HISTORY

বার ভূঁইয়া কারা? উৎপত্তি ও ইতিহাস

1 min read

বার ভূঁইয়া কারা?

ষোড়শ শতক থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলার যেসব বড় বড় জমিদার মূঘলদের অধীনতা মেনে নেয়নি এবং যারা শক্তিশালী সৈন্য ও নৌ-বহর নিয়ে মুঘল সেনাপতির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ত তাদেরকে বাংলার ইতিহাসে বার ভূঁইয়া নামে ডাকে।
বাংলার যেসব জমিদার মুঘল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গীরের শাসনে মুঘল বিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো ইতিহাসে তাদেরকে বার ভূঁইয়া বলে। তবে, বার ভূঁইয়া বলতে শুধুমাত্র বার জন ভূঁইয়াকে বোঝাতো না, বরং স্থানীয় অনেক জমিদার এতে সম্পৃক্ত ছিলো। যদিও, ভূইয়াদের মধ্যে বার জন খুব শক্তিশালী ও নেতৃত্বস্থানীয় ছিলো বিধায় তাদের নাম সর্বাধিক পরিচিত ছিল।
দাউদের পতনের পর, বাংলায় যে গণজাগরণ ও বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় মোঘলদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যারা যুদ্ধ করেন তারা ইতিহাসে বার ভূঁইয়া নামে পরিচিত।

বার ভূঁইয়াদের নাম

বিখ্যাত ইতিহাস প্রনেতা সতীশচন্দ্র মিত্র বার ভূঁইয়ার ১২ নাম উল্লেখ করেন যথা-
১। ঈশা খাঁ  ২। প্রতাপ আদিত্য   ৩। চাঁদ রায়, কেদার রায়
৪। কন্দর্প নারায়ণ  ৫। লক্ষ্মণ মানিক্য    ৬। মুকুন্দরাম রায়
৭। ফজল গাজী ৮। হাম্বীর মল্ল    ৯। কংসনারায়ণ
১০। রামকৃষ্ণ  ১১। পীতাম্বর রায়   ১২। ঈসা খাঁ লোহরী ও ওসমান খাঁ

বার ভূঁইয়াদের ইতিহাস

বার ভূঁইয়ার উৎপত্তি হয় বাংলার আফগান শাসনামলে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৩শ বছর তুর্কি ও আফগান শাসন চলেছিল। ১৫২৬ খৃষ্টাব্দে মোঘল সম্রাট বাবর কর্তৃক সম্রাট ইব্রাহিম লোদী পানি পথে নিহত হবার পর, ভারতে মোঘল সম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এ্-সময়ে আফগান, তুর্কী এবং পাঠান শক্তি দুর্বল হয়ে পড়লেও বাংলা বিহার উড়িষ্যা, আসাম অঞ্চলে মোঘল বিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে।
১৫৭৬ খৃষ্টাব্দে আকবর কর্তৃক বাংলা বিজয়ের কাল পর্যন্ত বাংলায় স্বাধীন শাসন যুগ ছিল। দাউদ খাঁ কররানী ১৫৭৬ পর্যন্ত বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন কিন্তু স্বাধীন পাঠান রাজত্বের পতন হলেও বাংলায় সেসময় মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় নি। পাঠান শক্তির পতনে পাঠান ও তুর্কী বিদ্রোহের মনোভাব ধুমায়িত হতে থাকে, তারা বিজয়ী মোঘলদের সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে নাই। এ বিদ্রোহী পাঠানদের সাথে দেশীয় হিন্দু মুসলিম সামান্ত রাজারাও যোগ দেন। পাঠান রাজত্বের শেষের দিকে বাংলায় বহু জমিদার ও ভূস্বামী প্রবল প্রতাপান্বিত হয়ে ওঠে। এদের বেশীর ভাগই পাঠান, অল্প সংখ্যক হিন্দু সে সময় যে সমস্ত জমিদার।
বাবর ও হুমায়ূনের রাজত্বকালে এসব আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। তবে, ভূঁইয়াদের আন্দোলন, সংগ্রাম, যুদ্ধ বিগ্রহ মূলত বাদশা আকবর ও জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে সংঘটিত হয়েছিল। কারণ তারা মোঘল শাসন অস্বীকার করে স্বাধীনভাবে চলার চেষ্টা করত। বাংলার বার ভূঁইয়া বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। দাউদের পতনের পর বাংলায় যে গণজাগরণ ও বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় মোঘলদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যারা যুদ্ধ করেন তারা ইতিহাসে বার ভূঁইয়া নামে পরিচিত।
ভূঁইয়া শব্দের অর্থ ভূই মালিক, ভূম্যধিকারী, রাজা বা জমিদার। সেসময় প্রভাবশালী রাজা, জমিদার ও স্থানীয় শাসক এই উপাধি গ্রহণ করতেন। অনেক সময় খন্ড রাজ্য বা এক বা একাধিক পরগনার জমিদারীর মালিকেরা ভূঁইয়া উপাধি গ্রহণ করত। ভূঁইয়াদের ব্যক্তিগত বীরত্ব ও নিজস্ব বাহিনীর শক্তির উপর তাদের রাজ্যের সম্মান ও প্রতিপত্তি নির্ভর করত। তারা শুধু রাজস্ব আদায় ও জমিদারী ভোগ দখল নিয়ে ব্যস্থ থাকত না বরং তারা শাসন কার্য পরিচালনার জন্য সীমিত সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় শাসন ও যুদ্ধ পরিচালনা করত।
সেজন্য পদাতিক ও নৌ-বাহিনীর পাশাপাশি রাজধানী সংলগ্ন দূর্গ, অস্ত্রাগার, কামান ও গুলাগুলির সংস্থান থাকত। তারা ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। স্বাধীনতার প্রতীকে তারা আবদ্ধ ছিল না।
5/5 - (11 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x