ট্রুম্যান ডকট্রিন কি

ট্রুম্যান ডকট্রিন

১২ মার্চ ১৯৪৭, সােভিয়েত রাশিয়ার সাম্যবাদী বা কমিনিস্ট আদর্শের সম্প্রসারণ রােধ করার জন্য তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান যে নীতি ঘােষণা করেন, তা ইতিহাসে ট্রুম্যান নীতি বা ট্রুম্যান ডকট্রিন (Truman Doctrine) নামে পরিচিত।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে, মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে ট্রুম্যান বলেন, ‘‘এখন থেকে পৃথিবীর যেকোনাে জায়গার স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরােধ করার চেষ্টা করে , সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি।’’ এই ঘােষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে সর্বাধিক পরিচিত।
বক্তৃতায় তিনি তুরস্ক ও গ্রিসসহ বিশ্বের যেকোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ট্রুম্যান নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে সহায়তার ঘোষণা দেয়। পরে, ট্রুম্যান নীতিই হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম ভিত্তি। এই নীতির উপর ভিত্তি করেই ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (ন্যাটো)। মূলত কমিনিস্ট প্রভাব রুখতেই এই সামরিক জোট গঠন করা হয়।
পটভূমি
১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট। ১৯৪৫ সালে রুজভেল্ট মারা যাবার পর, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন হ্যারি এস ট্রুম্যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্ব রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নেয় এবং বিশ্ব রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান আমেরিকার জন্য যে পররাষ্ট্রনীতি প্রনয়ন করেন সেটিই মূলত ট্রুম্যান ডকট্রিন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচাইতে ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হয়। যদিও, যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্র শক্তি হিসেবে একই সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ১৯৪৫ সালের পর তাদের সম্পর্ক দ্রুত পতন ঘটে এবং ১৯৪৭ সালের মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে স্নায়ু-যুদ্ধ বা শীতল-যুদ্ধ (Cold War) শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ, প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান যে পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন তাকে ট্রুম্যান মতবাদ বলে।
ট্রুমান ডকট্রিনের বৈশিষ্ট্য
  • কমিনিস্ট বিস্তার রোধ এবং এ লক্ষ্যে জোট গঠন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
  • কোনো সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী বা কোনো বহিরাগত শক্তি যদি কোনো দেশে বিপ্লব সংঘটিত করতে চায়, সেই ক্ষত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিপ্লবীদের বিরুদ্ধের সরকারকে সমর্থন করবে। আর এই সমর্থনের ধরন হবে, আর্থিক ভাবে বিপ্লব বিরোধীদের সমর্থন করা এবং যুক্তরাষ্ট্র বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সরাসরি তার সেনাবাহিনী পাঠাবে না। অব্যাহত সোভিয়েত হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ১৯৪৮ সালের ১২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র গ্রীস এবং তুরস্ক সরকারকে সাহায্য করার জন্য আর্থিক মঞ্জুরী ঘোষণা করে।
  • পশ্চিম ইউরোপসহ দূরপ্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব বজায় রাখা।
  • ট্রুম্যান ডকট্রিন অনুসারে, যেসমস্ত দেশ সোভিয়েত কমিউনিজমের হুমকির মুখে, সেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল এর মার্শাল প্লানের অধীনে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সল পর্যন্ত ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে।
  • বিভিন্ন সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট গঠন করা। ফলস্বরুপ, ১৯৪৯ সালে সোভিয়েত হুমকিকে মোকাবেলা করার জন্য ন্যাটো গঠন করা হয়।
  • পারমানবিক অস্ত্রের উৎপাদন ও মহাকাশ অভিযান শুরু করা।
  • ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
  • বিভিন্ন দেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে সমর্থন দান।
  • অনুন্নত দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সাহায্য দান।