অর্থনীতিতে চাহিদা (Demand) ও যোগান (Supply) একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কারণ ভোক্তারা পণ্য এবং পরিষেবার জন্য সর্বনিম্ন মূল্য দিতে চায়। অপরদিকে, সরবরাহকারীরা সর্বাধিক লাভ করার চেষ্টা করে। যদি সরবরাহকারীরা পণ্য ও সেবার ওপর অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ করে, তবে চাহিদার পরিমাণ কমে যায়। ফলে সরবরাহকারীরা পর্যাপ্ত পণ্য বিক্রি করতে পারে না। যদি সরবরাহকারীরা কম চার্জ করে, তবে চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
অর্থনীতিতে চাহিদা বলতে তিনটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। যেমন কোন দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, দ্রব্যটি ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা ক্রয় ক্ষমতা, এবং অর্থ ব্যয়ের ইচ্ছা। এই তিনটির সমন্বয়ে অর্থনীতিতে চাহিদা কার্যকর হয়।
চাহিদা হল একটি অর্থনৈতিক নীতি যা ভোক্তাদের পণ্য ও পরিষেবা ক্রয়ের আকাঙ্ক্ষা এবং ইচ্ছা পোষণকে বোঝায়।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও একটি নির্দিষ্ট দামে ক্রেতাগণ বাজারে সরবরাহকৃত একটি দ্রব্য বা সেবার যে পরিমাণ ক্রয় করতে প্রস্তুত, তাকে চাহিদা বলে।
অধ্যাপক পেনসন চাহিদার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘কোন দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার পেছনে অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য ও ইচ্ছা থাকলে তাকে চাহিদা (Demand) বলে।’’
বেনহামের মতে, কোন নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতা বিভিন্ন দামে একটি দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ ক্রয় করতে প্রস্তুত থাকে, তাকে ঐ দ্রব্যের চাহিদা বলে।
চাহিদা রেখা (Demand Curve)
অন্যন্য অবস্থা স্থির থেকে, কোন দ্রব্যের বিভিন্ন দামে ক্রেতার চাহিদার বিভিন্ন পরিমাণকে যে রেখার মাধ্যমে দেখানো হয়, তাকে চাহিদা রেখা বলে।
কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন দ্রব্যের বাজার দামের সাথে তার চাহিদার পরিমাণ যে বিধির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে চাহিদা বিধি বলে। অর্থাৎ অন্যন্য অবস্থা অপরিবর্তি থেকে, স্বাভাবিক সময়ে কোন দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়, দাম বাড়লে চাহিদা হ্রাস পায়। দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে এরুপ বিপরীত সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলা হয়।
অধ্যাপক মার্শাল এর মতে, যে বিধির সাহায্যে দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক প্রকাশ করা হয়, তাকেই মূলত চাহিদা বিধি বলে।
অর্থনীতিতে চাহিদা অনেকগুলো উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। নিম্মে চাহিদার কিছু মৌলিক উপাদান সম্পর্কে বর্ণনা করা হল।
১. পণ্য ও সেবার নিজস্ব দাম: কোন দ্রব্যের নিজস্ব দামের ওপর চাহিদা নির্ভর করে। কারণ পণ্য বা দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদা কমে, দাম কমলে চাহিদা বাড়ে।
২. সময়: যে দ্রব্যটি শীতকালে চাহিদা বেশি, তার গ্রীষ্মকালে সাধারণত চাহিদা থাকে না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের ওপর কোন দ্রব্যের চাহিদা অনেকাংশে নির্ভরশীল।
৩. ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা: কোন দ্রব্যের চাহিদা তখনই বেড়ে যায় যখন তা ক্রয় করার মত টাকা থাকে। অর্থাৎ ভোক্তার আয়ের ওপর চাহিদা নির্ভর করে। আয় বাড়লে চাহিদা বাড়ে, আয় কমলে চাহিদা কমে।
৪. বাজারে ক্রেতার সংখ্যা: ক্রেতার সংখ্যা বাড়লে কোন দ্রব্যের চাহিদাও বেশি হয়। বিপরীতে, ক্রেতার সংখ্যা কম হলে চাহিদাও কম হয়।
যোগান (Supply) বলতে সাধারণত কোন দ্রব্যের সরবরাহকে নির্দেশ করে। কিন্তু অর্থনীতির পরিভাষায় যোগান বলতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে কোন দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করতে বিক্রেতাগণ প্রস্তুত থাকে, তাকে যোগান বলে।
দ্রব্যের যোগান অনেকটা উৎপাদনের ওপর নির্ভশীল। তবে, দ্রব্যের দাম ও সময়ে উপরও যোগান নির্ভরশীল। যোগান সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন –
অর্থনীতিবিদ রেগানের মতে, ‘‘কোন ফার্ম বা বিক্রেতা নির্দিষ্ট দামে যে পরিমাণ দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাই যোগান।’’
অধ্যাপক মেয়ার্স এর মতে, ‘‘কোন নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন সম্ভাব্য দামে কোন দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে যোগান বলে।’’