মোট সুদ ও নিট সুদ কাকে বলে | মোট সুদ ও নিট সুদের মধ্যে পার্থক্য

মূলধন ব্যবহারের পারিতোষিক হচ্ছে সুদ। সুদকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: মোট সুদ ও নীট সুদ। আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে মোট সুদ ও নীট সুদের মধ্যে পার্থক্য। মোট সুদ ও নীট সুদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করার পূর্বে এদের সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। নিম্নে মোট সুদ ও নীট সুদের সংজ্ঞা প্রদান করা হল।

মোট সুদ (Gross interest) কাকে বলে

মূলধন ব্যবহারের জন্য ঋণগ্রহীতা ঋণদাতাকে যে অর্থ প্রদান করে তাকে মোট সুদ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক কারণে এর মালিককে যে অর্থ দেওয়া হয় তাই হচ্ছে মোট সুদ। মোট সুদের মধ্যে নীট সুদ, ঋণ দানের ঝুঁকি, হিসাব নিকাশ রাখা ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। সুতরাং, নীট সুদ এবং অন্যান্য কারণে প্রাপ্ত সুদের সমষ্টিকে মোট সুদ বলা হয়।

নীট সুদ (Net interest) কাকে বলে

শুধু মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য এর মালিককে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে নীট সুদ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মোট সুদ হতে ঋণের ঝুঁকি, ব্যবস্থাপনা, ঋণ আদায়ের ব্যয় ইত্যাদি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই হচ্ছে নীট সুদ। অর্থাৎ, ঋণ প্রদানের জন্য অতিরিক্ত কোন পরিশ্রমের প্রয়োজন না হলে মূলধন মালিককে কেবল মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতার জন্য যে সুদ দেওয়া হয়, তাকে নীট সুদ বলা হয়। সুতরাং নীট সুদ হল মোট সুদের একটা অংশ।

মোট সুদ ও নিট সুদের মধ্যে পার্থক্য

উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, মোট সুদ ও নীট সুদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে মোট সুদ ও নীট সুদের পার্থক্য আলোচনা করা হল।

  • ১. মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা ও আনুষঙ্গিক কারণে ঋণগ্রহীতা মূলধনের মালিককে যে অর্থ প্রদান করে তাকে মোট সুদ বলা হয়। অপরদিকে, শুধু মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে নীট সুদ বলে ।
  • ২. মোট সুদের মধ্যে নীট সুদ, ঋণের ঝুঁকি, ঝামেলা, ব্যবস্থাপনা ব্যয় প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু নীট সুদের মধ্যে মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতার পারিতোষিক ছাড়া অন্য কোন পারিতোষিক অন্তর্ভুক্ত থাকে না।
  • ৩. নীট সুদ মোট সুদের অংশ মাত্র। তাই মোট সুদের পরিমাণ সর্বদা নীট সুদের তুলনায় বেশি হয়। পক্ষান্তরে, নীট সুদ মোট সুদের তুলনায় কম হয়ে থাকে।
  • ৪. মোট সুদের হার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কিন্তু নীট সুদের হার দেশের সর্বত্রই সমান হয়ে থাকে।

সুতরাং উপরিউক্ত পার্থক্যসমূহ মোট সুদ ও নীট সুদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এতসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বা মিল দেখা যায়। কারণ নীট সুদ মোট সুদেরই একটা অংশ।