কম্পিউটার ভাইরাস কি? লক্ষণ, প্রতিরোধ ও উদাহরণ

কম্পিউটার ভাইরাস কি?

কম্পিউটার ভাইরাস (computer virus) হল এক ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার যা কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডেটা ও সফটওয়্যারের ক্ষতি করে।
কম্পিউটার ভাইরাস একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম যা ডিভাইস বা সিস্টেমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ও সফটওয়্যারের ক্ষতি করে। কম্পিউটার ভাইরাসের লক্ষ্য হল সিস্টেম ব্যাহত করা, পরিচালন সমস্যা সৃষ্টি করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ক্ষতি এবং ফাঁস করা।
এটি সাধারণত একটি এক্সিকিউটেবল হোস্ট ফাইলের সাথে সংযুক্ত থাকে, ফাইল খোলা হলে ভাইরাসের কোডগুলো কার্যকর হয়। পরবর্তীতে, কোডটি নেটওয়ার্ক, ড্রাইভ, ফাইল-শেয়ারিং প্রোগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাস (Virus) শব্দটির পূর্ণরুপ হল Vital Information Resources Under seize, অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গবেষক ফ্রেডরিক কোহেন সর্বপ্রথম ভাইরাসের নামকরণ করেন।
ইতিহাস
১৯৭১ সালে প্রযুক্তিবিদ বব থমাস নিজে থেকেই ছড়াতে পারে এরুপ একটি পরিক্ষামূলক কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করেন, যার নাম ছিল ক্রিপার ভাইরাস (Creeper virus)। ক্রিপার TENEX অপারেটিং সিস্টেম চালিত DEC PDP-10 কম্পিউটারগুলোকে সংক্রামিত করতে আরপানেট ব্যবহার করেছিল।
১৯৯২ সালে মাইকেল অ্যাঞ্জেলা ভাইরাসের উদ্ভব ঘটে। এটি লাখ লাখ কম্পিউটার অচল করতে সক্ষম ছিল। ১৯৯৯ সালে চিআইএইচ বা চেরনোবিল নামক ভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

বর্তমানে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার ভাইরাস রয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় কম্পিউটার ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে:
  • মেলিসা (Melissa)
  • এস কিউ এল স্ল্যামার (SQL Slammer)
  • নিমডা (Nimda)
  • দ্য ক্লেজ ভাইরাস (The Klez Virus)
  • আইলাভইউ (ILOVEYOU)
  • মাই-ডুম (MyDoom)
  • স্টর্ম ওয়ার্ম (Storm Worm)
  • ক্রিপ্টোলকার (Cryptolocker)
  • কনফিকার (Conficker)
  • কোড রেড (Code Red)
  • স্টাক্সনেট (Stuxnet)
  • মরিস ওয়ার্ম (Morris Worm)
  • টিনবা  (Tinba)

কম্পিউটার ভাইরাসের লক্ষণ

কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ যেমন,
  • পপআপ উইন্ডো: বিজ্ঞাপন (অ্যাডওয়্যার) বা ক্ষতিকারক ওয়েবসাইটের লিঙ্ক সহ পপআপ উইন্ডো।
  • ওয়েব ব্রাউজারে হোম পেজ পরিবর্তন: ওয়েব ব্রাউজার নিজ থেকেই হোম পেজ পরিবর্তন।
  • সিস্টেম ক্রাশ করা: কম্পিউটার প্রায়ই ক্র্যাশ হয়, মেমরি ফুরিয়ে যায়। নিজের ফাইল খোলা, অস্বাভাবিক ত্রুটি বার্তা প্রদর্শন করা, বা এলোমেলোভাবে কী ক্লিক করা।
  • কর্মক্ষমতা ধীর হওয়া: কম্পিউটার হঠাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে ধীর গতিতে চলা।
  • স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন: আপনার অজান্তে বা অ্যাকাউন্টে আপনার ইন্টারঅ্যাকশন ছাড়াই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়।
  • প্রোগ্রাম স্ব-নির্বাহী: কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে নিজে বন্ধ হয়ে যায়।
  • অ্যাকাউন্ট লগ আউট: ভাইরাস আক্রমণ ব্যবহারকারীকে তার পরিষেবা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ আউট করতে বাধ্য করে।
  • অতিরিক্ত ইমেইল আসা: কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত ইমেইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। হ্যাকাররা ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দিতে এবং ব্যাপক সাইবার আক্রমণ চালাতে ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝে নিবেন যে আপনার কম্পিউটার বা ডিভাইস ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হয়েছে।

কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়

আপনার কম্পিউটার বা যেকোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে নিম্মোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করুন।
১. বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা
বিশ্বস্ত কম্পিউটার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ম্যালওয়্যার আক্রমণ বন্ধ করতে এবং কম্পিউটারগুলিকে ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এই অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত স্ক্যান এবং ম্যালওয়্যার সনাক্তকরণ এবং ব্লক করার মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়া থেকে ডিভাইসগুলোকে রক্ষা করবে।
২. পপ-আপ বিজ্ঞাপনে ক্লিক না করা 
অবাঞ্ছিত পপ-আপ বিজ্ঞাপনগুলোতে কম্পিউটার ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কখনই পপ-আপ বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবেন না, কারণ এটি কম্পিউটারে ভাইরাস ডাউনলোড করতে পারে।
৩. ইমেইল স্ক্যান
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে আপনার ডিভাইসকে রক্ষা করার একটি জনপ্রিয় উপায় হল সন্দেহজনক ইমেইল এটাচিং এড়ানো, যা সাধারণত ম্যালওয়্যার ছড়াতে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইমেইল স্ক্যান করা যায়।
৪. ডাউনলোড করা ফাইল স্ক্যান
ফাইল-শেয়ারিং প্রোগ্রাম, কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো আক্রমণকারীদের জন্য জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। অপরিচিত সাইট থেকে অ্যাপ্লিকেশন, গেম বা সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করা এড়িয়ে চলুন এবং যেকোনো ফাইল-শেয়ারিং প্রোগ্রাম থেকে ডাউনলোড করা ফাইলগুলি সর্বদা স্ক্যান করুন৷
৫. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখা
সর্বদা আপনার অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন এবং শেষ সংস্করণ (যেমন, Windows 7 বা Windows XP) ব্যবহার করা বন্ধ করুন।
৬. সন্দেহজনক ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলা
আপনার ব্রাউজারকে সর্বদা আপডেট রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অপরিচিত বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইট সমূকে এড়িয়ে চলা উচিত।
৭. পাইরেটেড সফ্টওয়্যার ব্যবহার না করা
বিনামূল্যে পাইরেটেড সফ্টওয়্যার লোভনীয় হলেও, এটি কিন্তু প্রায়শই ম্যালওয়্যার দিয়ে প্যাকেজ করা হয়। শুধুমাত্র অফিসিয়াল সোর্স থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন এবং পাইরেটেড এবং শেয়ার করা সফটওয়্যার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।

Similar Posts