ম্যাগনা কার্টা হল ইংরেজদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানকারী একটি দলিল যা রাজা জন তার বিদ্রোহী ব্যারন বা অভিজাতদের চাপে ১৫ জুন, ১২১৫ সালে স্বাক্ষর করেছিলেন।
ব্রিটিশদের অধিকারের দলিল তথা ‘ম্যাগনা কার্টা, কিং জন এর শাসনামলে প্রণীত, যেটিকে কিনা বলা হয় ব্রিটিশ গঠনতন্ত্রের বাইবেল। এই চুক্তির কারণে রাজা কেও হতে হয়েছিল নিয়মের অধীন। এর শর্ত গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, রাজা প্রতিনিধি স্থানীয় লোকদের অনুমোদন ছাড়া কারো স্বাধীনতায় এবং সম্পত্তিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
যদিও, ক্ষমতা লিপ্সু রাজা সহজেই এই চুক্তি তে স্বাক্ষর করতে চান নি, কিন্তু সকল সামন্ত মিলে রাজা জনকে লন্ডনের কাছে এক দ্বীপে বন্দি করে চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এই চুক্তি বিচার বিভাগকেও অনেকটা নিরপেক্ষ করতে ভূমিকা রাখে। বর্তমানে, ইংল্যান্ডের সংবিধান বলতে নির্দিষ্ট কোনো দলিল নেই। এই ম্যাগনা কার্টা দলিলটি দেশের অন্যতম সাংবিধানিক দলিল হিসেবে বিবেচিত। প্রজাদের অধিকার ও রাজার ক্ষমতা হ্রাসের যৌক্তিক এ দলিল পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহুদেশে মানবাধিকার ও জনগণের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছে।
কিং জন চাপের মধ্যে, ম্যাগনা কার্টা (বা গ্রেট চার্টার) নামে পরিচিত স্বাধীনতার সনদে স্বাক্ষরে সম্মত হন। যদিও, এটি প্রাথমিকভাবে সফল হয়নি, নথিটি ১২১৬, ১২১৭ এবং ১২২৫ সালে পুনরায় সংশোধিত হয়েছিল। অবশেষে, এটি ব্রিটিশদের সাধারণ আইন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। পরবর্তী প্রজন্মের ইংরেজরা ম্যাগনা কার্টাকে নিপীড়ন থেকে মুক্তির প্রতীক হিসাবে উদযাপন করে।
ঐতিহাসিক ম্যাগনা কার্টা সনদের প্রেক্ষাপট ছিলো যে, রাজা নিজের খুশিমতো জোর করে নাগরিক সমাজের সম্পত্তি আত্মসাত্ বা করায়ত্ত করে নিতেন। এর বিরুদ্ধে অভিজাত এবং নাগরিক সমাজ একত্রিত হন। পরবর্তীতে, টেমস নদীর পারে রানীমেড নামক স্থানে জড়ো হয়ে সমবেত নাগরিক সমাজ রাজার ক্ষমতা হ্রাস করতে ম্যাগনাকার্টা সনদে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করে। এটি ছিল ৬৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৪ হাজার শব্দের এক সমৃদ্ধ দলিল।
যাইহোক, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং বিল অব রাইট লেখা হয়েছে এর উপর ভিত্তি করে। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাতেও প্রতিফলিত হয়েছে এর অনুচ্ছেদ সমূহ। এমনকি, আজকের দিনের রাজনৈতিক নেতারাও সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে রক্ষাকবচ হিসাবে উচ্চারণ করেন ম্যাগনা কার্টার কথা। সরকারের শাসনের রাশ টেনে ধরার ক্ষেত্রে একে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়।