জিডিপি ও জিএনপি কী? জিডিপি নির্ণয়ের সূত্র

জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন হল একটি দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের পরিমাপক। বর্তমানে জিডিপির মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট দেখা যায়। জিডিপির প্রথম মৌলিক ধারণাটি আটারো শতকের শেষে উদ্ভাবিত হয়েছিল।
তবে, জিডিপির আধুনিক ধারণাটি ১৯৩৪ সালে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ সাইমন কুজনেটস দ্বারা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস সম্মেলনে জিডিপিকে একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান পরিমাপ হিসাবে গ্রহণ করা হয়।

জিডিপি কি?

GDP-এর পূর্ণরুপ হল “Gross Domestic Product”, অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত ১ বছর) একটি দেশের মধ্যে উৎপাদিত (এবং বাজারে বিক্রি হওয়া) সমস্ত পণ্য ও পরিষেবার মোট আর্থিক মূল্যেকে জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন বলে।
কোনো একটি দেশে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত অথবা তৈরীকৃত মোট পণ্য এবং সেবার সমষ্টিকেই জিডিপি বলে। জিডিপি পরিমাপে সাধারণত তিনটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো হলো আয়, ব্যয় এবং উৎপাদন পদ্ধতি।
একটি দেশে উৎপাদিত সকল পণ্য এবং সেবার মোট বাজার মূল্যকে একত্রিত করার মাধ্যমে উৎপাদন পদ্ধতিতে জিডিপি নির্ধারণ করা যেতে পারে।
উদাহরণ:
ধরি,কোনো এক বছরে বাংলাদেশে মোট ১০০ কিলোগ্রাম চাল উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি চালের বাজার মূল্য ৫০ টাকা। ওই বছরেই বাংলাদেশে আরও ২০০ কিলোগ্রাম গম উৎপাদন হলো এবং প্রতি কেজি গমের বাজার মূল্য ৩০ টাকা।
সুতরাং, ওই বছরে বাংলাদেশের জিডিপি হবে,
= (১০০×৫০)+(২০০×৩০)
= ১১,০০০ টাকা
এবার ধরুন, ওই বছরে পুরো বাংলাদেশের মোট প্রয়োজন যথাক্রমে ১৫০ কিলোগ্রাম চাল এবং ২৫০ কিলোগ্রাম গম। তাই প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে ৭৫ টাকা দরে ৫০ কেজি চাল এবং ৪০ টাকা দরে ৫০ কেজি গম আমদানি করলো।
তাহলে ওই বছর বাংলাদেশের চূড়ান্ত GDP হবে,
= ১১,০০০ – {(৫০ × ৭৫) + (৫০ × ৪০)}
= ১১,০০০ – ৫৭৫০
= ৫২৫০ টাকা
সুতরাং, এটা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের বাজার দরের উপর জিডিপি নির্ভর করে না, বরং অনেকটাই বিদেশ থেকে আমদানি পণ্যের উপরেও নির্ভর করে।

GDP কিভাবে হিসাব করা হয়?

সাধারণত ৪ রকম ভাবে GDP হিসাব করা হয়। যেমন:
Nominal GDP
Real GDP
GDP growth rate
GDP per capita
Nominal GDP: উপরের উদাহরণে বাংলাদেশের যে ৫২৫০ টাকা GDP দেখানো হয়েছে, সেটাই হলো Nominal GDP।
Real GDP: কোনো দেশের GDP-র হিসাবটি যখন অন্যান্য বছরে পাওয়া ওই দেশের GDP-র পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়, তখন সেটাকে Real GDP বলা হয়।
GDP growth rate: সাধারণত কোনো বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কোনো দেশের যে পরিমাণ GDP ছিলো, তার থেকে পরবর্তী এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের শেষ পর্যন্ত পাওয়া GDP-র মান বৃদ্ধি পেলে বলা যায় যে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
GDP per capita হল নাগরিকদের মোট মাথাপিছু আয়। অর্থাৎ কেউ যদি দেশের বাহিরে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির অর্থের উপরেও GDP per capita নির্ভর করে। এছাড়াও দেশের মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকদের বাৎসরিক আয় বৃদ্ধি পেলে GDP per capita বৃদ্ধি পায়।

GDP পরিমাপের সূত্র 

জিডিপি = ব্যক্তিগত খরচ + মোট ব্যক্তিগত বিনিয়োগ + সরকারি বিনিয়োগ + সরকারি ব্যয় + (রপ্তানি – আমদানি)।
সূত্রের মাধ্যমে দেখানো হল: GDP = C + I + G + (X – M)
C= Consumption (খরচ)
I= Investment (বিনিয়োগ)
G= Government Spending (সরকারী খরচ)
X – M= ( রপ্তানি – আমদানি )

জিএনপি কি?

GNP এর পূর্ণরুপ হল “Gross National Product“, অর্থাৎ মোট জাতীয় উৎপাদন। নাগরিক কর্তৃক দেশে ও বিদেশে সাধারণত এক বছরে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার সমষ্টিকে GNP বা Gross National Product বা মোট জাতীয় উৎপাদন বলে। GNP তে বিদেশে অবস্থানরত দেশী নাগরিকদের উপার্জন বা আয় অন্তর্ভূক্ত থাকে কিন্তু দেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের উপার্জন বা আয় অন্তর্ভূক্ত থাকে না।
উদাহরণস্বরুপ, ভারতে বাংলাদেশী মালিকানাধীন একটি কারখানার উৎপাদন ভারতের জিডিপির অংশ হিসাবে গণনা করা ছাড়াও বাংলাদেশের জিএনপি (গ্রস ন্যাশনাল প্রোডাক্ট) এর অংশ হিসাবে গণনা করা হবে।

জিডিপি বৃদ্ধির হার কি? (GDP Growth Rate)

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রকৃত জিডিপিতে একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে অন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের শতাংশ পরিবর্তনকে পরিমাপ করে। সাম্প্রতিক কিছু দেশে, সাধারণত ত্রৈমাসিক বা বছরের এবং তার আগের বছরের মধ্যে তুলনা হিসাব করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ণয় করে থাকে। এটি একটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক সংখ্যা হতে পারে (নেতিবাচক বৃদ্ধির হার, অর্থনৈতিক সংকোচন নির্দেশ করে)। আর ইতিবাচক সংখ্যা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্দেশ করে।

Similar Posts