গবেষণার প্রকারভেদ
একটি গবেষণার উদ্দেশ্য, নকশা, বিশ্লেষণ, সময়, উপাত্ত ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এটি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। নিম্নে গবেষণার প্রকারসমূহ আলোচনা করা হল।
গবেষণা কত প্রকার ও কি কি
তথ্যের উৎস অনুসারে গবেষণার দুই ধরণের। যথা-
১. প্রাথমিক গবেষণা (Primary Research)
সরাসরি উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে যে গবেষণা পরিচালনা করা হয় তাকে প্রাথমিক গবেষণা বলে। একে মৌলিক গবেষণাও বলা হয়। প্রাথমিক উৎস থেকে এই গবেষণার উপাত্তগুলো সংগৃহীত হয়। প্রাথমিক গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ সাক্ষাৎকার, প্রশ্নপত্র, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পাদিত হতে পারে।
২. মাধ্যমিক গবেষণা (Secondary Research)
মাধ্যমিক গবেষণা প্রাথমিক গবেষণার ঠিক বিপরীত। সেকেন্ডারি গবেষণা হলো সেই তথ্য যা ইতিমধ্যেই প্রাথমিক উৎসের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে মাধ্যমিক উৎস যেমন- বই, সাময়িকী, প্রকাশিত গবেষণাপত্র, সরকারি রেকর্ড, সংবাদপত্র, নথি, চিত্র, ভিডিও প্রতিবেদন ইত্যাদি থেকে উপাত্ত নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় তা হলো মাধ্যমিক গবেষণা।
যে গবেষণায় তথ্য সহজলভ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত হয় তা গৌণ বা মাধ্যমিক গবেষণা। যেহেতু, পাওয়া তথ্য ইতিমধ্যে বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেহেতু গবেষককে কেবল তার পছন্দের ডেটা সেখান থেকে বের করতে হয়। এ-ধরনের গবেষণায় সময়, অর্থ কম লাগে।
গবেষক সরকারী সংস্থা, সমিতি, বই, জার্নাল, মিডিয়া ইত্যাদি উৎস থেকে তথ্য ব্যবহার করে। এসকল সংগৃহীত তথ্য প্রাথমিকভাবে ম্যাগাজিন, পুস্তিকা, সংবাদপত্র, ব্লগ, ওয়েবসাইট, জার্নাল, রিপোর্ট, এনসাইক্লোপিডিয়া এবং উইকিপিডিয়া ইত্যাদিতে প্রকাশিত হয়।
উদ্দেশ্য অনুসারে গবেষণা দুই ধরণের, যথা–
১. তাত্ত্বিক গবেষণা (Theoretical Research)
তাত্ত্বিক বা মৌলিক গবেষণা হল বিশ্বাস এবং অনুমানের একটি পদ্ধতিগত যৌক্তিক অনুসন্ধান। তাত্ত্বিক গবেষণা বা মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্য হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা।
যে বিষয়ে পূর্বে কখনো গবেষণা হয়নি অথবা পূর্বে গবেষণা করা হয়েছে কিন্তু সেখানে বিশেষ পরিবর্তন বা নতুন কিছু সংযোজনের জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তা হল তাত্ত্বিক গবেষণা।
২. ফলিত গবেষণা (Applied Research)
ফলিত গবেষণা বলতে বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকে বোঝায় যা মূলত দৈনন্দিন ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান, অসুস্থতা নিরাময় এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়।
যে গবেষণার মাধ্যমে তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় তাকে ফলিত গবেষণা বলে। ফলিত গবেষণার উদ্দেশ্য হলো তাত্ত্বিক গবেষণালব্ধ প্রাপ্ত জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ।
ব্যবহার করা উপাত্ত অনুসারে গবেষণা দুই ধরণের। যথা-
১. গুণগত গবেষণা (Qualitative Research)
যে গবেষণার প্রয়োজনীয় উপাত্ত সরাসরি পর্যবেক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নমালা, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় যার সব ই অ-গাণিতিক বা অপরিমাপযোগ্য তাকে গুণগত গবেষণা বলে। গুণগত গবেষণা সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ধারার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি।
গুণগত গবেষণা করা হয় কোনো কিছু সম্পর্কে নতুনভাবে জানতে, তুলনা করতে বা কখনো কখনো সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য। গুণগত গবেষণার ফলাফল গাণিতিক উপায়ে বা পরিসংখ্যানভাবে প্রকাশ করা যায় না।
২. পরিমাণগত গবেষণা (Quantitative Research)
যে গবেষণায় ব্যবহৃত উপাত্ত সবসময় সংখ্যাসূচক হয় এবং যা গাণিতিক ও পরিসংখ্যাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয় তাকে পরিমাণগত গবেষণা বলে।
গবেষণার ক্ষেত্র ও গভীরতা অনুসারে গবেষণা চার ধরনের-যথা:
১. অনুসন্ধানী গবেষণা (Exploratory Research)
অনুসন্ধানমূলক গবেষণা হল এমন একটি সমস্যা অনুসন্ধান করার প্রক্রিয়া যা অতীতে অধ্যয়ন করা হয়নি বা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়নি। এই ধরনের গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত ও মাধ্যমিক উপাত্ত উভয়ই ব্যবহার কার হয়।
পূর্বের কোনো গবেষণা হতে প্রাপ্ত জ্ঞান সু-স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলে অথবা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে, উক্ত বিষয়ের ওপর স্পষ্ট ধারণা অর্জন ও তার সঠিক ব্যবহার জানার জন্য যে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারাবাহিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় তাকে অনুসন্ধানী গবেষণা বলে। কোনো বিষয়ের ওপর পূর্বে পর্যাপ্ত গবেষণা পরিচালিত না হলেও সেক্ষেত্রে অনুসন্ধানী গবেষণা করা যায়।
২. বর্ণনামূলক গবেষণা (Descriptive Research)
সমাজবিজ্ঞান গবেষণা শাখায় বহুল পরিচিতি একটি গবেষণা হলো বর্ণনামূলক গবেষণা। এতে নির্দিষ্ট সময়, ঘটনা, বিশ্বাস, প্রবণতা, প্রতিক্রিয়া, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বর্ণনা করা হয়। বর্ণনামূলক গবেষণায় অনেক সময় পর্যাপ্ত উপাত্ত সংগ্রহ এবং অনুসন্ধান না করেই ফলাফল প্রদান করা হয়।
৩. ব্যাখ্যামূলক গবেষণা (Explanatory Research)
যে গবেষণার মাধ্যমে কোনো কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে ব্যাখ্যামূলক গবেষণা বলে। বর্ণনামূলক গবেষণাকে ভিত্তি করেই ব্যাখ্যামূলক গবেষণার উৎপত্তি। আধুনিক গবেষণায় বর্ণণামূলক গবেষণা অন্যতম।
৪. সম্পর্কযুক্ত গবেষণা (Correlational Research)
যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে একাধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয় তা হলো সম্পর্কযুক্ত গবেষণা। পারস্পরিক সম্পর্কীয় গবেষণা একটি অ-পরীক্ষামূলক গবেষণা পদ্ধতি যা পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের সাহায্যে দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করতে ব্যবহার হয়।
পারস্পরিক সম্পর্কীয় গবেষণার ধরন তিন ধরনের, যথা-
- ইতিবাচক পারস্পরিক সম্পর্ক (Positive correlation): দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক যখন একটি ভেরিয়েবলের বৃদ্ধি অন্য ভেরিয়েবলের বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। একটি ভেরিয়েবলের হ্রাস অন্য ভেরিয়েবলের হ্রাস দেখতে পাবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তির যে পরিমাণ অর্থ আছে তা ব্যক্তির মালিকানাধীন গাড়ির সংখ্যার সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।
- নেতিবাচক সম্পর্ক (Negative correlation): একটি নেতিবাচক সম্পর্ক আক্ষরিক অর্থে একটি ইতিবাচক সম্পর্কের বিপরীত। একটি ভেরিয়েবলের বৃদ্ধি হলে, দ্বিতীয় চলকটি বিপরীতে হ্রাস দেখাবে।
- পারস্পরিক সম্পর্ক নেই (No correlation): এটি দুটি ভেরিয়েবলের মধ্যে কোন সম্পর্ক নির্দেশ করে না। অর্থাৎ একটির পরিবর্তনে অন্য একটির পরিবর্তন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, কোটিপতি হওয়া এবং সুখের কোন সম্পর্ক নেই। অর্থ বৃদ্ধি সবসময় সুখের দিকে পরিচালিত করে না।