রসায়ন

রাসায়নিক বিক্রিয়া কি? সংজ্ঞা, প্রকার ও উদাহরণ

1 min read
রাসায়নিক বিক্রিয়া আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে। আমাদের শরীরের খাদ্যের বিপাক থেকে শুরু করে আমরা কীভাবে সূর্য থেকে আলো পাই এসব মূলত রাসায়নিক বিক্রিয়ারই ফলা।
রাসায়নিক বিক্রিয়া বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা, এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে। এগুলো আমাদের সাধারণ পরিবেশে ক্রমাগত ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, লোহার মরিচা ধরা, সূর্যের আলোতে খাদ্য উৎপাদন, মদ গাঁজন ইত্যাদি।নিম্মে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংজ্ঞা, বিভিন্ন প্রকার, বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ বর্ণনা করা হল।
 

রাসায়নিক বিক্রিয়া কি?

যে প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট নতুন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া (Chemical reactions) বলে। অর্থাৎ, যে প্রক্রিয়ায় পদার্থ এর অণুর গঠন পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন এক বা একাধিক ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট নতুন বস্তুতে রূপান্তরিত হয়, তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে শক্তি বর্জন বা শোষিত হওয়ার মাধ্যমে একটি নতুন পদার্থ তৈরি হয়। এটি ঘটে যখন পরমাণুর মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন তৈরি হয় বা ভেঙে যায়। বিক্রিয়ার ফলে পদার্থের অণুর গঠনে পরিবর্তন ঘটে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দুটি অংশ থাকে যেমন, বিক্রিয়ক এবং উৎপাদক।
যে পদার্থগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে, তাকে বিক্রিয়ক বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে যেসকল নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়, তাদেরকে উৎপাদক বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া হার বিভিন্ন পারিপাশ্বিক কারণ, প্রভাব এবং উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
  • বিক্রিয়াক ঘনত্ব
  • ভূপৃষ্ঠ
  • তাপমাত্রা
  • চাপ
  • অনুঘটকের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি
  • আলোর উপস্থিতি, বিশেষ করে অতিবেগুনী আলো
  • সক্রিয়করণ শক্তি

রাসায়নিক বিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য

  • রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন যা নতুন পদার্থ গঠন করে।
  • রাসায়নিক বিক্রিয়ায় হার চাপ, তাপমাত্রা, বিক্রিয়কগুলির ঘনত্বের উপর নির্ভর করে এবং প্রভাবিত হয়।
  • বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু ধ্বংস বা তৈরি হয় না কিন্তু বিক্রিয়ক থেকে একটি নতুন পদার্থ তৈরি হয়।
  • দুটি পরমাণু বা আয়ন বা অণুর মধ্যে একটি বিক্রিয়া ঘটতে পারে এবং তারা একটি নতুন বন্ধন তৈরি করে

রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রকারভেদ

ইলেক্ট্রন স্থানান্তরের ভিত্তিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া দুই প্রকার। যথা: রেডক্স(Redox) এবং নন-রেডক্স(Non-redox)।
তাপ বিনিময়ের ভিত্তিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া আবার দুই প্রকার যথা: তাপ উৎপাদী বিক্রিয়া (Exothermic Reaction) এবং তাপহারী বিক্রিয়া (Endothermic Reaction)। এছাড়া আরও কিছু বিক্রিয়া আছে যা নিম্মে বর্ণনা করা হল,
১. সংযোজন বিক্রিয়া: যে বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক বা যৌগিক পদার্থ বিক্রিয়া করে একটি মাত্র যৌগ উতপন্ন করে, তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। যেমন, NH3+HCl → NH4Cl
২. সংশ্লেষণ বিক্রিয়া: যে রাসায়নিক  বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ বিক্রিয়া করে একটি মাত্র যৌগ উতপন্ন করে, তাকে সংশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে। যেমন, C+O2→ CO2
৩. বিয়োজন বিক্রিয়া: যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ বিভক্ত হয়ে দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ উতপন্ন করে। যেমন, CaCO3→ CaO+CO3
৪. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া: যে বিক্রিয়ায় একটি মৌল অন্য একটি যৌগের অণুর এক বা একাধিক পরমাণুকে সরিয়ে নিজেই স্থান দখল করে, তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে। যেমন, Zn+H2SO4→ ZnSO4+H2
৫. প্রশমন বিক্রিয়া: যে বিক্রিয়ায় একটি এসিড ও একটি ক্ষার বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উতপন্ন করে, তাকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে। যেমন, HCl+MgO→ MgCl2+H2O
৬. দহন বিক্রিয়া: যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বায়ু বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে কোন পদার্থ অগ্নি সংযোগ তা ভিন্ন কোন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে দহন বিক্রিয়া বলে। এই বিক্রিয়ায় তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয়। যেমন, 2Mg+O2→2Mg0+Heat
৭. বিনিময় বিক্রিয়া: যে বিক্রিয়ায় দুটি ভিন্ন যৌগের অণূর মৌল বা যৌগ গুলোপরস্পর স্থান বিনিময় করে একাধিক নতুন যৌগ তৈরি করে। যেমন, AgNO3+NaCl→ AgCl+NaNO3
5/5 - (16 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x