এলটিটিই কি? এলটিটিই এর ইতিহাস

এলটিটিই কি?

এলটিটিই বা লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম, শ্রীলঙ্কার একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্র গেরিলা সংগঠন হিসেবে পরিচিতি। তামিল টাইগার্স বা এলটিটিই উত্তর ও পূর্ব শ্রীলঙ্কায় একটি স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র ‘তামিল ইলম’ প্রতিষ্ঠf করতে গঠিত হয়। LTTE এর পূর্ণরূপ (Liberation Tigers of Tamil Eelam)।
সংগঠনটি মে, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান ছিলেন ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ, যিনি ১৮ মে, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা সশস্ত্র বাহিনীর সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হন।
এলটিটিই বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ এবং শক্তভাবে সংগঠিত বিদ্রোহী গেরিলা গোষ্ঠীগুলির একটিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭০ এর দশকে, সংগঠনটি বেশ কয়েকটি গেরিলা হামলা চালায়। ১৯৮৩ সালে, তামিল গেরিলাদের দ্বারা ১৩ জন সৈন্যকে হত্যার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী এবং এলটিটিই-এর মধ্যে বড় আকারের সহিংসতা শুরু হয়।
১৯৮৫ সালের মধ্যে, এলটিটি উত্তর শ্রীলঙ্কার জাফনা উপদ্বীপের অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। প্রভাকরণের নির্দেশে, এলটিটিই তার বেশিরভাগ প্রতিদ্বন্দ্বী তামিল গোষ্ঠীকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে নির্মূল করেছিল। তাদের কার্যক্রমের অর্থ যোগানোর জন্য, গ্রুপটি অবৈধ কার্যকলাপে (ব্যাঙ্ক ডাকাতি এবং মাদক চোরাচালান) ও চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল। এছাড়া তারা বিদেশে বসবাসরত তামিলদের কাছ থেকে যথেষ্ট স্বেচ্ছামূলক আর্থিক সহায়তা পেত।

এলটিটিই এর ইতিহাস

১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর থেকে, তামিল সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমানভাবে প্রান্তিক এবং রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত বোধ করে। সেই বছরেই, শ্রীলঙ্কার প্রথম প্রধানমন্ত্রী সলোমন বন্দরনায়েকে ‘‘সিংহলা’’ ভাষাকে শ্রীলঙ্কার সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন।
১৯৪৮ সালের পর, তামিলরা অসংখ্য দাঙ্গার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এই দাঙ্গা সিংহলি কর্তৃপক্ষের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল, তাই তামিলরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য একটি সংগঠনের জন্য আহ্বান জানাতে শুরু করে।
দ্য লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) তামিল অধিকারের জন্য লড়াই করার জন্য ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গেরিলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর, শ্রীলঙ্কার উত্তর এবং পূর্ব অংশে তামিল ইলাম নামে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এলটিটিই ১৯৮৭ সালের অক্টোবরে, ভারতীয় শান্তি-রক্ষক বাহিনী (আইপিকেএফ)-এর কাছে জাফনার নিয়ন্ত্রণ হারায়। যাইহোক, ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে, শ্রীলঙ্কা থেকে আইপিকেএফ প্রত্যাহারের পর, তামিল টাইগারদের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বেশ কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশন ও সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে।
  • ২১ মে ১৯৯১ সালে, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে প্রচারণা চালানোর সময় একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যা করে।
  • ১৯৯২ সালে জাফনায় একটি ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণ, যাতে ১০ জন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার নিহত হয়।
  • মে ১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসার হত্যা।
  • ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে, কলম্বোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১০০ জন নিহত হয়।
  • জুলাই ২০০১ সালে কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা যা দেশের বাণিজ্যিক বিমানের অর্ধেক ধ্বংস করে।
  • LTTE এর একটি অভিজাত ইউনিট, “ব্ল্যাক টাইগারস” আত্মঘাতী এসকল হামলা চালানোর জন্য দায়ী ছিল।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে এলটিটিই একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, যা শুধুমাত্র এপ্রিল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তারপরে, গেরিলা এবং সরকারের মধ্যে লড়াই আবার তীব্র হয়। ফেব্রুয়ারি ২০০২, সরকার এবং এলটিটিই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। যদিও বিক্ষিপ্ত সহিংসতা অব্যাহত ছিল। ২০০৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এলটিটিইকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় যুক্ত করে। এর পরপরই, বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয় এবং হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়।
জানুয়ারী ২০০৮ সালে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি পরিত্যাগ করে এবং পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ এলটিটিই-এর প্রধান শক্তিশালী ঘাঁটিগুলো দখল করে নেয়। এলটিটিই-র প্রশাসনিক কেন্দ্র কিলিনোচ্চি শহরটি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসে। এপ্রিলের শেষের দিকে, সরকারি সৈন্যরা উত্তর-পূর্ব উপকূলের একটি ছোট অংশে অবশিষ্ট এলটিটিই যোদ্ধাদের কোণঠাসা করে ফেলেছিল। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেনা বাহিনীর একটি চূড়ান্ত আক্রমণ বিদ্রোহীদের শেষ শক্ত ঘাঁটি দখল ও মুক্ত করতে সফল হয় এবং এলটিটিই নেতা প্রভাকরণসহ অনেকে নিহত হয়।

Similar Posts