বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হল নোবেল পুরস্কার। ছয়টি বিষয়ে (চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, সাহিত্য, শান্তি এবং অর্থনীতি) অসামান্য অবদান ও যুগান্তকারী উদ্ভাবনের স্বীকৃতি স্বরূপ এটি প্রদান করা হয়। প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
১৯০১ সালে অর্থনীতি ব্যতীত অন্য সকল ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার বিতরণ করা শুরু হয়, ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন শুরু করা হয়। উল্লেখ্য, নোবেল শান্তি পুরস্কার ব্যতীত বাকি ৫টি ক্ষেত্রে সুইডেন থেকে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একমাত্র বিশ্ব শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার নরওয়ে থেকে প্রদান করা হয়।
প্রতিটি নোবেল পুরষ্কার একটি স্বর্ণপদক, একটি শংসাপত্র এবং ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার বা $911,765 (৯ লক্ষ ১১ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার) বা বাংলাদেশী টাকায় ৯ কোটি ৪৯ হাজার টাকার মতো।
২০২২ সালে মোট ১২ জন ব্যক্তি এবং ২টি মানবাধিকার সংস্থাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
১. চিকিৎসা বিজ্ঞান: ড. সান্তে প্যাবো (Dr. Svante Pääbo
অবদান: সুইডিশ জিনতত্ত্ববিদ সোয়ান্তে প্যাবো (Svante Pääbo) নিয়ান্ডারথাল হাড় থেকে প্রাচীন ডিএনএ আহরণ, সিকোয়েন্সিং এবং বিশ্লেষণের জন্য বিখ্যাত। তিনি ৪০,০০০ বছরের পুরনো হাড় থেকে জেনেটিক উপাদান বের করে একটি সম্পূর্ণ নিয়ান্ডারথাল জিনোম তৈরি করেছেন, যা প্রাচীন ডিএনএ গবেষণায় একটি যুগান্তকারী মাইলফলক চিহ্নিত করেছে।
তিনি ১৯৯৭সাল থেকে জার্মানির লিপজিগে বিবর্তনীয় নৃবিজ্ঞানের জন্য ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি লন্ডনের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে একজন সম্মানিত গবেষণা ফেলো।
২. পদার্থ বিজ্ঞান: জন ক্লোজার, অ্যালেন অ্যাসপেক্ট, এবং অ্যাটন জেলিঙ্গার
অবদান: কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখায় পদার্থবিজ্ঞানে যুগ্মভাবে বিজয়ী হলেন আমেরিকার বাসিন্দা জন ক্লোজার (John F. Clauser), ফ্রান্সের বাসিন্দা অ্যালেন অ্যাসপেক্ট (Alain Aspect) এবং অস্ট্রিয়ার বাসিন্দা অ্যাটন জেলিঙ্গার (Anton Zeilinger)।
৩. রসায়ন বিজ্ঞান: ক্যারোলিন আর. বার্তোজী, কার্ল ব্যারি সার্পলেশ এবং মর্টেন মেন্ডল।
অবদান: ক্লিক কেমিস্ট্রি এবং বায়োর্থোগোনাল কেমিস্ট্রির বিকাশের জন্য রসায়ন বিজ্ঞানে যুগ্মভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হলেন আমেরিকার বাসিন্দা ক্যারোলিন আর. বার্তোজী, কার্ল ব্যারি সার্পলেশ এবং ডেনমার্কের বাসিন্দা মর্টেন মেন্ডল।
তারা রসায়নের একটি কার্যকরী ফর্ম তৈরি করেছে যা আণবিক ফাংশন তৈরির একটি “সরল পথ”। ডাঃ বার্তোজি “ক্লিক কেমিস্ট্রিকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন” এবং তিনি জীবন্ত প্রাণীতে এটি ব্যবহার শুরু করেছিলেন।
ডক্টর বার্তোজ্জি হলেন অষ্টম মহিলা রসায়নবিদ যিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ডক্টর কার্ল ব্যারি শার্পলেস পঞ্চম বিজ্ঞানী যিনি এ-পর্যন্ত দুটি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
৪. সাহিত্য: অ্যানি আর্নাক্স (Annie Ernaux)
অবদান: ফরাসি ঔপন্যাসিক অ্যানি আর্নাক্স ১৭ তম মহিলা হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ৮২ বছর বয়সী এই লেখক ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নারীবাদ এবং মানব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আত্মজীবনীমূলক গল্প লিখছেন।
তিনি সাহস এবং নিখুঁত ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড়কে একত্রিত করে ক্ষুরধার কলমে অনাবৃত করেছেন। সেই পেক্ষাপট থেকে সাহিত্য বিভাগে তিনি একক ভাবে নোবেল জয়ী হলেন।
৫. শান্তি: আলেস বিলিয়াতস্কি, মেমোরিয়াল, এবং সেন্ট্রর ফর সিভিল লিব্যার্টিজ
অবদান: বেলারুশের মানবাধিকার আইনজীবী আলেস বিলিয়াতস্কি, ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ এবং রাশিয়ান মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল যুগ্মভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
বিলিয়াতস্কি ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বেলারুশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচনাকারীদের একজন। বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্টকে স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রদানকারী সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ১৯৯৬ সালে সংস্থা ভিয়াসনা (স্প্রিং) এর প্রতিষ্ঠাতাও।
রাশিয়ান মেমোরিয়াল মানবাধিকার সংস্থা 1987 সালে 1954 সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, আন্দ্রেই সাখারভ এবং মানবাধিকার আইনজীবী স্বেতলানা গানুশকিনা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটিকে রাশিয়ার বৃহত্তম মানবাধিকার সংস্থা হিসাবে বর্ণনা করা হয় এবং বর্তমান দিনে এটি “রাশিয়ায় রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন” সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করেছে।
ইউক্রেনের সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ ২০০৭ সালে কিয়েভে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং রাশিয়ার সাম্প্রতিক আগ্রাসনের সময় ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে রাশিয়ান “যুদ্ধাপরাধ” চিহ্নিত এবং নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টায় নিযুক্ত ছিল।
৬. অর্থনীতি: বেন বার্নানকে, ডগলাস ডায়মন্ড এবং ফিলিপ ডিবভিগ
অবদান: আমেরিকান বাসিন্দা বেন বার্নানকে (Ben Bernanke), ডগলাস ডায়মন্ড (Douglas Diamond) এবং ফিলিপ ডিবভিগ (Philip Dybvig) ২০২২ সালে যুগ্মভাবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস তিনজন আমেরিকান অর্থনীতিবিদকে তাদের ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংকট গবেষণার জন্য নোবেলের পুরস্কার’ প্রদান করেছে।