইচডির সংক্ষিপ্তকরণ এসেছে একটি ল্যাটিন শব্দ ফিলোসোফিয়া ডক্টর থেকে। যদিও দর্শন শব্দটির সাথে দর্শনের বিষয়টির সামান্য সম্পর্ক রয়েছে। পিএইচডিতে পিলোসফি বা দর্শন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে যার অর্থ ‘জ্ঞানের প্রেমিক’।
পিএইচডি বা ডক্টর অব ফিলোসফি হল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত স্নাতকোত্তর একাডেমিক ডিগ্রি, যা স্বীৃকৃতি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত প্রার্থীকে তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্রে বিস্তৃত এবং মূল গবেষণার জন্য দেওয়া হয়।
সাধারণভাবে, পিএইচডি হল সর্বোচ্চ স্তরের গবেষণা ডিগ্রি যা একজন শিক্ষার্থী অর্জন করতে পারে। সাধারণত একটি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর পিএইচডি করার যোগ্যতা অর্জিত হয়। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য প্রার্থীকে নির্দিষ্ট ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।
পিএইচডি করার যোগ্যতা
ডক্টর অব ফিলোসফির জন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই কিছু মৌলিক যোগ্যতা থাকতে হবে। ডক্টর অব ফিলোসফির কিছু মৌলিক যোগ্যতা হল:
- পিএইচডি পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে।
- শিক্ষার্থীর মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্সে কমপক্ষে ৫০ – ৫৫% গ্রেড থাকতে হবে।
- যেসব প্রার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা আছে তাদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
- একজন পিএইচডি আবেদনকারীকে স্নাতক পর্যায়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে হয়।
- পিএইচডি আবেদনের যোগ্য হওয়ার জন্য আপনার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিরও প্রয়োজন হতে পারে।
- সাধারণত, কলা ও মানবিক পিএইচডি করার জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের পিএইচডিগুলির জন্য স্নাতক ডিগ্রি যথেষ্ট হতে পারে। তবে, এটি পৃথক ডিগ্রী প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে।
এমফিল ও পিএইচডির মধ্যে পার্থক্য
১. এম ফিলকে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স হিসাবে বিবেচনাকরা হয়, যা শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত বিষয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন এবং উন্নত গবেষণার জন্য করে। বিপরীতে, ডক্টর অব ফিলোসফি বা পিএইচডি একটি পেশাদার ডিগ্রি কোর্স, যা কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত প্রার্থীকে তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্রে বিস্তৃত এবং মূল গবেষণার জন্য দেয়।
২. একটি এম ফিল প্রোগ্রাম দুই বছরের কোর্স। বিপরীতে, পিএইচডির সময়কাল নির্ধারণে অনেকগুলি বিষয় সম্পৃক্ত রয়েছে। যেমন গবেষণা এলাকার, গবেষণার অভিজ্ঞতা, সুপারভাইজারের জ্ঞান, গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা, যোগাযোগ দক্ষতা, সম্পদের প্রাপ্যতা এবং কাজের পরিমাণ ইত্যাদি। তবে, পিএইচডির সময়কাল সর্বনিম্ম তিন বছর। এটি ক্ষেত্র বিশেষ পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে।
৩. সাধারণত, এম ফিল প্রোগ্রামে উপবৃত্তি দেওয়া হয় না, কিন্তু পিএইচডিতে গবেষণার কাজ পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি হিসেবে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।
৪. এম ফিল প্রোগ্রাম কাঠামো দুই ভাগে সম্পন্ন হয়, যেমন কোর্সওয়ার্ক এবং গবেষণামূলক কাজ, যা বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের নির্দেশনায় সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে, পিএইচডি প্রোগ্রাম এক বছরের জন্য কোর্সওয়ার্ককে অন্তর্ভুক্ত করে, তারপরে বিশেষজ্ঞ সুপারভাইজারের নির্দেশনায় থিসিস কাজ শুরু করে।