ভূ-রাজনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Geo Politics। এটি এসেছে দুটি গ্রীক শব্দ Geo যার অর্থ ভূমি এবং Politikos যার অর্থ রাষ্ট্র বা রাজনীতি। ভূ রাজনীতি ভূগোল এবং রাজনীতি এ-দুটি বিষয়কে সম্পর্কযুক্ত করে। রাজনৈতিক শক্তি ও ভৌগোলিক উপাদান বা অবস্থানের সমন্বয় ভূ-রাজনীতির সম্পর্ক নির্ণয় হয়।
সুতরাং ভূ-রাজনীতি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর ভৌগলিক ক্ষমতার প্রভাবের বিশ্লেষণ। ভূরাজনীতির আরো অন্যন্য সংজ্ঞার মধ্যে রয়েছে যেমন,
ব্রিটানিকার মতে, ভূ-রাজনীতি হল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার সম্পর্কের উপর ভৌগলিক প্রভাবের অধ্যয়ন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব মতে, ভূরাজনীতি হল ভৌগলিক পরিবর্তনশীলতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আচরণ বোঝা, ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য বৈদেশিক নীতি অধ্যয়নের একটি পদ্ধতি।
অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, “ভূ রাজনীতি হচ্ছে ভূগোলের সেই অংশ যা পররাষ্ট্রনীতি এবং রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।”
ভূ-রাজনীতি (Geo Politics) শব্দটি মূলত বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সুইডিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রুডলফ কেজেলেন দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (1918-39) মধ্যবর্তী সময়ে এর ব্যবহার সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার হয়। সমসাময়িক আলোচনায়, ভূ-রাজনীতিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি অতিরিক্ত প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক তাত্ত্বিকরা প্রাকৃতিক সীমানা অধিগ্রহণ, গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথে প্রবেশাধিকার এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের মতো বিবেচ্য বিষয়গুলো পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে গুরুত্ব দিয়েছেন।
ভূ-রাজনীতির অধ্যয়ন এর মাধ্যমে জানা যায় কিভাবে ভূগোল অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। ভূ-রাজনীতির উদাহরণ হিসেবে বলা যায় “বাংলাদেশ বঙ্গপসাগরে কারণে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। ভুটান ও নেপাল ল্যান্ড লকড হওয়ার কারণে ভূ-রাজনীতিতে কম গুরুত্বপূর্ণ। তাইওয়ান চীনের পাশ্ববর্তী থাকায় এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের অবস্থানের কারণে এটি আন্তর্জাতিকভাবে ভূরাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে।
আরো পড়ুন, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব
স্যার হ্যালফোর্ড জন ম্যাকিন্ডার (1861-1947) ছিলেন একজন ইংরেজ ভূগোলবিদ, শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদ, যাকে ভূ-রাজনীতির জনক বলা হয়।
জন ম্যাকিন্ডার ভূরাজনীতির তত্ত্বে বলেছেন যে পূর্ব ইউরোপকে (হার্টল্যান্ড) যে নিয়ন্ত্রণ করবে, সে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ধারণাটি ছিল যে, যে কেউ পূর্ব ইউরোপের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে, সে হার্টল্যান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করেছে যা পিভট এলাকা নামেও পরিচিত। যে কেউ হার্টল্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেছে, সে সহজেই বিশ্ব দ্বীপের (আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়া) নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে পারে।