নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ২০২২

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২।
প্রস্তাবিত আইনটি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য নয়, এটি ছিল সার্চ কমিটি গঠনের জন্য। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত বর্তমান ও আগের নির্বাচন কমিশনকে আইনি ঢাল দিতে গত ২৩ জানুয়ারি আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। আইনটি ২৭ জানুয়ারী, ২০২২ এ সংসদে পাস হয়। আইন অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করতে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন।

সার্চ কমিটি

নির্বাচন কমিশন আইন ২০২২ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি থাকবে। ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।
অন্য পাঁচজন সদস্য হবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, একজন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রণ, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তি (যাদের একজন মহিলা থাকবে)।
আপিল বিভাগের বিচারক সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করবেন, যাকে কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটির ন্যূনতম তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির কোরাম গঠিত হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুপারিশে বলা হয়, সিইসি ও ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে উল্লেখিত যোগ্যতা বিবেচনা করে সার্চ কমিটি প্রতিটি শূন্য পদে দুটি করে নাম প্রস্তাব করবে।
আইনে বলা হয়েছে, সিইসি ও ইসিএস পদে যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তাদের কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স হতে হবে এবং যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচারিক, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদ বা পেশায় কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সার্চ কমিটির কাজ

খসড়া আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করবে। এতে ব্যক্তির যোগ্যতা, অপ্রতুলতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনায় নিয়ে সিইসি ও ইসির পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে। সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের জন্য দুইজনকে সুপারিশ করবে। প্যানেল গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশগুলো রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে। এই কমিটি যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পেতে রাজনৈতিক দল এবং পেশাদার সংস্থার নাম ডাকতে পারে।
সিইসি এবং ইসি পদের যোগ্যতা
সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা হলো, তাদের ন্যূনতম ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি চাকরি, বা বিচার বিভাগীয় পদ, স্বায়ত্তশাসিত এবং অন্যান্য পেশায় কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি এবং ইসি পদের অযোগ্যতা
সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য যোগ্য হবেন না যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে নিম্মোক্ত বিষয়গুলোর যেকোন একটি থাকে।
  • আদালত কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে ‘পাগল বা ভারসাম্যহীন’ ঘোষণা করা হলে।
  • ‘দেউলিয়া’ ঘোষণার পর কারাগার থেকে মুক্তি পাননি এমন লোক।
  • বিদেশী নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা তার প্রতি আনুগত্য নিশ্চিত করলে।
  • নৈতিক স্খলন জড়িত ফৌজদারি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত এবং কারাদণ্ড দেওয়া ব্যক্তি।
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত।
  • একজন ব্যক্তি একবার সিইসি বা প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি সিইসি পদের জন্য যোগ্য হবেন না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তাকে সিইসি নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।