এস এস সম্পা দাস গুপ্তা
জীবন যুদ্ধে আমরা সবাই পরাজিত সৈনিক। যে যুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করতে না চাইলেও বিধাতার খেলার পুতুল হিসেবে নিয়তির টানে ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেই হয়। তেমনি একটি সংগ্রামী মেয়ের কথা তুলে ধরেছেন লেখক শাবলু শাহাবউদ্দিন তার প্রথম উপন্যাস “অনামিকা নামের রহস্য” গ্রন্থে। বগুড়া জেলার একটি গ্রামের মাতাপিতাহীন (ইয়াতিম) একটি সংগ্রামী মেয়ের টিকে থাকার লড়ায়ে জীবন যুদ্ধে বার বার হেরে যাওয়ার গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে।
ইয়াতিম অনামিকা নামের মেয়েটি (উপন্যাসের নায়িকা) দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য বিনা বেতনে কাজ করে জমিদারের বাড়িতে। সেখানে কারো অবহেলা না পেলেও বাচ্চা এই মেয়েটি কারো ভালোবাসা পায় না। বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকে বরাবর সে বঞ্চিত। অনামিকা যেন বর্তমান সময়ের কাজের মেয়েদের প্রতিচ্ছবি । হাজার হাজার কাজের মেয়েদের মধ্যে বেঁচে আছে এই অনামিকা।
দিন শেষে যদিও ঐ বাড়ির একজন একটু আদর স্নেহ করতো অনামিকাকে; সেই স্নেহ আদরের ঋণ শোধ করতেই বিনা অপরাধে খুনের মামলায় তাকে যেতে হয় জেলখানায়। বাংলাদেশের জেলখানার কী যে বিশৃঙ্খলা অবস্থা তা বোঝা যায় এই উপন্যাস পড়লে। বাংলাদেশ বিচার ব্যবস্থার চরম সমালোচনা করা হয়েছে এই উপন্যাসে। জেলখানা থেকে বিদেশে পাচার । তারপরে পতিতালয়ে বিক্রি হয়ে যায় অনামিকা। তবুও হাল ছাড়ার পাত্রী না অনামিকা । অবশেষে নানা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ফিরে আসে আমাদের এই সভ্য সমাজে। যে সমাজে মানুষ নামের অমানুষের সংখ্যাই অনেক বেশি।
বাংলাদেশের মানুষের ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা, ধর্ম ও বিশ্বাস খুব সরল বাক্যে তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে। আইনের মার পেচে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে বার বার হেরে যায়। তবুও তাদের সরল বিশ্বাস কখনো বিনাশ হয়ে যায় না।
অনেক সময় আমরা হালকা হতাশায় জীবনেকে অর্থহীন ভেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেই। এই উপন্যাসের নায়িকা আপনাকে শিখাবে, জীবন যুদ্ধে কীভাবে ঠিকে থাকতে হয়। আত্মহত্যা নয়। কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার নামই হল জীবন। জীবন যাত্রা এত সহজ নয়। জীবন যেমন নিজের ; টিকে থাকার পথ তেমনি নিজেকেই আবিষ্কার করতে হবে। এই পৃথিবীতে কেউ কারো নয়।
দুই যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক অনেক পরিবর্তন । আজ বাংলার কৃষ্টি কালচার এবং জীবন যাত্রার এত পরিবর্তন কেন হলো? কেন মানুষ মানুষকে সম্মান করে না? কেন জগৎ সংসারে এত অশান্তি? পেশা ক্ষেত্রে নানা নারকীয় বিভীষিকা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই উপন্যাসে। একজন ছেলে কিংবা মেয়ে কীভাবে পাপের পথে হাঁটে যৌবন বয়সে তার একটা সরল চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে এই উপন্যাসে। যুবক যুবতীর মধ্যে নব্বই দশকের প্রেম আর আজকের প্রেমের পার্থক্য আলোকপাত করা হয়েছে এই উপন্যাসে।
বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদের কতটুকু মঙ্গলের পথে নিতে পেরেছে নাকি সত্যিকারের ধ্বংস ডেকে আনছে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
উপন্যাসের নায়ক চরিত্রের যে সাংবাদিকে তুলে ধরা হয়েছে; সে কী আসলে প্রেমিক নাকী দায়িত্বজ্ঞানহীন একজন কাপুরুষ। নাকি কুসংস্কারের বেড়া জালে সেও আবদ্ধ। দিন শেষ জগতে আমরা কতটুকু মানবিক এবং কতটুকু ধার্মিক সেটাই আলোকপাত করা হয়েছে এই উপন্যাসে।
নারী পাচার আমাদের দেশে নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। সেটা কোথায় থেকে হচ্ছে তা স্বল্প ভাষা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। এক কথায় আমরা যে জগতে বসবাস করছি, সেই জগতের অন্ধকার দিকটির অন্ধকার আলোর সরল রশ্মি হৃদয়ে পৌঁছায়ে দিবে শাবলু শাহাবউদ্দিনের “অনামিকা নামের রহস্য” গ্রন্থটি।
অন্যান্য তথ্য:
গ্রন্থের নাম : অনামিকা নামের রহস্য
লেখক : শাবলু শাহাবউদ্দিন
প্রচ্ছদ : নাজমুল ইসলাম আবির
প্রকাশনী: শুফম প্রকাশনী
প্রকাশক: মজনু মিয়া
মূল্য: ২০০ ৳
গ্রন্থ সমালোচনায়
এস এস সম্পা দাস গুপ্তা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়