লেসে-ফেয়ার বা লেইস ফেয়ার হচ্ছে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনরূপ সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াই ব্যবসায়-বাণিজ্য ও বিনিময় চলে। রাষ্ট্রের এরুপ দৃষ্টিভঙ্গীকে অর্থনীতিতে অবাধনীতি বা Laissez-faire বলা হয়।
ফরাসী শব্দ “laissez-faire” যার অর্থ “করতে দাও, যেতে দাও, পাশ কাটাতে দাও”। অর্থাৎ মানুষ যা পছন্দ করে তাকে তা করতে দেয়া।
এমন একটি নীতি যা সরকারকে ব্যবসা এবং অর্থনীতিতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ না করতে উৎসাহিত করে, কেবলমাত্র আইনবিরোধী ক্ষেত্র ছাড়া, তাকে অবাধনীতি বা মুক্তবাজার বা Laissez-Faire বলে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম এবং মধ্য ভাগ থেকে লেসে-ফেয়ার শব্দটি মুক্ত বাজার অর্থনীতির সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ইংরেজি ভাষায় এই শব্দের আবির্ভাব হয়েছিল ১৭৭৪ সালে জর্জ হোয়াটলির “Principles of Trade” গ্রন্থ প্রকাশের মধ্যদিয়ে।
লেসে ফেয়ার নীতিতে কোন ব্যবসায়-বাণিজ্যের ওপর সরকার আরোপিত শুল্ক-কর, ভর্তুকি, কোটা ইত্যাদি কোনরূপ সরকারি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ থাকবে না। ফ্রান্সে অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফিযিওক্র্যাটরা ব্যবসায়-বাণিজ্যের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাসের দাবীতে এই লেসে-ফেয়ার তত্ত্বের প্রচার করে।
লেসে ফেয়ার কথাটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবাধ বাণিজ্য পরিবেশ নির্দেশ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রত্যেক দেশ আমদানি সংকুচিত করার জন্য একদিকে যেমন উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ, অন্যদিকে মুদ্রার বিনিময় হার অবমূল্যায়ন করে রাখার নীতি অবলম্বনের ফলে বিশ্ববাণিজ্য সংকুচিত হয়ে পড়ে। সে নীতিকে বলা হত beggar my neighbor policy। সেই থেকেই মূলত অবাধ বা মুক্ত বাণিজ্যের চিন্তা ভাবনা শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা হয়। অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য United Nation Conference on Tariff and Trade (UNCTAD) এবং General Agreement on Tariff and Trade (GATT) এর মাধ্যমে অবাধ বাণিজ্যের পথ সুগম হয়।
অবাধ বাণিজ্য নীতি আরো জোরদার করার জন্য গ্যাটের (GATT) উরুগুয়ে গোল টেবিল কনফারেন্সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) গঠন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে অবাধ বাণিজ্য প্রসারের জন্য এ সংস্থাটি কাজ করে আসছে।
স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথকে লেসে ফেয়ার (Laissez-faire) নীতির জনক বলা হয়। তাঁর মতে, অর্থনীতির প্রতিযোগিতা ‘‘অদৃশ্য হাত” দ্বারা পরিচালিত হবে। অ্যাডাম স্মিথের লেসে ফেয়ার নীতির মূলকথা হলো, সরকার অর্থনীতি থেকে দূরে থাকবে এবং ব্যবসা ও ভোক্তাদের তাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে দেবে এবং উৎপাদনকারীদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতায় ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের সময় পণ্যের মূল্য কম রাখতে সাহায্য করবে।