সংসদীয় কমিটি কি
সংসদীয় কমিটি হল আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকান্ড সমীক্ষার উদ্দেশ্যে সংসদ-সদস্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি।
সংসদীয় কমিটি হল জাতীয় সংসদের সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্দিষ্ট কাজের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কমিটি, যারা নির্দিষ্ট কার্য যেমন বিলের পরীক্ষা, প্রাক্কলন এবং অন্যান্য বিষয় এর সাথে সম্পর্কিত।
পৃথিবীর অধিকাংশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই এ ধরনের সংসদীয় কমিটি রয়েছে। নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকেন। বাংলাদেশের সংসদীয় কমিটিগুলো এখন পর্যন্ত বিল পরীক্ষন, নির্বাহীর কার্যক্রমের তদারকী এবং সরকারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের দক্ষ হাতিয়ার হিসেবে গড়ে ওঠেছে।
সংসদীয় কমিটির গঠন
বাংলাদেশে তিন ধরনের সংসদীয় কমিটি রয়েছে: যেমন স্থায়ী কমিটি (Standing committee), সিলেক্ট কমিটি (Select committee) এবং বিশেষ কমিটি (Special committee)। স্থায়ী কমিটিগুলো সাধারণত পূর্ণ সংসদের সময়কালের জন্য গঠিত হয়, যেখানে সিলেক্ট এবং বিশেষ কমিটিগুলো অস্থায়ী সময়ের জন্য যা প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করা হয় এবং তাদের কাজ শেষ হলে বিলুপ্ত করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে ন্যূনতম দুটি সংসদীয় কমিটির বাধ্যবাধকতা রয়েছে: একটি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি এবং একটি বিশেষাধিকার কমিটি।
এছাড়া প্রস্তাবিত বিলসমূহের উপর কাজ করার জন্যই এডহক বা অস্থায়ী ভিত্তিতে বাছাই কমিটি নিয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সেগুলোর উপর রিপোর্ট প্রদানের জন্যই অস্থায়ী ভিত্তিতে বিশেষ কমিটিগুলো গঠন করা হয়। প্রক্রিয়া শেষ হলে অস্থায়ী কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সংসদে স্থায়ী কমিটিগুলো হলো মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি, অর্থ ও হিসাব নিরীক্ষা কমিটি এবং অন্যন্য স্থায়ী কমিটি। বর্তমানে একাদশ জাতীয় সংসদে মোট ৫০টি সংসদীয় কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির কাজ
সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে সরকারি অর্থ কমিটি এবং বিশেষ অধিকার কমিটিসহ বেশ কিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এসব কমিটির কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিল বিবেচনা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনা এবং সঠিকভাবে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের বিষয় পর্যালোচনা করা।
সংসদ কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধিমালা দ্বারাই এসব কমিটির প্রায়োগিক দায়দায়িত্ব, সামগ্রিক কর্মতৎপরতা এবং কার্যপরিধি নির্দেশিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এসব কমিটির আওতায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপ-কমিটি গঠনেরও বিধান রয়েছে।
স্থায়ী কমিটিগুলো দৈনন্দিন সংসদীয় কার্যক্রমসহ সংসদ-সদস্যদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা, নির্বাহী সরকারের অর্থ পরিচালন নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় বা ঘটনার উপর নিরীক্ষা চালানোর মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। অন্যদিকে কেবলমাত্র প্রস্তাবিত বিলসমূহের উপর কাজ করার জন্যই এডহক বা অস্থায়ী ভিত্তিতে বাছাই কমিটি নিয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সেগুলোর উপর রিপোর্ট প্রদানের জন্যই অস্থায়ী ভিত্তিতে বিশেষ কমিটিগুলো গঠন করা হয়।
সংসদীয় কমিটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। স্থায়ী কমিটি বৈঠকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিজেদের সম্পাদিত কর্মকান্ডের ব্যাখ্যা প্রদান এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট কমিটির সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য পেশ করে থাকেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকান্ডের উপর নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তব চিত্র সম্পর্কে নিজেদের ওয়াকেবহাল রাখার সুযোগ পান। হিসাব ও সরকারি ব্যয়ের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে আর্থিক কমিটিগুলো সরকারের আর্থিক ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিরূপণ করে। একই সঙ্গে অনুমোদিত রীতিনীতি অনুযায়ী সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে কিনা তাও যাচাই করে।